
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে- এমন আশা নিয়ে বসে আছে দেশের আপামর জনগণ। অনেকটা সময় তারা ভোট উৎসব থেকে বঞ্চিত। ফলে তাদের আগ্রহ ও অপেক্ষা বেশি। আর একটি ভোট দেশকে সংকট থেকে দূরে রাখতে পারে। সবুজ শ্যামলিমা বদ্বীপ বাংলাদেশ ইস্পিত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। তারপর দেশের হাল ধরেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে উজ্জ্বল কিছু মানুষকে উপদেষ্টার পদে বসান তিনি। একটি অগোছালো দেশের দায়িত্ব নেন শান্তির নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস। কিন্তু এটি অন্তর্বর্তী সরকার। কেনোভাবেই তা দীর্ঘস্থায়ী সরকার নয়। এ সরকার দীর্ঘ সময় থাকলে গণতন্ত্র রক্ষা হয় না। অনেকটা সময় গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে আছে। জ্ঞানী ও বিচক্ষণের মতো বিষয়টি অনুধাবন করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার পরই বলেছিলেন দেশ নির্বাচনী ট্রেনে উঠে পড়েছে। পরবর্তীতে তিনি একটি মোক্ষম সময় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিকে ভোট উৎসব আয়োজনের জন্য বেছে নেন। সরকার সংশ্লিষ্টরা ফেব্রুয়ারিতে ভোট আয়োজনে বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্যে কাজ করছে নির্বাচন কমিশনও। প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময়ই দেশপ্রেমিকের দায়িত্ব পালন করে। দেশের দুর্যোগে এগিয়ে আছে সশস্ত্র এ বাহিনী। নানা সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা ভোট আয়োজনের গুরুত্বের কথা বলে আসছেন। এরইমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত। একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে ইসি। আর তাকে সহায়তা করবে, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ আরো নানা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু দেশ ও দেশের জনগণের সেবার মনোভাব বয়ে বেড়ানো রাজনৈতিক দলগুলো এখন বিমাতার ভূমিকায়। একটি নির্বাচনে রাজনীতিবিদরাই জয়ী হয়ে আসবেন। তারা জনপ্রতিনিধি হবেন। তারাই দেশ চালাবেন। কিন্তু তাদের যেন কোনো গরজ নেই। পারস্পরিক মতভেদে তারাই এখন ভোট আয়োজনের পথে যেন বড় বাধা। কিন্তু তাদের আগ্রহ ও সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা আমরা দেখছি কই?
রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক ক্ষুদ্র বিষয়ে বৈরিতায় জনগণ হতাশ। তাদের নিরুৎসাহ ধরা পড়ছে একটি যুগান্তকারী ভোট আয়োজনে। তাদের মুখে সব সময় জনগণের কল্যাণের কথা, দেশের সমৃদ্ধির কথা আসে। কিন্তু বাস্তবে তা ধরা পড়ছে না।
জুলাই আন্দোলন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ আন্দোলন শিখিয়েছে স্বৈরাচার হয়ে রক্ষা নেই। আন্দোলনের এক বছরের বেশি সময় পেরিয়েছে। এর মাঝেই রাজনৈতিক দলগুলো কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে তারা এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। এ নিতান্ত দুঃখ ও কষ্টের।
ফলে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা জাগছে। নির্বাচন উল্লিখিত সময় হবে কিনা সে শঙ্কা এখন আর অমূলক নয়। আর তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো বহুলাংশে দায়ী।
যদিও সরকার বারবার বলে আসছে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। কিন্তু যারা নির্বাচনের সুবিধাভোগী হবেন সেই রাজনীতিবিদরাই যেন চাচ্ছেন নির্বাচন আয়োজন না হোক। বারবার বলা কথা আবারো বলতে হয়, সরকার ক্ষমতা নিয়েই বলে আসছেÑ ঠিক সময়ে নির্বাচন না হলে দেশ সংকটে পড়বে। এখন কি জনগণ ধরে নিবে রাজনীতিবিদরাই চাচ্ছেন দেশ গভীর সংকটে থাকুক।
সর্বশেষ খবরেÑ ঠিক এক বছর আলোচনা করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে শেষপর্যন্ত একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষ হয়েছে কোনো সমাধান ছাড়াই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক মতবিরোধ রেখেই দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনড় অবস্থানের মুখে ঐকমত্য কমিশন বলেছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে বলে কমিশন আশা করছে। গত ৮ অক্টোবর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে শেষ দিনের আলোচনা হয়। শেষদিনের আলোচনায় দলগুলোকে মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিএনপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের দিন একইসঙ্গে গণভোটের পক্ষে অনড় থাকে। আর জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে অবস্থান নেয়। গণভোটের প্রশ্ন কী থাকবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবেÑ এসব প্রশ্নেও সুরাহা হয়নি। ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ। ফলে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ, বাংলাদেশের রাজনীতিকে আবারো এক অনিশ্চয়তার মোড়ে দাঁড় করিয়েছে।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সেই নির্বাচনকে ক্রমশ অনিশ্চিত করে তুলেছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জুলাই সনদ নিয়ে অচলাবস্থা ছাড়াও বেশ কিছু ঘটনা গণতন্ত্রের উত্তরণে বাধা সৃষ্টি করছে বলেই অনেকে মনে করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা অস্থিরতা, নতুন নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতীক জটিলতার মতো কিছু বিষয় নির্বাচনের পথকে আরো কঠিন করে তুলছে।
এ মুহূর্তে যে অবস্থা তাতে নির্ধারিত সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা সরকারের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ উভয়ই বলেছে, ‘একটি অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনই টেকসই গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত।’ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনÑ অর্থ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এরকম বক্তব্যের মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচারকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে জুলাই আন্দোলনের শক্তিগুলো এখন একে অপরের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর। এ পরিস্থিতিতে দেশে নতুন ধরনের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। এটিও নির্বাচনের পথে একটি বড় বাধা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সম্প্রতি পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে চলছে অপপ্রচার এবং গুজবসন্ত্রাস।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, নির্বাচন নিয়ে রহস্যময় আচরণ করছে এনসিপি। বিভিন্ন ইস্যুতে দলটি ঘন ঘন তাদের অবস্থান বদল করছে। যেমন জুলাই সনদ নিয়ে তারা প্রথমে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটে রাজি ছিল, কিন্তু ৮ অক্টোবর তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে। ওইদিন তারা আগে গণভোট দাবি করে। নির্বাচন ও সংগঠনের চেয়ে এনসিপির তরুণরা এখন হুমকি এবং হতাশা প্রকাশ নিয়েই ব্যস্ত। কদিন আগে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সেফ এক্সিট নিয়ে কথা বলে বিতর্ক সৃষ্টি করেন। আগামী নির্বাচনে এনসিপি বড় ফ্যাক্টর না হলেও তারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে। প্রতীক নিয়ে জটিলতার সমাধান না হলে তেমন কিছু করাটা অসম্ভব না। দলের প্রতীক নিয়ে জটিলতা এখন নির্বাচনী রাজনীতির এক নতুন আলোচ্য বিষয়। এনসিপি এখন পর্যন্ত শাপলা প্রতীকে অনড়। এ নিয়ে জটিলতা কমার লক্ষণ নেই।
জানা যায়, জুলাই সনদে ৮৪টি প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে ২৯টি প্রস্তাব নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা হবে। ২১টি রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এবং ৩৪টি প্রস্তাব বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত ধারার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিনের মতভিন্নতা সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। শুরুতে সনদে বাস্তবায়নের পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধের কারণে বাস্তবায়ন পদ্ধতি আলাদা করা হয়। সরকারের কাছে সনদ এবং বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি নিয়ে সুপারিশ আলাদাভাবে উপস্থাপন করবে কমিশন।
আলোচনার শুরুতে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ছিল ৩২টি। শেষ পর্যন্ত তা ৩০-এ নেমে আসে। তবে তিনটি দল বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। শেষ সময়ে এসে এনসিপির গুরুত্ব কমে যায়।
জানা যায়, সনদের ৮৪টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪টি মৌলিক বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে না থাকা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা, আইনসভার উচ্চকক্ষে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি এবং রাষ্ট্রের মূলনীতি উল্লেখযোগ্য। সবচেয়ে বেশি আপত্তি দিয়েছে বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল। এর মধ্যে নয়টি আপত্তি রয়েছে। চারটিতে আপত্তি দিয়েছে সিপিবি ও বাম দল, একটিতে জামায়াতে ইসলামী এবং দুটি অন্যান্য ইসলামি দল।
এর মধ্যে আবার কমন আপত্তি রয়েছে। আপত্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনোটিতে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত এবং আবার কোনোটিতে আংশিক। তবে এনসিপি কোনো আপত্তি দেয়নি। দুটি বিষয় নিয়ে বেশি আপত্তি বিএনপির। এর মধ্যে রয়েছেÑ একই ব্যক্তি সরকারপ্রধান, দলীয়প্রধান এবং সংসদ নেতা থাকতে পারবেন না। নতুন প্রস্তাবিত সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে সদস্য নির্বাচিত হবেন। জুলাই সনদের এই বিষয়ে জোরালো আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) দিয়েছে দলটি।
শেষদিনের বৈঠকে সনদ বাস্তবায়নে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞ প্যানেল। এর মধ্যে রয়েছেÑ প্রথমত সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারি, দ্বিতীয়ত ওই আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন, তৃতীয়ত গণভোটে দুটি আলাদা প্রশ্ন থাকতে হবে।
যেসব বিষয়ে সব দল একমত হয়েছে, সেগুলো উল্লেখ থাকবে, আর যেসব বিষয় নোট অব ডিসেন্ট বা আপত্তি আছে, সেটিও ব্যালটে উল্লেখ থাকবে। চতুর্থ বিষয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। পঞ্চম হলো জুলাই আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণভোটে অনুমোদন সাপেক্ষে সনদে বর্ণিত সংস্কারগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
জুলাই সনদ নিয়ে তিন দফায় মোট ৭২টি বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। এই সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের আলোকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৪টি, ৩ জুন থেকে ৩০ জুলাই ২৩টি এবং ১ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এখন কথা আসে রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের স্বার্থে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিতে পারার ব্যর্থতা ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অশনি সংকেত হয়ে ওঠে কি না।
বলা কথা আবারো বলে যাওয়া- নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি। বাংলাদেশের মতো দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুধু সরকার গঠনের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতীয় ইস্যু, যা জনগণের অধিকার, রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। অথচ সরকার, সেনাবাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতা জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে।
আমরা জানি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারা শুধু ভোট চাওয়া কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যম নয়, বরং গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবেও তাদের দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার অভাব ক্রমাগত বাড়ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারা এরই একটি প্রমাণ। এই সনদের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে নির্বাচন আয়োজনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তা দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থের কারণে বাস্তবায়িত হয়নি।
কিন্তু যুগ যুগ দেখে এসেছি, সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার শিকার হয়ে বারবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা চায় একটি শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে অনমনীয়তা এবং লাভের মানসিকতা দেখা যাচ্ছে, তা জনগণের আস্থাকে ধ্বংস করছে।
এদিকে যদি রাজনৈতিক দলগুলো পারস্পরিক মতবিরোধ দূর করে একটি গ্রহণযোগ্য ফ্রেমওয়ার্কে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে না। আন্তর্জাতিক মহল বিরূপ হবে। এতে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে, বিনিয়োগ কমবে, জনগণের ভোগান্তি বাড়বে এবং জাতীয় উন্নয়নের গতি ব্যাহত হবে।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীলতা, ইসির নিরপেক্ষতা এবং জনগণের আস্থার ওপর। নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি যথেষ্ট হলেও রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাব একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছে। এখন সময় এসেছে, সব পক্ষকে জাতীয় স্বার্থে একত্রিত হওয়ার। নির্বাচন কোনো দল বা সরকারের একক বিষয় নয়Ñ এটি পুরো জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন। সুতরাং, সকল পক্ষের উচিত জনগণের আস্থা অর্জনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা, যাতে করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক।
আজকালের খবর/ওআর