২৭তম বিসিএস বঞ্চিত এক হাজার ১৩৭ জনকে নিয়োগ দিতে হাইকোর্টের রায় দ্রুত কার্যকরের নির্দেশ দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সরকারকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ এ রায় প্রকাশ করেন সর্বোচ্চ আদালত।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ১৭ বছর আগে হওয়া ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগবঞ্চিত এক হাজার ১৩৭ জনকে চাকরিতে বহালের নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এদিন পৃথক আপিলের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ রায় দেন। রায়ে ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগবঞ্চিতদের চাকরি ফেরত দিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় পুনর্বহাল করা হয়েছে। হাইকোর্টের ওই রায়ে তাদের তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ দিতে বলা হয়েছিল।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ২৭তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত ১ হাজার ১৩৭ জনের করা আপিল আবেদনের শুনানি শেষে এ রায় দেন আদালত।
আগের দিন ১৯ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের ৫ সদস্যের বেঞ্চ রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সালাউদ্দিন দোলন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। আর পিএসসির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া।
আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন বলেন, ২৭তম বিসিএসে ফল প্রকাশের পর সেটি ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় তৎকালীন সেনাশাসিত সরকার বাতিল করে দিয়েছিল। তারা দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। এই ক্ষমতা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছিল না। এমনকি দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি পিএসসি আইন ও বিধিতে নেই। বিষয়টি আপিল বিভাগের শুনানিতে উপস্থাপন করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২১ জানুয়ারি বিএনপি সরকারের আমলে ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৩৫৬৭ জন উত্তীর্ণ হন। পরে ওই বছরের ৩০ জুন জরুরি অবস্থার সময় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ওই ফল বাতিল করে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার। এরপর মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট রিট করেন উত্তীর্ণরা। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই সরকারের ওই সিদ্ধান্ত বৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন রিটকারীরা।
অন্যদিকে ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই ২৭তম বিসিএসের দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ফল অনুযায়ী দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষায় ৩২২৯ জন উত্তীর্ণ হয়। পরে তাদের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে পরে হাইকোর্টে তিনটি পৃথক রিট দায়ের করেন প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর ওই তিনটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২৭তম বিসিএসে দ্বিতীয়বার মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ।
পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনটি লিভ টু আপিল আবেদন দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ, যা কিছু পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এরপর আপিল বিভাগের রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করেন বাতিল হওয়া ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার প্রথম মৌখিক পরীক্ষায় উর্ত্তীণরা। গত ৭ নভেম্বর রিভিউ আবেদন মঞ্জুর করে তা শুনানির জন্য গ্রহণের আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এর ফলে প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ বঞ্চিত রিভিউ আবেদনকারীদের আইনি লড়াইয়ের পথ উন্মুক্ত হয়। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই আবেদনের শুনানি শেষে ২০ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। তারই ধারাবাহিকতায় রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আজকালের খবর/ এমকে