শুক্রবার ১০ অক্টোবর ২০২৫
হঠাৎ আলোচনায় ‘ইবি সংস্কার আন্দোলন’, প্রশ্নের মুখোমুখি
রবিউল আলম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ৬:২০ পিএম
সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে তার বাৎসরিক কার্যক্রম নিয়ে জরিপ চালিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে কম নাম্বার পেয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ‘অকৃতকার্য’ হয়েছেন বলে দাবি জানিয়েছে ‘ইবি সংস্কার আন্দোলন’ প্লাটফর্ম। এরপর থেকে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হয় ক্যাম্পাসজুড়ে। পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন এবং ‘শিক্ষার্থীদের করা জরিপে জ্ঞানের স্বল্পতা রয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বাৎসরিক কর্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেন উপাচার্য এবং নিজের স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে জানান তিনি।

প্লাটফর্মটির জরিপের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। পূর্বের তুলনায় শিক্ষার্থীবান্ধব দাবিগুলো পূরণ করতে দেখা দিয়েছে প্রশাসনের তৎপরতা। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরপেক্ষ প্রেশার-গ্রুপ হিসেবে শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম থাকাটা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন অনেকে। তবে হুট করে এমন প্লাটফর্মের আত্মপ্রকাশে একাংশের মনে সৃষ্টি হয়েছে সন্দিহান। আলোচিত-সমালোচিত বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন প্লাটফর্মটির অগ্রভাগে থাকা শিক্ষার্থী সায়েম আহমেদ ও রাহাত আব্দুল্লাহ।

প্রশ্নোত্তর পর্বে প্লাটফর্মের সামগ্রিক বিষয় তুলে ধরেছেন ‘দৈনিক আজকালের খবর’ ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রবিউল আলম। 

প্রতিবেদক: ‘ইবি সংস্কার আন্দোলন’ কী বা কেন?

সংস্কার আন্দোলন: ইবি সংস্কার আন্দোলন হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের একটি স্বাধীন, অরাজনৈতিক ও সচেতন প্ল্যাটফর্ম। এর মূল উদ্দেশ্য হলো– বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মানোন্নয়ন, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, শিক্ষার্থীদের কল্যাণ এবং একটি ন্যায়সঙ্গত, জবাবদিহিমূলক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা। আমরা বিশ্বাস করি, উন্নয়ন মানে শুধু অবকাঠামো নয়, বরং মান, নীতি ও নৈতিকতার সংস্কার।

প্রতিবেদক: এতদিন পর কেন মনে হলো যে এরকম একটি প্ল্যাটফর্ম দরকার?

সংস্কার আন্দোলন: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যা— যেমন সেশনজট, পরিবহন সংকট, গবেষণায় পশ্চাৎপদতা, প্রশাসনিক জটিলতা— সমাধানহীন থেকে গেছে। আমরা দেখেছি যে, সমস্যাগুলোর ব্যাপার সবাই অবগত এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন ও অংশীজন তাদের প্রস্তাবনা পেশ করেছে। কিন্তু দাবিগুলো আদায়ে পরবর্তী ধারাবাহিকতায় ঘাটতি রয়েছে। তাই আমরা মনে করছি, সময় এসেছে নামমাত্র দাবি পেশ করার পরিবর্তে দাবি আদায়ে সংঘবদ্ধ লড়াই করার। এবং জুলাই বিপ্লব পরবর্তী এই প্রজন্মের দায়িত্ব হলো একট জবাবদিহিমূলক শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস ও জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি করা।

প্রতিবেদক: সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপ কিভাবে নিরপেক্ষতার প্রমাণ করে?

সংস্কার আন্দোলন: আমাদের জরিপটি সম্পূর্ণ উন্মুক্তভাবে পরিচালিত হয়েছে। অনলাইন ও অফলাইনে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। কোনো সংগঠন বা প্রশাসনিক প্রভাব ছাড়াই স্বেচ্ছাসেবক টিম তথ্য সংগ্রহ করেছে। জরিপের স্বচ্ছতার জন্য ২০২৪-২৫ সেশনের মতামত গ্রহণ করা হয়নি এবং শিক্ষার্থীদের বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ আবাসিক কিংবা অনাবাসিক এগুলোতে ভারসাম্য রাখা হয়েছে। সেই সাথে সকল তথ্য-উপাত্ত ও ফলাফল প্রকাশিত করা হয়েছে। যেকেউ চাইলে প্রয়োজনের আলোকে যাচাই করতে পারে, এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় নিরপেক্ষতা।

প্রতিবেদক: উপাচার্য বলেছেন, ‘জরিপে নলেজের গ্যাপ রয়েছে’। এ মন্তব্য কিভাবে দেখছেন?

সংস্কার আন্দোলন: বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে মাননীয় উপাচার্যের মহোদয়ের মন্তব্যকে শ্রদ্ধার সাথে দেখছি। তবে জরিপের ব্যাপারে স্যারের এমন একপাক্ষিক মন্তব্য গ্রহণযোগ্যতার দাবি রাখে না।  আমরা মনে করি, এটি আমাদের শেখার একটি জায়গা। কোথাও তথ্যের ঘাটতি থাকলে আমরা তা সংশোধন করতে আগ্রহী। তবে জরিপে উঠে আসা যেই মূল বার্তা যেমন- শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ, উপাচার্যের আশ্বাসে অনাস্থা ও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা– এগুলো উপেক্ষা করা ঠিক হবে না।

প্রতিবেদক: আপনাদের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার শর্ত কী?

সংস্কার আন্দোলন: আমাদের একটাই শর্ত, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন চাই, দলীয় স্বার্থ নয়।’ যেসকল শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক, উচ্চতার গবেষনাধর্মী ও শিক্ষার্থীবান্ধব নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনের স্বপ্ন দেখে, সেই আমাদের প্লাটফর্মে যুক্ত হতে পারবে।

প্রতিবেদক: রাজনৈতিক সংগঠনের শিক্ষার্থীরাও কি যুক্ত হতে পারবে?

সংস্কার আন্দোলন: অবশ্যই যুক্ত হতে পারবে। এটি শিক্ষার্থীদের একটি সার্বজনীন প্লাটফর্ম। রাজনৈতিক সংগঠন কিংবা সামাজিক সংগঠনের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। তবে এই প্লাটফর্মে কাজ করতে হবে শুধুমাত্র শিক্ষার্থী পরিচয়ে, দলীয় পরিচয়ে নয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারের প্রশ্নে আমরা সবাই এক ও অভিন্ন।

প্রতিবেদক: সম্প্রতি অনিবন্ধিত সংগঠন মানববন্ধনে অংশ নিতে বারণ করেছে কর্তৃপক্ষ, আপনাদের অবস্থান কী?

সংস্কার আন্দোলন: আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশকে শ্রদ্ধা করি, তবে মতপ্রকাশের অধিকার সংবিধানসিদ্ধ। একইসাথে এধরণের একপেশে নির্দেশনা অযৌক্তিক মনে করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ন্যায়সঙ্গত ও গঠনমূলক উপায়ে অবস্থান নিচ্ছে, ততক্ষণ এটি বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার আন্দোলনের অবস্থান সবসময় ইতিবাচক ও অরাজনৈতিক থাকবে।

প্রতিবেদক: অনেকে বলছেন— আপনারা আগে ভিসির সঙ্গে কথা না বলেই সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। এক্ষেত্রে ব্যাখ্যা কী?

সংস্কার আন্দোলন: সংবাদ সম্মেলনের বেশ কয়েকদিন পূর্বেই আমরা উপাচার্য মহোদয়ের নিকট ১৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছি এবং পরবর্তীতে মানববন্ধনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই জরিপের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন ছিলো। আমরা শিক্ষার্থীদেরকেই প্রাধান্য দিয়েছি। এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলন জরিপের নিরপেক্ষতা ও সচ্ছতার স্বার্থে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়ে উপাচার্য মহোদয়ের সাথে আলোচনাকে ইতিবাচক মনে করেনি।

প্রতিবেদক: আসন্ন ইকসু নির্বাচন নিয়ে আপনাদের ভাবনা কী?

সংস্কার আন্দোলন: আমরা চাই, ইকসু নির্বাচন হোক প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও শিক্ষার্থীদের স্বাধীন মতামতের প্রতিফলন। দলীয় আধিপত্য নয়, বরং শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি যেন নির্বাচিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি— একটি আদর্শ ছাত্রসংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই সংস্কারের ধারাবাহিকতা টিকে থাকবে এবং শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। তাই আমাদের দাবিগুলার মধ্যে অন্যতম দাবি হলো- দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইকসু নির্বাচন বাস্তায়ন করতে হবে।

প্রতিবেদক: আপনাদের (প্লাটফর্ম) গঠনতন্ত্র বা কমিটি আছে কি?

সংস্কার আন্দোলন: আমাদের প্লাটফর্মটি পূর্ণাঙ্গ গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যদি মনে করে যে, এই প্লাটফর্ম এর কোনো কমিটি বা গঠনতন্ত্র প্রয়োজন সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদে মতামতের ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন করা যেতে পারে৷ তবে আপাতত এই প্লাটফর্মটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। আমরা ক্রেডিট কিংবা খ্যাতির বিড়ম্বনা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে একসাথে লড়ে যাবো।

প্রতিবেদক: অনেকে বলছেন— আপনারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কাজ করছেন না। এ অভিযোগ কতটা সত্য?

সংস্কার আন্দোলন: একটি কাজ করতে গেলে পাছে লোক কিছু বলে। আমরা মনে করি এই ধরণের মন্তব্য অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মন্তব্য নয়। বরং এমন হীন মন্তব্য পক্ষপাতমূলক এবং অযৌক্তিক। তবে তাদের এমন মনোভাব থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ বিগত সময়ে অনেক আন্দলোন হয়েছে কিন্তু সেগুলোর পিছনে অন্য উদ্দেশ্য পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন পর্যায়ক্রমে ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থে পরিণত হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দলোনের প্রতিটি কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সমস্যা কেন্দ্রিক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার চাই। আর যারা সন্দিহান রয়েছে, তাদেরকে বলবো – আমাদের কার্যক্রম ভালোভাবে দেখুন, বুঝুন এবং ইতিবাচক পরামর্শ দিন। 

প্রতিবেদক: শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আপনাদের বার্তা কী?

সংস্কার আন্দোলন: আমাদের একটাই বার্তা— বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের, পরিবর্তনও শিক্ষার্থীদের হাতেই। ভয় নয়, আপনার অধিকার বুঝে নিন। সংঘর্ষ নয়, সংস্কারে মনোযোগী হন। ইবি সংস্কার আন্দোলন কারও বিরুদ্ধে নয়; বরং একটি সুন্দর, ন্যায্য ও জবাবদিহিমূলক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে। আমরা বিশ্বাস করি— পরিবর্তনের সূচনা হয় সচেতনতা থেকে, আর সেই যাত্রাই আমরা শুরু করেছি। আমরা আশাবাদী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার বুঝে নিতে লড়াই চালিয়ে যাবে।

আজকালের খবর/ওআর








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
লক্ষ্মীপুরে মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা, ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট
গাজীপুর-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়: শওকত সরকার, রনি, মাজহারুলসহ একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী
লড়াই করে হংকংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের হার
শাপলা প্রতীক ছাড়া নিবন্ধন মানবে না এনসিপি : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
দেশের সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ আইসিটি সার্ভিস বাস্তবায়নে বিলম্ব: জটিলতা, বাধা ও সম্ভাবনা
হঠাৎ আলোচনায় ‘ইবি সংস্কার আন্দোলন’, প্রশ্নের মুখোমুখি
রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে নিয়োগ দেওয়া হবে না: ইবি ভিসি
দেবীদ্বারে মায়ের অভিযোগে মাদকাসক্ত ছেলের কারাদণ্ড
গাজা যুদ্ধ বন্ধে চুক্তির ঘোষণা, মিসর যাচ্ছেন ট্রাম্প
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft