
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। শনিবার (১১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের নিচতলায় এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা।
গতকাল থেকে সাজিদ হত্যার বিচারের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করলেও অবস্থান কর্মসূচি থেকে নিয়োগ বোর্ড ও ঝালচত্বর ইস্যুসহ তিন দফা পেশ করেন তারা।
মানববন্ধন শেষে নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য) অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলীর কার্যালয়ে গিয়ে ফ্যাসিস্টের নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝালচত্বরে মাটি ভরাট এবং শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের লোয়ার ও হায়ার বোর্ডের তালিকা প্রকাশের দাবি জানান।
এর আগে ৯ অক্টোবর ফোকলোর স্টাডিজ ও ১০ অক্টোবর ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেন ছাত্রদল নেতারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব, আবু দাউদ, আনারুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন, সদস্য সাব্বির হোসেন, আবু সাইদ রনি, নুর উদ্দিন, রাফিজ-সহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীরা।
কর্মসূচিতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত ও তার কর্মীরা সংহতি প্রকাশ করে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুন বলেন, ‘মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে গিয়ে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করলে তো চলবে না। আওয়ামী দোসরদের সব জায়গায় থেকে বিতাড়িত করতে হবে। প্রমোশন বোর্ড করে ফ্যাসিস্টদের প্রমোশন দেওয়া হয়েছে।’
মিথুন বলেন, ‘আমরা সাজিদ হত্যার বিচার চাই, যেকোন মূল্যে খুনিদের গ্রেফতার করতে হবে। অপরাধী কোন দলের না, তার একমাত্র পরিচয় সে অপরাধী।’
এ সময় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ‘আপনারা এমন ভাব দেখান, যেন আপনারা কিছু বোঝেন না। আপনার আছেন আওয়ামীলীগ আর ছাত্রলীগের পুনর্বাসন নিয়ে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ হায়ার বোর্ডে কারা রয়েছে, আপনারা সেটা বলেন, আমাদের সাংবাদিকরাও জানেন না। আপনাদের যা ইচ্ছা তাই গোপনে গোপনে করছেন। শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ২৬ জন চিহ্নিত ফ্যাসিস্ট রয়েছে। আপনারা কেন তাদের সুযোগ দেবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ইসরায়েলের নেতানিয়াহুর সাথে তুলনা করে সাহেদ আহম্মেদ বলেন, শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের পাঁয়তারা চলছে, তা আমরা কখনও হতে দেব না। আপনারা তিন খলিফা, আপনার হয়তো জানেন না, আপনারা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর সক্ষমতা আমাদের আছে। বিশ্ববিদ্যালয় যখন ৪৬ দিন ভিসি ছিল না, ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছিল না, তখনও এই বিশ্ববিদ্যালয় চলেছে।
তিনি আরও বলেন, ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে বোর্ডে ছাত্রলীগ আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। তাদের পুনর্বাসন করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও গতকাল ‘ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’ বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে বোর্ডে যে চেয়ারম্যান একটি ফ্যাসিস্ট অভিযোগে জড়িত, তাকে সেখানে সদস্য করা হয়েছে। আপনি ফ্যাসিস্টদের সাথে প্রেম প্রেম খেলবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং ছাত্রদল তা কখনো মেনে নেবে না।
সাজিদ বিষয়ে তিনি বলেন, একটি চক্র আমাদের ভাই সাজিদকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দিয়েছে। আমরা বারবার বিচার চেয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার আমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। বর্তমান ইবি প্রশাসনের মতো অথর্ব প্রশাসন, নির্লজ্জ প্রশাসন, বেহায়া প্রশাসন আমি আগে কখনো দেখিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই ২০২৫ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানানো হয়। দীর্ঘদিন পরে গত সেপ্টেম্বরের ১৬ তারিখ থেকে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এই মামলার তদন্ত করছে।
আজকালের খবর/ওআর