বৃহস্পতিবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ফরেন রিজার্ভ বৃদ্ধিতে মুদ্রার আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যতা
ড. মো. মিজানুর রহমান
প্রকাশ: বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৯:১৩ পিএম
অর্থনৈতিক নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ যা বৈদেশিক বাণিজ্য, ঋণপ্রাপ্যতা এবং মুদ্রানীতি পরিচালনার ক্ষমতা নির্ধারণে এটি কেন্দ্রীয় ভুমিকা রাখে। গত এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত রিজার্ভে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি দেখা গেছে; একই সঙ্গে আইএমএফ-BPM6 পদ্ধতিতে গণনায়ও রিজার্ভের স্তর উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার এই মজুদ বৃদ্ধি কী কারণে হয়েছে এবং এই প্রবৃদ্ধি টেকসই কিনা সেসব বিষয় আজকের প্রবন্ধের বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দু। 

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ মুলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার মজুদ ও আন্তর্জাতিক রিজার্ভ যেসব ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতিকে ঢেউয়ের বিরুদ্ধে রক্ষা করতে ব্যবহার করা যায়। এই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ দেশীয় হিসাবের ভিত্তি এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে (আইএমএফ-BPM6) গণনা করলে কিছুটা ভিন্নতা দেখা দেয়। জুলাই ২০২৫ এ বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক রিপোর্ট অনুযায়ী মোট রিজার্ভ প্রায় ২৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার এবং BPM6 অনুযায়ী প্রায় ২৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন হয়েছে। বছরের সেপ্টেম্বরে গ্রোস রিজার্ভ প্রায় ৩১ বিলিয়ন ডলার হয়েছে;  যদিও আইএমএফ এর BPM6 পদ্ধতিতে ২৬ বিলিয়ন ডলার বিলিয়ন হয়েছে; মূলত পদ্ধতিগত পার্থক্য ও সাম্প্রতিক লেনদেন-সংক্রান্ত সমন্বয়ের কারণে এই ভিন্নতা।

গত একদশকের মধ্যে বাংলাদেশের ফরেন রিজার্ভ অস্থিরতা দেখিয়েছে, যেমন ২০১৯-২০২১ সময় বাংলাদেশে রিজার্ভ বাড়তে থাকলেও ২০২১ সালের পর করোনার প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং জ্বালানি ও খাদ্য-মূল্য শকের প্রভাবে রিজার্ভে ওঠানামা হয়েছে। পরবর্তীতে, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ সালের কিছু মৌসুমে আয় ও রেমিটেন্সের পরিবর্তন, ও আন্তর্জাতিক ঋণ-ইস্যু মিলিয়ে রিজার্ভ কমে গিয়েছিল। কিন্তু, ২০২৪-২৫ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশলগত পদক্ষেপ, রেমিট্যান্স প্রবাহের পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানো এবং রপ্তানির ধারাবাহিক বৃদ্ধির প্রভাবে সামগ্রিকভাবে রিজার্ভে সুসংহত অবস্থান গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

গত সরকারের শেষ সময়ে রিজার্ভ বেশ খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছিল। নির্বাচন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে আমদানি ও বিনিয়োগে চাপ পড়ে। কিছু আমদানি ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে রিজার্ভ রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারি ব্যবস্থাপনা মিলে কিস্তিভিত্তিক বকেয়া পরিশোধ, আকুর পাওনা পরিশোধ ও হুন্ডি কমিয়ে এবং পাচারকারীদের মোকাবিলা করে মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা আনার কাজ শুরু করে; সেই প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেল। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে এবং ২০২৫ সালের মধ্যভাগে গ্রোস রিজার্ভে ধারাবাহিক ওঠানামা দেখা গেলেও সাম্প্রতিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৫) সময়ে গ্রোস রিজার্ভ আবার ৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে যদিও আইএমএফ এর BPM6 পদ্ধতি অনুসারে রিজার্ভ প্রায় ৬ বিলয়ন ডলার কমে ২৫ থেকে ২৬ বিলিয়ন ডলারের মতো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত কয়েক মাসে মাসিক আমদানির পরিমান অনুযায়ী এই রিজার্ভ প্রায় ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মিটানো সম্ভব যা স্বল্প-মেয়াদি সম্ভাব্য শক মোকাবেলা করার জন্য আদর্শ বলে বিবেচিত। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ জুনের মধ্যে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলার টার্গেট করেছে।
 
রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির এক শক্ত ভিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুসারে ২৪-২৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। এই রিপোর্ট বলছে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স ছিল প্রায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা অতীত রেকর্ড থেকে বেশি এবং গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। ২০২৫ সালের জুলাই ও আগস্টে রেমিট্যান্সে তীব্র ঘাটতি দেখা না দিয়ে বরং প্রায় ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন এবং আগস্টেও উচ্চ প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির বেশ কিছু কারনের মধ্যে অন্যতম, মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়া সহ ট্রেড-লেবার মার্কেটে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা, নতুন মাইগ্র্যান্ট ভিসা অনুমোদন ও সরকারি অনুপ্রেরণা, এবং অনলাইন ও আনুষ্ঠানিক রেমিট্যান্স চ্যানেলকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যাংকিং প্রণোদনা অন্যতম। রেমিট্যান্স সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে ঢুকলে তা রিজার্ভে যোগ করাও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা যায়।

রপ্তানি আয়ও মোট রিজার্ভ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ। ইপিবি-এর চূড়ান্ত তথ্য অনুযায়ী ২৪-২৫ অর্থ বছরে রপ্তানি ছিল প্রায় ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার যা আগের বছরের ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়নের তুলনায় প্রায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ বৃদ্ধি। রপ্তানির ধারাবাহিকতা, বিশেষত তৈরি পণ্যের (আরএমজি) পুনরুদ্ধার, এবং কিছু নতুন সেক্টরের (জুতা, চামড়া, সিরামিক, আউটপুট মিড-উন্নয়ন) আয় বৃদ্ধিও রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এফডিআই সরাসরি রিজার্ভ বৃদ্ধির বড় চালিকাশক্তি নয়, তবে তা দেশের দীর্ঘমেয়াদি মুদ্রা প্রবাহ ও বিনিয়োগ-পরিবেশে আস্থা বাড়ায়। গত কয়েক বছরধরে এফডিআই প্রবাহ কিছুটা কমে গিয়েছিল। বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে নেট এফডিআই ছিল প্রায় ১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার যা ২০২৩-এর এফডিআই এর তুলনায় কিছুটা হ্রাস। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৫-এর প্রথম ত্রৈমাসিক তথ্য অনুযায়ী নেট এফডিআই এসেছে ৮৬৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এই এফডিআই অর্থনীতিতে বিনিয়োগ-চাহিদা ও প্রজেক্ট-ফাইন্যান্সিংয়ে সরাসরি কাজ করে, এবং ছোটখাটো মুদ্রা মজুদেও সহায়তা করে। এফডিআই এর প্রধান ভূমিকা হলো ‘সাংবিধানিক’ মুদ্রা প্রবাহ আনা তবে তা এখনো রেমিট্যান্স বা রপ্তানির মতো স্বল্প-মেয়াদে বড় অর্থ প্রবাহ সৃষ্টি করে না, তবে ভবিষ্যতে রপ্তানি-উন্নয়ন, প্রযুক্তি ও কর্মসংস্থান বাড়িয়ে রপ্তানি আয়কে শক্ত করবে।

রিজার্ভ বাড়ার একটি উপায় হলো আমদানি সংকুচিত করা। প্রকৃতপক্ষে কিছু সময়ে আমদানির শৃঙ্খল, বিশেষত অপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয় আমদানি কঠোর নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ রক্ষা করে। গত বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিশ্ব পণ্য সরবরাহকারীদের কিছু বিল বকেয়া রেখে বা কিস্তিতে পরিশোধ করে রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, পাশাপাশি হুন্ডি-চ্যানেল কমানোর উদ্যোগ, আকু’র বিল পরিশোধের পরিমান রিজার্ভে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। তবে এগুলো অস্থায়ী নীতি-উপায় হিসেবে কাজ করে। সুতরাং দীর্ঘমেয়াদে বরাবরের মতই রপ্তানি ও রেমিট্যান্সেই স্থায়িত্ব আনা জরুরি।

গত এক বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ঘিরে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, রিজার্ভ কি মূলত আমদানি কমিয়ে বাড়ানো হয়েছে, নাকি রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের প্রবাহই এর প্রধান চালিকা শক্তি। পরিসংখ্যান বলছে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি। একইসঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহও রেকর্ড ভেঙে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়েছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের একটি বড় উৎস এসেছে প্রবাসী আয়ে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৪ বিলিয়ন ডলারে, যা মোট অর্থনীতির চাহিদার তুলনায় কম নয়। তবে নীতিগত কারণে কিছু সময়ে আমদানির ওপর চাপ তৈরি হয়েছে, যেমন হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ ও ঋণসংকটের প্রভাবে কিছু মাসে মূলধনী ও ভোগ্যপণ্যের আমদানি সীমিত হয়েছিল। অর্থাৎ, রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে এককভাবে আমদানি কমানোর ভূমিকা নেই; বরং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিই এখানে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে, যদিও আংশিক আমদানি সংকোচনও কিছুটা সহায়তা করেছে।

অর্থনীতিতে দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো দিকই রয়েছে। ইতিবাচকভাবে, রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে মুদ্রা বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে, টাকার ওপর চাপ কমেছে এবং প্রায় পাঁচ মাসের আমদানির খরচ মেটানোর সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এতে বৈদেশিক লেনদেনে আস্থা বাড়ছে। তবে আশঙ্কাও আছে। রিজার্ভের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা যদি রেমিট্যান্স ও পোশাক রপ্তানির মতো সীমিত উৎসে থাকে, তাহলে বৈশ্বিক মন্দা, বাজার সংকোচন বা শ্রমবাজারে ধাক্কা এলে প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়তে পারে। একইভাবে, দীর্ঘমেয়াদে আমদানিকে কৃত্রিমভাবে সীমিত করা হলে বিনিয়োগ ও উৎপাদন খাতে ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধিকে দুর্বল করবে। এক কথায়, গত এক বছরের রিজার্ভ বৃদ্ধি মূলত রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল হলেও, কিছুটা আমদানি সংকোচনের প্রভাবও রয়েছে। এই প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা টেকসই করতে হলে রপ্তানি ক্ষেত্র বৈচিত্র্যময় করা, বৈধ রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় মূলধনী আমদানি অব্যাহত রাখা জরুরি। নইলে স্বল্পমেয়াদী সাফল্যের পরেও অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে চাপের মুখে পড়তে পারে।

কখনো কখনো দেশের রিজার্ভের স্তরে বিদেশি সাহায্য, যেমন আইএমএফ বা অন্যান্য বহুজাতিক ঋণ বা অনুদান সংযুক্ত হলে তা রিজার্ভ বাড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে সরকার বকেয়া বিল মেটাতে ঋণ নিয়ে রিজার্ভ সাময়িকভাবে বাড়াতে পারে। বাংলাদেশ অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বকেয়া ঋণ মিটিয়েছে তারপরেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। তবে উল্লেখ্য, ঋণভিত্তিক রিজার্ভ বাড়ানো টেকসই নয় যদি তা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ না হয়।
উপরে বর্ণিত সব কারণে মিলিয়ে দেখা যায় যে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় এই দুইটি একযোগে রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রধান চালক হিসেবে কাজ করেছে যেখানে এফডিআই এর অবদান তুলনামূলকভাবে ছোট কিন্তু উন্নয়নমুখী। সাম্প্রতিক রিজার্ভ বৃদ্ধি মূলত রেমিট্যান্সের দ্রুত বৃদ্ধি, রপ্তানি-উপার্জন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি এবং একই সময়ে, নীতিগত উদ্যোগ ও সরকারি বকেয়া পরিশোধও সহায়ক ভূমিকা রেখেছে; কেবল আমদানি বা বিনিয়োগ কমিয়ে নয়।

উল্লেখ্য, সরকার যদি দ্রুত রিজার্ভ বাড়িয়ে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান আর সেটি যদি বিনিয়োগ কমিয়ে করে থাকেন, তাহলে এর ফলস্বরূপ বেশ কিছু নেতিবাচক ধারা দেখা দিতে পারে। যেমন, সড়ক, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও জলসেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে; কনস্ট্রাকশন ও সরকারি প্রকল্পগুলো যে চাহিদা সৃষ্টির মাধ্যমে আয় বাড়ায় তা কমলে চাহিদা-সংকোচনে স্থায়ীভাবে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি কমতে পারে; বড়-ছোট প্রকল্পগুলোতে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে এবং এটি দূরবর্তীভাবে ভোক্তা-চাহিদা ও রেমিট্যান্স প্রবাহেও প্রভাব ফেলতে পারে; উৎপাদনশীল বিনিয়োগ না করলে বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগদাতাদের মধ্যে আস্থাহীনতা বাড়তে পারেÑ ফলে এফডিআই ও প্রাইভেট ও সরকারি ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়তে পারে; অবকাঠামোগত ব্যয়ের ধীরতায় উৎপাদন খরচ বাড়তে পারে, ফলে রফতানি-পণ্য কম প্রতিযোগী হবে; দরিদ্র ও মাঝারি শ্রেণির ওপর আগামীকালে চাপ পড়লে সামাজিক নিরাপত্তা চাহিদা বাড়বেÑ এতে দীর্ঘমেয়াদে সরকারের ব্যয় আরো বাড়তে পারে। স্বল্প-মেয়াদে রিজার্ভ বাড়ালে অর্থনৈতিক শক প্রতিহত করার সামর্থ্য বাড়ে; কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদনশীল বিনিয়োগ কাটা হলে দেশের প্রবৃদ্ধি ও আয়-উৎপাদন কমে যেতে পারে, ফলশ্রুতিতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি-ধারাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই কেবল রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ কাটা টেকসই নীতি নয়।

সুতরাং, রিজার্ভ বাড়ানোর লক্ষ্য ও আর্থিক বৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে ডিজিটাল রেমিট্যান্স ইনসেনটিভ, কনভিনিয়েন্স-ফি কমানো ও আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনতে প্রণোদনা; একই সঙ্গে হুন্ডি-চালানি কঠোরতার ব্যবস্থা নিতে হবে। আরএমজি-এর পর নির্ভরতা কমিয়ে জুতা, চামড়া, সামুদ্রিক খাদ্য ও প্রযুক্তি-ভিত্তিক রপ্তানি-বৃদ্ধি বাড়াতে নীতিগত সহায়তা। স্পেশাল-ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ-এক্সপিডিশন; রাজস্ব ও ট্যাক্স রিবেট প্রবর্তন; ও ল্যান্ড এবং ইনফ্রা-প্যাকেজিং-এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন প্রবাহ বাড়াতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল ব্যয় বন্ধ করে প্রোজেক্ট সিলেকশন ও ‘প্রো-গ্রোথ’ বিনিয়োগ অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। সর্বোপরি, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ টার্গেট স্পষ্টভাবে ঘোষণা করে, সমন্বিত আর্থিক কৌশল গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদনশীল বিনিয়োগকে অক্ষুণ্ন রেখে রেমিট্যান্স-চ্যানেল ও রপ্তানিকে বাড়ানো এবং এফডিআই আকর্ষণে টেকসই ব্যবস্থাপনা করা। শেষ পর্যন্ত যে নীতিই নেওয়া হবে সেটি দসংক্ষিপ্ত-মেয়াদি আর্থিক নিরাপত্তা’ এবং ‘দীর্ঘমেয়াদি অর্থবৃদ্ধি’ এই দুইটির ভারসাম্য বিবেচনায় নিয়ে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন; তাহলেই দেশের একটি টেকসই রিজার্ভ প্রতিষ্ঠিত হবে।

ড. মো. মিজানুর রহমান: অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট। 

আজকালের খবর/আরইউ








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ টানা ৫ দিন বৃষ্টির আভাস
লড়াইটাও করতে পারলো না বাংলাদেশ
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
আরো সাশ্রয়ী দামে গুরু এনার্জি ড্রিংকস
ফরেন রিজার্ভ বৃদ্ধিতে মুদ্রার আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যতা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
আগামী নির্বাচন হবে গণতন্ত্রের নতুন ভিত্তি : প্যারিসের মেয়রকে ড. ইউনূস
ভারতের বিপক্ষে একাদশে পরিবর্তন আনতে পারে বাংলাদেশ
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য, চলছে সরাসরি সম্প্রচার
‘উলিপুরে প্রতিমা ভাঙচুর’ শিরোনামে প্রচারিত খবরের কোনো সত্যতা নেই
আজ বাংলাদেশের ভারত পরীক্ষা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft