
চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ বাজারে মদের বোতলে নেমেছে মৃত্যুর ছায়া। একের পর এক প্রাণ ঝরে পড়ছে বিষাক্ত অ্যালকোহলের ছোবলে। সর্বশেষ সোমবার বিকেলে মারা গেছেন হায়াত আলী (৪০)। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৭ জনে।
হায়াত আলীর পরিবার বলছে তিনি স্ট্রোকে মারা গেছেন। কিন্তু, পুলিশের কাছে বিষয়টি এত সহজ নয়। তদন্তে উঠে এসেছে, তিনি নিয়মিত মাদক সেবন করতেন। তাই পুলিশ ঘটনাটিকে ‘অ্যালকোহলিক পয়জনিং’ হিসেবে সন্দেহ করছে। মরদেহটি পাঠানো হয়েছে মর্গে।
এদিকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরও তিনজন। স্থানীয়রা বলছেন, অনেকে অসুস্থ হলেও প্রকাশ করছেন না। কেউ ভয় পাচ্ছেন, কেউ সামাজিক লজ্জায় মুখ খুলছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে ডিঙ্গেদহ বাজারে কয়েকজন মিলে দেশি মদ পান করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় মৃত্যুর মিছিল, শনিবার (১১ অক্টোবর) থেকে একে একে পাঁচজন মারা যান, তাদের মধ্যে চারজনকে গোপনে দাফন করা হয়। গতকাল রবিবার আরও একজনের মৃত্যুর পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। মৃতরা সবাই পরিশ্রমী নিম্নআয়ের মানুষ কেউ ভ্যানচালক, কেউ মিলশ্রমিক, কেউবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তাদের নাম খেদের আলী, হয়ত আলী, সেলিম, লালটু রিপু, শহীদ, সামির ও লালটু সরদার।
স্থানীয়দের ক্ষোভ, ডিঙ্গেদহ বাজারে বহুদিন ধরে দেশি মদের ব্যবসা চলে। প্রশাসন জানত, কিন্তু চোখ বন্ধ রেখেছিল।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. নাসিম উজ জামান বলেন, এ ধরনের বিষাক্ত অ্যালকোহল শরীরের কিডনি, লিভার ও চোখ নষ্ট করে দেয়। অনেকে হয়তো বাচলেও স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যেতে পারেন।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি দল এলাকায় গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়ে কেউই স্বীকার করছেন না যে তারা মদ পান করেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, গোপনে কেউ অপচিকিৎসার শিকার না হন, সেজন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, এখন পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত। প্রাথমিকভাবে এটি বিষাক্ত অ্যালকোহল সেবনের ফল। আমরা ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছি।
ডিঙ্গেদহ বাজারে এখন আতঙ্ক কেউ আর খোলাখুলি কথা বলতে চায় না। কেউ হারিয়েছে প্রিয়জন, কেউ লুকিয়ে মৃত্যু ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। আর প্রশ্ন একটাই কে দিচ্ছে এই বিষের বোতল, আর কেন থামছে না এই মৃত্যু।
আজকালের খবর/ওআর