
দেশের প্রকৌশল খাতে চলমান সংকট ও বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানের দাবিতে চার দফা উত্থাপন করে স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এর সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
চার দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তারা গাজীপুর শহরের শিববাড়ি চৌরাস্তার মোড়ে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হয়ে অবরোধ শুরু করে। এতে শহরের চারটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি এসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করলে তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ তুলে নেয় এবং মিছিলসহ ক্যাম্পাসের দিকে ফিরে যায়।
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রকৌশল পেশায় স্বচ্ছতা, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি ও প্রকৌশলী পরিচয়ের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। স্মারকলিপিতে তারা যে চারটি দাবি উত্থাপন করেন, তা হলো- শুধুমাত্র IEB (The Institution of Engineers, Bangladesh)-এর সদস্যপদপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরাই ‘ইঞ্জিনিয়ার’ উপাধি ব্যবহারের অনুমতি পাবেন-এমন আইনগত বাধ্যবাধকতা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয় , মেধা, যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রকৌশলীদের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে সরকারকে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে যৌক্তিক, ন্যায়সঙ্গত ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য নীতিমালা তৈরি করতে হবে, বিএসসি প্রকৌশলীদের জন্য সরকারি খাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক এন্ট্রি-লেভেল পদ সৃষ্টি এবং বেসরকারি খাতে ন্যূনতম বেতন কাঠামো ও চাকরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত আইন ও নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি, উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগে বিদ্যমান প্রক্রিয়া বহাল রাখার দাবিও জানানো হয় এবং DUET, BUET, CUET, KUET ও RUET-এই পাঁচ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি স্বতন্ত্র নিয়োগ প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীদের মূলত টেকনিক্যাল দক্ষতার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করতে হবে, সঙ্গে উপযুক্ত নন-টেকনিক্যাল অংশ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে প্রক্রিয়াটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
স্মারকলিপিতে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার এবং শাহবাগে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরব ভূমিকার কারণেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন ।
তারা আরও বলেন, প্রকৌশল খাত দেশের উন্নয়নের মেরুদণ্ড। এই খাতে যদি বিভাজন, বৈষম্য ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, তবে জাতীয় অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হবে।
বর্তমান সময়ে বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে মতপার্থক্য ও পেশাগত টানাপোড়েন প্রকৌশল শিক্ষার ভবিষ্যৎ ও প্রকৌশলী পেশার মান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে প্রকল্প বাস্তবায়নে গুণগতমান এবং দক্ষতা উভয়ই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডুয়েট শিক্ষার্থীরা আশা প্রকাশ করেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রকৌশল পেশায় শৃঙ্খলা, ন্যায্যতা ও পারস্পরিক সম্মান নিশ্চিত করবে। শিক্ষার্থীদের ভাষায়, এই চার দফা শুধু আমাদের দাবি নয়, বরং গোটা প্রকৌশল খাতের ভবিষ্যতের রূপরেখা।
আজকালের খবর/বিএস