
দীর্ঘসূত্রতা ও সমন্বয়হীনতার জাল:
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এই প্রস্তাবটিকে ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য বলে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, নতুন কোনো ক্যাডার সার্ভিস গঠন মানে হলো দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া, বিধিমালা প্রণয়ন, পদসৃজন, এবং বাজেট অনুমোদনের মতো সময়সাপেক্ষ ধাপ অতিক্রম করা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ঘাটতি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগসহ একাধিক মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে মতভেদ থাকায় বিষয়টি এখনো অগ্রগতি পায়নি।
আইসিটি জনবলের হতাশা ও উদ্যোগের টেকসই সংকট:
সরকারি দপ্তরগুলোতে কর্মরত হাজারো আইসিটি কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ পদমর্যাদা ও ক্যারিয়ার পথ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলস্বরূপ, তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে এবং অনেক সরকারি ডিজিটাল উদ্যোগ টেকসই হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘আইসিটি সার্ভিস বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে আইটি জনবলকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এতে সরকারের ই-গভর্ন্যান্স প্রকল্পগুলো ধারাবাহিকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
কারা বাধা দিচ্ছে?
১. প্রথাগত ক্ষমতার বলয়: জনপ্রশাসন ক্যাডারসহ বিদ্যমান বিসিএস সার্ভিসের একাংশ নতুন প্রযুক্তিনির্ভর ক্যাডার গঠনে অনীহা দেখাচ্ছে।
২. বিদেশি কনসালট্যান্ট নির্ভরতা: আইসিটি সার্ভিস না থাকায় সরকারি প্রকল্পগুলোতে বিদেশি পরামর্শক ও সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা থেকে যাচ্ছে।
৩. দুর্নীতি ও সুবিধাভোগী চক্র: বিভিন্ন দপ্তরে একই ধরনের প্রকল্প বারবার বাস্তবায়নের সুযোগ থাকায় দুর্নীতি ও অদক্ষতা টিকে আছে।
৪. রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি: অতীতে এই ধরনের প্রশাসনিক সংস্কার অগ্রাধিকার তালিকার নিচে নেমে গেছে।
কেন জরুরি ‘বাংলাদেশ আইসিটি সার্ভিস’?
১. ই-সেবার টেকসই বাস্তবায়ন: প্রশিক্ষিত আইসিটি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সরকারি ডিজিটাল সেবা আরও কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
২. দক্ষ জনবলের সঠিক ব্যবহার: পদমর্যাদা ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন নিশ্চিত হলে কর্মীদের মনোবল বাড়বে।
৩. সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধি: দক্ষ জনবল থাকলে সরকারি নেটওয়ার্ক ও তথ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী হবে।
৪. বিদেশি নির্ভরতা হ্রাস: দেশীয় দক্ষতার বিকাশে বিদেশি কনসালট্যান্টের ওপর নির্ভরতা কমবে।
৫. সমন্বিত প্রশাসনিক দক্ষতা: একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিচ্ছিন্ন প্রকল্পের পরিবর্তে একক পরিকল্পনায় সমন্বিত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করছে। এমন সময়ে বাংলাদেশ আইসিটি সার্ভিস শুধু একটি নতুন ক্যাডার নয় -এটি সরকারের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন অভিযাত্রার কেন্দ্রে থাকা একটি প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানিক ভিত্তি। যৌথ উদ্যোগ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই সার্ভিস বাস্তবায়ন বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হয়ে উঠবে।
লেখক: শফিউল আলম, আইটি বিষেষজ্ঞ