বর্তমান প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় একজন গীতিকার কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান। তার সৃষ্ঠিশীল ও মৌলিক সব গান ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়। বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্ম তার গানে নিজেদের জীবন উপভোগ করেন।
গীতিকার হাবিবুর রহমান টাংগাইল জেলার অন্তর্গত গোপালপুর উপজেলার ভূয়ারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো. আলেপ হোসেন ও মাতা মোছা. হাজেরা খাতুন। গান লেখার গল্প জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি গান প্রচন্ড ভালোবাসতাম। তখন রেডিও শুনে শুনে প্রচুর গান শিখে খালি গলায় গাইতাম এবং মানুষকে শোনাতাম। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে আমার কণ্ঠে ইসলামিক গান শুনে মানুষ খুশি হতেন। বাবা গান পছন্দ করতেন না কিন্তু মা গান খুব পছন্দ করতেন এবং নিজে রাতে শুয়ে ইসলামিক গান গেয়ে শোনাতেন। স্কুল জীবনে লুকিয়ে গানের স্কুলে গিয়ে সারগাম শিখতাম। পরবর্তীতে আমি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে পড়া অবস্থায় ময়মনসিংহ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে ভর্তি হয়ে ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে আট বছর তালিম নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত স্কুলে ওস্তাদ ইমদাদুল হকের কাছে তালিম নেই। কিন্তু এক সময় আমার গলায় সমস্যা দেখা দেয়। ফলে আমার পক্ষে গান শেখা আর সম্ভব হলো না। শিল্পী হওয়ার সাধ ফুড়িয়ে গেল। কিন্তু সুরের পাগল মানুষ। সুর যে আমার রক্তের সাথে মিশে আছে। সুর ছাড়া তো ভালো লাগে না। তাই সঙ্গীতকে ভালোবেসে আমি গান লেখা শুরু করি এবং আজ অবধি লিখে যাচ্ছি।
তিনি আধুনিক, পল্লীগীতি, দেশাত্মবোধক, ভাওয়াইয়া, ইসলামিক, কৃষি বিষয়ক, জনসংখ্যা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক এবং বিভিন্ন সচেতনতামূলক গান লিখে থাকেন। তার লেখা গানের সংখ্যা নয় শতাধিক। একজন প্রতিশ্রুতিশীল গীতিকবি হিসেবে তিনি ধারাবাহিকভাবে গান লিখে চলেছেন। তার লেখা গানের প্রথম একক অডিও এলবাম বের হয় ২০০৩ সালে ‘সুখে আছো বন্ধু তুমি’ শিরোনামে টোন অ্যান্ড টিউন অডিও ভিজুয়াল কোম্পানি থেকে। এরপর প্রতি ঈদ উপলক্ষে সাউন্ডটেক, সুরাঞ্জলি, মাই সাউন্ড, সারগাম ইত্যাদি বিভিন্ন ক্যাসেট কোম্পানি থেকে মোট ১৬টি অডিও ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত তার লেখা গান প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে।
এ ছাড়া তার লেখা গানে সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন এ দেশের স্বনামধন্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ফোয়াদ নাসের বাবু, মকসুদ জামিল মিন্টু, লোকমান হাকিম, দেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, আবুবকর সিদ্দিক, স ম খায়রুল ইসলাম, সাদেক আলী, উজ্জ্বল সিনহা, রিচার্ড কিশোর, জহির উদ্দিন কাঞ্চন, বাবু সরকার, জুয়েল আলদীন, অশোক কুমার সরকার, ওয়াদুদ সরকার, এস এম আব্দুল আউয়াল, ফয়সাল আহমেদ, কাজী দেলোয়ার হোসেন, আবু কামাল, দেবা পাল, দীপক কুমার দে, রফিকুল আজিজ টিটো প্রমুখ।
তিনি কাব্যচর্চাও করেন। তার লেখা কয়েকটি কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিরহের বালুচরে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর মিরপুরে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষকতা করছেন।
গানের এ মানুষটি আরো এগিয়ে যেতে চান। তিনি চান গানের কথায় প্রতিবাদ জানাতে। আরো চান গান যেন হয় শ্লোগান, সংগ্রামমুখর সময়। তিনি বিশ্বাস করেন গান মানুষকে সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখার উপলক্ষ হয়।