বুধবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
সাজিদ হত্যার সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার নিয়ে সংশয়, আইন কী বলে?
রবিউল আলম, ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:২৯ পিএম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের জোরালো দাবি উঠেছে ক্যাম্পাসজুড়ে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন, শিক্ষক নেতৃবৃন্দ দাবি তুলেছে আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাজিদের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় ঐদিন ভিসি কার্যালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসন গ্রেফতারের এখতিয়ার রাখে কি-না তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। এছাড়া সাজিদ হত্যার বিচারে প্রশাসন কর্তৃক গ্রেফতারের দাবির পিছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য লুকিয়ে আছে কি-না তা খতিয়ে দেখার আহ্বান সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।  

আইনগত সূত্রে, দণ্ডবিধি (Penal Code) ১৮৬০ এর ধারা ২৯৯–৩০৪ অনুযায়ী ‘হত্যা’ একটি গুরুতর এবং রাষ্ট্রদণ্ডযোগ্য অপরাধ। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত সম্পূর্ণই পুলিশের দায়িত্ব। (যদি বিশেষ কোনো অঞ্চল বা সংস্থা না থাকে)। ফৌজদারী কার্যবিধি (Code of Criminal Procedure (CrPC)-এর ১৫৪ ধারা অনুযায়ী পুলিশ হত্যা মামলার এফআইআর গ্রহণ করে। ধারা ১৫৬ ও ১৫৭ অনুযায়ী পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এ অপরাধ আমলযোগ্য (Cognizable) হওয়ায় ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী, পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করতে পারে। এক্ষেত্রে র‌্যাব (RAB) সহায়তা করতে পারে, কিন্তু মামলার আইনগত দায় পুলিশের।

এছাড়া ফৌজদারী কার্যবিধি (CrPC) ২৬, ২৯ ও ১৯৩ ধারা অনুযায়ী, হত্যার বিচার করার এখতিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অথবা মহানগর দায়রা জজ আদালতের (যদি ঘটনাটি মহানগর এলাকায় হয়)। এক্ষেত্রে উচ্চ আদালত (High Court Division) শুনানি ও আপিল (আপিল/রিভিশন) পর্যায়ে যুক্ত হয়। পুলিশ প্রতিবেদন (চার্জশিট) জমা দেওয়ার পর মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে চলে যায়।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পুকুর থেকে সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ভিসেরা রিপোর্ট অনুযায়ী তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

এ ঘটনায় আইনগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং তদন্ত কমিটি গঠন, হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুলিশকে সহায়তা, শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থাস্বরূপ জড়িতদের বহিষ্কার বা সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে। তবে হত্যার মামলায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা-সহ জড়িতদের (সন্দেহভাজন) গ্রেফতার বা বিচার করার এখতিয়ার প্রশাসনের নেই।

জানা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর প্রশাসন চত্বরে সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠন ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক নেতৃবৃন্দরা মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন। এসময় সাজিদ হত্যায় জড়িতদের আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রেফতার করতে না পারলে ভিসি কার্যালয় ঘেরার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

প্রশাসন কর্তৃক গ্রেফতারের এখতিয়ার আছে কি-না জানতে চাইলে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাকসুদা আক্তার বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেয়। তদন্তাধীন বিষয়ে অন্য পক্ষের হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকে না। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই গ্রেফতার করতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেফতারে সহযোগিতা করতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন অনুষদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অধ্যাপক জানান, তদন্তাধীন বিষয়ে ইনফরমেশনও পাবলিশ করা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকাণ্ডটা পুরোপুরি আইনশৃংখলা বাহিনীর ওপর ন্যস্ত। ১৭৫ একরের মধ্যে ফৌজদারি অপরাধ হলে প্রশাসন সর্বোচ্চ তাকে ধরে পুলিশে দিতে পারে। সন্দেহভাজন কাউকে পেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে গ্রেফতার দেখাতে পারে। হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার রাষ্ট্রপক্ষের কাজ। তবে তদন্তকারী সংস্থাকে তদন্তের কাজে সহযোগিতা ও তদারকিতে প্রশাসনের দায় আছে। কিন্তু এর জন্য জড়িতদের গ্রেফতার করার দাবি নিয়ে ভিসি কার্যালয় ঘেরাও করার পরিকল্পনা সন্দেহাতীত। প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্ত করে কোনো ফায়দা লুটতে কেউ সাজিদ ইস্যুকে ট্রামকার্ড হিসেবে নিয়েছে বলে আমি মনে করি।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্ট্রার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ফৌজদারি মামলায় কগনিজেবল (আমলযোগ্য) অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাইভেট স্পটে হলে তাকে ধরে পুলিশে দিতে পারে। 

ঝিনাইদহের (মহেশপুর) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ওয়াজিদুর রহমান (শিথুন) বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী
 দু’টি ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে আটক করতে পারে। প্রথমত সন্দেহভাজন— পরে তাকে মামলার ট্যাগিং দিয়ে। আর দ্বিতীয়ত সরাসরি কারো নাম চলে আসলে আটক করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি যেহেতু সন্দেহভাজন কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি। সেহেতু প্রশাসন কাউকে গ্রেফতার করতে পারছে না। একমাত্র তদন্তকারী সংস্থাই পারবে গ্রেফতার করতে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করতে পারে। 

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত কাউকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রেফতার করতে পারে না। এটা তো একটা বাচ্চা মানুষও বুঝার কথা। এখন এ বিষয়কে সামনে নিয়ে আমাকে ১০ ঘণ্টাও ঘেরাও করে রাখলে আমি কী করতে পারি? আমি সকলকে নিয়ে সিআইডি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যেতে পারি। আর সাজিদের পরিবার যদি সিআইডির উপর আস্থা রাখতে না পারে তাদেরকে পিবিআইয়ের কাছে তদন্তভার দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারি। আর জড়িতদের চিহ্নিত করতে প্রশাসন থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে পারি এবং আমরা সেটা করছি।

এদিকে পাঁচ মাস পার হলেও এখনও সাজিদ হত্যায় জড়িতদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এছাড়া সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যা ইস্যুতে তদন্ত করছে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। দায়িত্ব গ্রহণের ৯৩ দিন পার হলেও হত্যাকারী শনাক্তে কোনো ধরনের আশার আলো দেখাতে পারেনি তারা। তদন্তের বিষয়ে ৩ দফায় সাংবাদিক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্রিফিং করলেও উল্লেখযোগ্য তথ্য দিতে পারেনি সিআইডি।

আজকালের খবর/বিএস 








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে আলাদা ব্যালট, তবে বক্স একটিই
বিজয় দিবসে ইবিতে ‘সহস্র কণ্ঠে দেশের গান ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’
হাদিকে যুক্তরাজ্যে নেওয়ার চেষ্টা চলছে
হাদিকে গুলির ঘটনায় শুটার ফয়সালকে নিয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলো র‍্যাব
ব্যালন ডি’অরের পর ফিফা দ্য বেস্টও দেম্বেলের
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সাজিদ হত্যার সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার নিয়ে সংশয়, আইন কী বলে?
কোটালীপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা
পিরোজপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হলো মহান বিজয় দিবস
ধানমন্ডি ৩২-এ টাঙানো হলো ভাসানী ও হাদির ছবি
বিজয় দিবসে সেফ এইড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft