মঙ্গলবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গুজবের মহামারির সময়েও প্রেরণার দ্বীপশিখা সশস্ত্র বাহিনী
এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৬:৩০ পিএম
নানা ঝড়ঝাপ্টার মধ্যেও দায়িত্ব পালনে অবিচল বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। দেশের সঙ্কটে, জনগণের স্বার্থে দরদি হৃদয় নিয়ে এগিয়ে আসা, সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতা তাদের ঐতিহ্যগত। রাজনীতি আর বিতর্কের উর্ধ্বেই বিচরণ। কালের নিরালম্ব স্রোতে এক আশ্চর্য বাতিঘর। মানবতাবোধে উদ্দীপ্ত থেকে শান্তি, মমত্ববোধ ও মৈত্রী অন্বেষণে দেশে দেশে তাদের প্রয়াস অক্লান্ত। নিজ দেশের দুর্দিনে কিংবা সময়ের প্রয়োজনে কখনও নির্লিপ্ত থাকেননি তাঁরা। দেশের শান্তি-স্থিতিশীলতার প্রশ্নেও তাঁরা দৃঢ় অথচ নম্র এবং শান্ত। কাজের বিপরীতে কোন হাঁকডাক নেই। একেবারে নীরবে-নিভৃতে নিজেদের দক্ষতা, মেধা ও দায়িত্বশীলতায় অনন্য হয়েই জনগণের মনের হীরক দ্যুতিতে তাঁরা নিয়েছেন ঠাঁই। গত বছরের জুলাই-আগস্টে আত্মত্যাগের গণঅভ্যুত্থানেও সমান তালে ছড়িয়েছেন দীপ্তি। আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে মেঘের রুপালি প্রান্তের মতো জ্বলে উঠেছিলেন বিবেকের জাগ্রত কণ্ঠস্বর হয়েই। 

গত ১৩ মাসে দেশের আইন-শৃঙ্খলার অবনতির ধারাকে রুখে দিতে হাল ধরেছেন সময়ে সময়ে। এক ধরনের শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা ছিল অহর্নিশ। দীর্ঘ এই সময়টিতে তাদের সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন হয়তো একেকজন একেকভাবে করবেন। কিন্তু একবাক্যে সবাই স্বীকার করবেন অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে ছাত্র-জনতার ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমনে তাদের সরাসরি অস্বীকৃতিই নির্ধারণ করে পতিত সরকারের ভবিষ্যৎ। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের স্বার্থক পরিসমাপ্তি থেকে শুরু করে গণতন্ত্রে ফেরার অভিযাত্রায় তাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা-বিবরণ অনাবশ্যক না হলেও ভবিষ্যৎ গবেষণার বিষয়বস্তু হতে পারে। দেশমাতৃকার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রজ্বলিত হৃদয়ের অভিজ্ঞান নি:সন্দেহে এই চিরন্তন সত্যকে বহন করে বয়ে চলবে কালান্তরে। বাঙালি জাতির অস্তিত্বের অন্তর্তল এমনভাবেই তাদের বীরোচিত ও সাহসী ভূমিকা স্পর্শ করে বলেই কীনা তা হয়ে ওঠতে পারে অস্তিত্বের অনিবার্য এক পাঠ। দৃঢ়চিত্তে সগর্বে যারা জানিয়েছিল ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। অন্ধকারের পাদপীঠে তাঁরা জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন ভুবন আলো করা অনির্বাণ এক মঙ্গল প্রদীপ। 

একটু পেছন ফিরে তাকালে জুলাইয়ের শেষ থেকে আগস্টের প্রথমেই ‘এই মুহুর্তে দরকার সেনাবাহিনী সরকার’ স্লোগান চলছিল ঘুরেফিরে। জনমত এমন তুঙ্গে থাকলে স্বভাবতই ক্ষমতাকে আলিঙ্গন বিনা বাক্যে মেনে নেওয়ারই কথা। সেটি করলে নি:সন্দেহে বাহ্বা পেতেন। কোন প্রশ্নও থাকতো না। কারণ জনগণের ইচ্ছায় এমন পটপরিবর্তনে ধন্যি ধন্যি হতো চারপাশ। কিন্তু ক্ষমতা বা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার নেশা পেয়ে বসেনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকে। তারা তিনজনই একেবারেই ধীর-স্থির ও বিচক্ষণ থেকেছেন সঙ্কটময় প্রতিটি মুহুর্ত। বিতর্ক বা নাটকীয় কোন ইতিহাসের ধারাপাত রচনা না করে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই অন্তর্র্বতী সরকার গঠনে পূর্ণ সহায়তা দিলেন। 

কোন লোভের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দেননি। তিন বাহিনী প্রধান কখনও নিজেদের অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবেও দাবি করেননি। কোন বিষয়ে ক্রেডিট নিয়ে নিজেদের সস্তা প্রচারণার বিষয়বস্তু করাটাও যেন তাদের একেবারেই নীতি বিরুদ্ধ। সহজ ভাষায় তাদের অভিধানে নেই। অভিজ্ঞতা, সমন্বয় ও স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী এই মানুষেরা নিজ নিজ বাহিনীতে নিজেদের দায়িত্বকালীন পুরোটা সময় সংকট আর নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করেছেন। ভবিষ্যৎ নীতিকৌশল ঠিক করতে নিজেরা কোন সিদ্ধান্ত নেননি। শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন অসাধারণ বলিষ্ঠতায়। কালোত্তীর্ণ করেছেন নিজেদের। পর্দার আড়ালের শক্তিকেও রুখে দিয়েছেন। সুরক্ষিত করেছেন অন্তর্র্বতী সরকারকে। 

অথচ সরকার টিকবে না কতো প্রচারণা-ছক অভ্যুত্থানের পরাজিত শক্তির। কিন্তু দুর্বল-সবল সব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়েই এক বছর অতিক্রম করেছে সরকার। অনেকেই নানা তত্ত্ব হাজির করে বলেছেন- পরিস্থিতি এর চেয়েও ভালো হতে পারতো। কিন্তু তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে কেউ কেউ বলছেন, পরিস্থিতি এর চাইতেও প্রতিকূল হতে পারতো। বলতে অবশ্য দ্বিধা থাকা উচিত নয়-গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লেও জননিরাপত্তার উদ্বেগজনক সব পরিস্থিতিও সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর নরম-গরম কৌশলের কারণেই। বন্ধুর মতোই তাঁরা দেশের মানুষের পাশে থেকেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন ভালোবাসা দিয়েই জনগণের হৃদয় জয় করা সম্ভব। মব সন্ত্রাস নিয়ে নানা কথা উঠলেও সরকারের কঠোর নির্দেশেই মব ভালোয়েন্সের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কুড়িয়েছে প্রশংসা। 

গত এক বছরের পথপরিক্রমায় সবচেয়ে বড় উদ্বেগ জাগিয়েছে দেশপ্রেমী সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশে ও দেশের বাইরে থেকে পরিকল্পিত গুজব সন্ত্রাস। বিশ্বজুড়ে যাদের গৌরবগাথা চির কল্যাণের পথ দেখিয়েছে সেই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক এই বাহিনীটিকে নিয়ে গুজবের মহামারি থামেনি এখনও। বারবার বিভিন্ন শক্তির লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন তাঁরা। ঘৃণা-বিদ্বেষ-অসহনশীলতায় লালিত সময়ে তাদের নিয়ে অপপ্রচার রীতিমতো নিষ্ঠুর, অফলপ্রসূ, ধিক্কৃত ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এরপরেও তাঁরা ধৈর্য্য ধরেছেন, কোন উসকানির ফাঁদে পা দেননি। কিন্তু এটি কী প্রাপ্য ছিল সশস্ত্র বাহিনীর? ব্লেম-গেম ও আত্মঘাতী রাজনীতির চিন্তাধারা বাদ দিয়ে সবারই উচিত ছিল নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়ে যেসব জুলাই শহীদরা আশা ও আদর্শের প্রদীপ প্রজ্বালিত করেছিল তাতে স্নাত হয়ে তাদের রক্তে ভেজা বাণী অনুধাবন করেই সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে তোলা। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, দেশের অন্ধকারাচ্ছন্ন রাজনীতির আকাশে এখনও সশস্ত্র বাহিনী প্রেরণার দ্বীপশিখা জ্বালিয়ে চলেছে প্রতিক্ষণ। মানবতার জন্য, সত্য ও ন্যায়ের জন্য তাদের আত্মত্যাগ ও অপরিসীম প্রয়াসকে ভালোবাসার অর্ঘ্যে হৃদয়ের মর্মমূল থেকেই সম্মান জানাতে হবে। 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র মাস কয়েক বাকী। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হবে আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী। জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রায় ১৬ বছর পর এবার নিজেদের হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে যাচ্ছে আমাদের আশা-ভরসার মূর্ত প্রতীক এই বাহিনী। এই নির্বাচনে প্রধান ভরসার কেন্দ্রবিন্দু হবে সশস্ত্র বাহিনী। ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভূক্ত করেছে। গত এক বছরের বেশি সময়ে সশস্ত্র বাহিনীই জাতির হতাশার উপকূলে আশার বাতিঘর হিসেবে নিজেদের প্রতিভাত করেছে। এই অবস্থায় কোনভাবে নজিরবিহীন মিথ্যাচার ও প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোর মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর মনোবলকে দুর্বল করা যাবে না। এটি নিশ্চিত করা সম্ভব হলেই গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে না। একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ পাবে দেশ। সমৃদ্ধির বন্দরে নোঙর করতে এই বার্তাই জোগাতে হবে আমাদের সবাইকে। 


লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সন্ধানী বার্তা।

আজকালের খবর/আরইউ








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
দেবীদ্বারে প্রতিমা তৈরি শেষে চলছে রঙ সাজসজ্জা, থাকবে সিসি ক্যামেরা
জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে: মিথ্যা তথ্যে চাকরি নিল কনস্টেবল তুহিন
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে সোনার ভরি ১৯১১৯৬ টাকা
পেছাল রাকসু নির্বাচন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
রাজশাহী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে বাস চলাচল বন্ধ
বগি নম্বর খ
সেরা তথ্যচিত্র নির্মাতা মুক্তি মাহমুদ
ভোজ্যতেলের দাম লিটারে বাড়ছে ১ টাকা, ব্যবসায়ীদের আপত্তি
২১ দিনে রেমিট্যান্স এলো দুই বিলিয়ন ডলার
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft