টঙ্গী ভূমি অফিসে ঘুষের সাম্রাজ্য
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিলাসী জীবনযাপন
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম
টঙ্গী ভূমি অফিস যেন এখন ঘুষের সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। খাজনা-খারিজসহ যেকোনো জমি সংক্রান্ত সেবা পেতে সাধারণ মানুষকে দিতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অভিযোগের তীর উঠেছে নায়েব আব্দুল আলিম, সহকারী কর্মকর্তা রোমান হোসেন এবং সহকারী কর্মকর্তা তাহামিনা আক্তারের দিকে। তাদের বিরুদ্ধে ঘুষের মাধ্যমে রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার টঙ্গী ভূমি অফিসের প্রাঙ্গণে গেলে ওই এলাকার ভূমি  খারিজ করতে আশা ভুক্তভোগীরা ঘুষ ছাড়া জমি খারিজ হয় না হলে অভিযোগ করেছেন। 

তারা বলেন, এই অফিসে টাকা ছাড়া কোন খারিজ হয় না। ফাইল নড়ে না। তারপরও  বহুদিন ঘুরতে হয়  অফিসের বারান্দায়। ঘুষের টাকা হাতিয়ে নিতে কত রকম তালবাহানা যে করেন এখানকার কর্মকর্তারা। যারা জমি খারিজ করতে আসেন তারাই জানেন এখানকার দুরবস্থার চিত্র। কর্মকর্তারা সাধু সেজে বসে থাকেন আর   উমেদারদেরকে দিয়ে ঘুষের টাকা হাতিয়ে নেন। আর ওই ঘুষের টাকা অফিসের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত বন্টন হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন তারা। 

টঙ্গীর জামিল হোসেন  নামে এক ভুক্তভোগী জানান, সম্প্রতি তিনি একটি জমি কিনে সেটির খারিজ করতে গেলে তহশিলদারের পক্ষ থেকে চার লাখ টাকা দাবি করা হয়। তবে এ টাকা সরাসরি নয়-দাবি করা হয় তহশিলদারের নিয়োজিত দালাল বা  উমেদার দের মাধ্যমে। এসব উমেদাররা অফিসের ভেতর থেকে ভুক্তভোগীদের বাইরে নিয়ে গিয়ে নির্জন স্থানে দর-কষাকষি করেন। বলা হয়-সরাসরি অফিসে গেলে হবে না, আমাদের মাধ্যমেই সব হবে।

টঙ্গীর কিছু প্রভাবশালী  ভূমিদস্যুদের  সহযোগিতায়  ওই তিন  কর্মকর্তারা বছরের পর বছর একই এলাকায় বদলি হয়ে ফিরে আসেন। এভাবে স্থানীয় দালালদের সঙ্গে গড়ে তোলেন শক্তিশালী ঘুষ চক্র। ঘুষ বাণিজ্যের টাকায় তারা গাজীপুর ও ঢাকার অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন, একাধিক প্লটের মালিক হয়েছেন, দামি গাড়িতে চলাফেরা করছেন এবং ছেলেমেয়েদের পড়াচ্ছেন উত্তরার নামিদামি স্কুলে। সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত ঘুষের টাকায় গড়ে উঠেছে তাদের এই আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া বিলাসী জীবন।

স্থানীয়দের অভিযোগ-এই কর্মকর্তারা শুধু টাকার বিনিময়ে সেবা দেন, তা-ও গোপনে। সরাসরি অফিসে গেলে হয়রানি, অপমান ও দালালদের কাছে পাঠানোর ঘটনা ঘটে নিয়মিত। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের পক্ষে জমির খারিজ করানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

দুর্নীতির শিকড় গভীরে

প্রশাসনের শিথিল তদারকি এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুর্বল নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নিয়ে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা হয়ে উঠেছে আরও বেপরোয়া। সরকারি চাকরির বেতন দিয়ে তাদের বর্তমান আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

টঙ্গীর বাসিন্দা মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন-এখানে সবকিছুই এখন টাকা ছাড়া অচল। খারিজে যদি ৪ লাখ টাকা লাগে, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?

টঙ্গীর মানুষ এখন কার্যত এই ঘুষ চক্রের কাছে জিম্মি। প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে এই অভিযোগ পৌঁছালেও কার্যকর পদক্ষেপের কোনো খবর নেই। প্রশ্ন উঠেছে-এই ভয়াবহ ঘুষ বাণিজ্য বন্ধে প্রশাসন কি সত্যিই কোনো উদ্যোগ নেবে, নাকি দুর্নীতির এই সাম্রাজ্য আরও বিস্তৃত হবে?

এ ব্যাপারে ওই তিন ভূমি কর্মকর্তার  সঙ্গে প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে তারা ঘুষ বাণিজ্যের  বিষয়টি   অস্বীকার করেছেন। তারা বলেন,  কিছু মানুষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা রটাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কোন খাজনা খারিজে তারা কোন প্রকার ঘুষ গ্রহণ করেন না। সরকারি নির্ধারিত ফি'র মাধ্যমে খারিজ করে দেন। 


আজকালের খবর/ এমকে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
সাংবাদিক তুহিন হত্যা: ৮ আসামির শেষজনও গ্রেপ্তার
চাকরির জন্য নেওয়া টাকা চাপের মুখে ফেরত দিলেন জামায়াত নেতা
দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিলাসী জীবনযাপন
আসিম মুনিরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল নয়াদিল্লি
মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে দুই ঘণ্টা বৈঠক এনসিপির চার নেতার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
এনসিপি নেতা নিজামের ৫ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার ভিডিও ভাইরাল
সোনাতলায় পুলিশের ঝটিকা অভিযানে ৬ আসামি গ্রেপ্তার
২৬২ যাত্রী নিয়ে রোমে আটকা পড়েছে ঢাকাগামী ফ্লাইট
রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি থেকে গৃহহীনদের সরিয়ে দিতে বললেন ট্রাম্প
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরার ৫ সাংবাদিক নিহত
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft