মঙ্গলবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বইমেলা নিয়ে উদ্বিগ্ন সৃজনশীল প্রকাশকরা
দেলোয়ার হাসান
প্রকাশ: সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৮:১৬ পিএম
বইমেলা নিয়ে উদ্বিগ্ন সৃজনশীল প্রকাশকরা। ২০২৬ সালের বইমেলা নিয়ে তাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা? বই বিক্রি ও প্রচার যদি বেশি হয় তবেত প্রকাশকদের উদ্বেগের কোনো কারণ থাকার কথা না। অথচ সৃজনশীল প্রকাশকরা দাবি করছেন ২০২৬-এর অমর একুশে বইমেলাটি অন্তত জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহজুড়ে হোক। কিন্তু বাংলা একাডেমি তা মানতে নারাজ। বাংলা একাডেমি বলছে ২০২৬-এর বইমেলা হবে ২০২৫-এর ১৭ ডিসেম্বর থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। কারণ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পবিত্র রমজান, নির্বাচনের কারণে প্রশাসন বইমেলা নিয়ে ভাবতে পারছে না। রমজানে রোজা রেখে কেউ বইমেলায় আসবেন না। 

সম্প্রতি সাংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে বাংলা একাডেমি তার প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং বর্তমান ডিজি অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। বৈঠকে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) দুইজন প্রতিনিধি একজন বই বিক্রেতা আর একজন তরুণ প্রকাশক উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশকদের কোনো প্রতিনিধিকে সেখানে ডাকা হয়নি। 

অমর একুশে বইমেলাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের বইমেলার আয়োজন করে বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশকরা। গত ২০২৫-এর অমর একুশে বইমেলা পরিচালনার জন্য সৃজনশীল প্রকাশকদের প্রতিনিধি নিয়ে কাজ করলেও এ বছর আর সৃজনশীল প্রকাশকদের ডাকেননি। অথচ বাপুস কখনই সৃজনশীল প্রকাশনার প্রতিনিধিত্বকারি সংগঠন না। আর এ কারণে ১৯৮৪ সালে বাপুস থেকে বেরিয়ে এসে সৃজনশীল প্রকাশকরা গঠন করে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক। সৃজনশীলরা কেবলই তৈরি করে মননশীল মেধা বিকাশের বই। পাঠ্যবই, নোট বই, গাইড বই করে বাপুসের সদস্যরা। সারাদেশে বাপুসের সদস্য ২৫ হাজারের বেশি। সৃজনশীলের সংখ্যা আড়াইশ মাত্র। বাপুস সদস্যরা মূলত নোট-গাইড বই উৎপাদক ও বিক্রেতা। সৃজনশীল বইয়ের বিক্রি কম তাই তারা সৃজনশীল বই করেন না। অপরদিকে নোট গাইড বই যেহেতু মুদ্রণ করা নিষেধÑ তাই কোনো রকম ঝক্কি ঝামেলায় যেতে চান না সৃজনশীল প্রকাশকরা। এসব কারণে সারাদেশে শত শত মামলা হয় বাপুস সদস্যদের নামে। সৃজনশীলে তা নাই বললেই চলে। তা ছাড়া অমর একুশে ব মেলা এমনকি বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ের এমনকি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক যেসকল বইমেলা হয় তার সবকয়টিই করে সৃজনশীল প্রকাশকরা। বাপুস সেখানে যায় না। তাদের উৎপাদিত নোট-গাইড মেলায় নেওয়া হয় না। 

অমর একুশে বইমেলার সৃষ্টিও করেন একজন সৃজনশীল প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭২ সালে তিনিই প্রথম বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পাঠি বিছিয়ে সৃজনশীর বই নিয়ে বসেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম মুক্তধারা। তার দুবছর পর নারায়ণগঞ্জে বইমেলা হয়। বই বিক্রি বাড়ানোর জন্য মেলার মাঠে এটি খুঁটিতে গরু বেঁধে রেখে পাশেই একটি বোর্ডে লিখা হয় ‘গরু বই পড়ে না’। এভাবেই চলতে থাকে সৃজনশীল বইয়ের প্রচার। এর কয়েক বছর পর ড. আশরাফ সিদ্দিকী যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক তখন স্থায়ীভাবে শুরু হয় বইমেলা। বাংলা একাডেমির ভেতরেই প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে চলতে থাকে অমর একুশে বইমেলা। ২০১৩ সালে অগ্নিকাণ্ডে বইমেলার শতাধিক স্টল পুড়ে গেলে বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে মেলা বাহিরে আসে বর্তমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে। ওই অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো জানা যায়নি। অধিকাংশ প্রকাশকের বিশ্বাস তখনকার সমিতির নেতারা চাচ্ছিলেন মেলাটিকে বাংলা একাডেমি চত্বর থেকে বড় পরিসরে মাঠে নিয়ে আসা। অগ্নিকাণ্ডের পর বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ একাডেমির ভেতরে মেলা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মেলা চলে আসে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে। ওই অগ্নিকাণ্ডের সময় সমিতির নেতা ছিলেন আগামী প্রকাশনীর মালিক ওসমান গনি।

সৃজনশীল বইয়ের কাটতি এবং সৃজনশীল প্রকাশকদের কদর কিছুটা বাড়তে শুরু করলে বাপুস মামলা করে সৃজনশীল সমিতির নামে। বাপুস তার সদস্যদের কাছ থেকে প্রতিবছর বার্ষিক চাঁদা আদায়ই করে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। এ টাকা ছাড়াও বিভাগীয় শহরে রয়েছে তাদের স্থাপনা কিন্তু কোথাও তাদের কদর নেই। তাই মরিয়া হয়ে মামলা করে বাপুস। সৃজনশীলের প্রকাশকরা দুই ভাগ হয়ে একপক্ষ চলে যায় বাপুসের পক্ষে। অন্যপক্ষ থাকে সৃজনশীলের পক্ষে। মজার ব্যাপার হচ্ছে দুটি পক্ষই বিগত সরকারের চিহ্নিত দালাল। তারা বাপুস ও সৃজনশীল সমিতির প্রায় ৩৫ লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে সৃজনশীল সমিতি কার্যক্রম স্থগিত করে রাখে। ওই সময় যারা বাপুসের পক্ষে বেশি কাজ করেন তারা হচ্ছেন ওসমান গনি ও ফিরোজুর রহমান। এই ফিরোজুর রহমান বাংলা একাডেমির সভায় প্রকাশকদের পক্ষে ডিসেম্বরে মেলা করার প্রস্তাব মেনে নেন। মিটিংয়ে উপস্থিত অপর একজন মনির হোসেন তিনি কোনো প্রকাশক নন। তিনি বই বিক্রেতা।

বাংলা একাডেমির এ ধরনের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বাংলাবাজারসহ দেশের সৃজনশীল প্রকাশকদের মধ্যে নীরবতা নেমে এসেছে। তারা হতাশায় পড়েছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে বই মুদ্রণ এবং প্রদর্শন প্রায় অসম্ভব। তাই তারা চাচ্ছেন জানুয়ারির প্রথম থেকে মেলাটি শুরু হলে তাদের জন্যে এবং লেখকদের জন্যে ভালো হয়। প্রকাশকদের আরো একটি দাবি সরকার বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন সেক্টরে প্রনোদনা দিলেও আমাদের সংস্কৃতির, আমাদের ভাষার আন্দোলনের অন্যতম ঐতিহ্য এই বইমেলায় প্রনোদনা দেওয়া। বিষয়টি নিয়ে তারা বর্তমান সংস্কৃতি উপদেষ্টা এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বললেও কোনো আশার বানি শুনতে পাননি। বরং প্রতি বছর কোনো না কোনো ভাবে বাড়ানো হয় স্টল ভাড়া। 
সৃজনশীল প্রকাশক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা চান সৃজনশীল প্রকাশনাকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের জীবন-মানের উন্নয়ন এবং বইমেলা প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া। প্রকৃতপক্ষে এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দিয়েই বইমেলা বাস্তবায়ন করা। ২০২৬-এর মেলাটি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুরু করে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শেষ করা।

দেলোয়ার হাসান: লেখক, সাংবাদিক ও প্রকাশক। 

আজকালের খবর/আরইউ








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
দেবীদ্বারে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ, এখন চলছে রঙ ও সাজসজ্জা
জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে: মিথ্যা তথ্যে চাকরি নিল কনস্টেবল তুহিন
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সোনার ভরি ১৯১১৯৬ টাকা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বগি নম্বর খ
২১ দিনে রেমিট্যান্স এলো দুই বিলিয়ন ডলার
রাজশাহী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বাস চলাচল বন্ধ
ভোজ্যতেলের দাম লিটারে বাড়ছে ১ টাকা, ব্যবসায়ীদের আপত্তি
পুঁজিবাজার থেকে সবসময় মুনাফা আসবে এমন ধারণা ভুল : অর্থ উপদেষ্টা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft