‘তাঁর (যতীন সরকার) মতো শিক্ষক টালমাটাল বাংলায় আর জন্ম নেবে না’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ৩:০৭ পিএম
গত ১৩ আগস্ট দীর্ঘ রোগভোগের পর না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন প্রবন্ধ সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান লেখক ও সুবক্তা যতীন সরকার। তিনি ছিলেন বিতর্কিত লেখক তসলিমা নাসরিনের সরাসরি শিক্ষক। প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশের পাশাপাশি সৈয়দ শামুসল হক, শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও যতীন সরকারের ছবি সম্বলিত একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে লিখেছেন- ‘তাঁর (যতীন সরকার) মতো শিক্ষক টালমাটাল বাংলায় আর জন্ম নেবে না’। আজকালের খবরের পাঠকের জন্য বিস্তারিত তুলে ধরা হলো

ছবিটি আমাদের ময়মনসিংহের বাড়ি অবকাশে তোলা। সম্ভবত ১৯৮৭ সালে। ছবিটির সর্বডানে বসে আছেন যতীন সরকার, আমাদের সবার প্রিয় যতীন স্যার। তাঁকে সেদিন ডেকেছিলাম অবকাশে,  শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাহিত্যের আড্ডায় অংশ নেওয়ার জন্য। না, সেদিন আড্ডা মোটেও জমেনি। যতীন স্যার বরাবরের মতো যে কোনও বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন,  কিন্তু শক্তি চট্টোপাধ্যায় একেবারেই আড্ডার মুডে ছিলেন না। 

তরুণ বয়সে যতীন সরকারের বক্তৃতা শুনে শুনে অসাম্প্রদায়িক হয়েছি, উদার হয়েছি, দৃঢ়চেতা হয়েছি, সমতা শিখেছি, সমানাধিকার শিখেছি।  ময়মনসিংহের  অনেক মানুষকেই  তিনি সভ্য শিক্ষিত সচেতন  হওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন, উদ্বুদ্ধ করেছেন। আমার গড়ে তোলা ‘সকাল কবিতা পরিষদ’ থেকে  যখন অনুষ্ঠান করতাম, যতীন স্যারকেই করতাম প্রধান অতিথি। তাঁর ভাষণ শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতো। আমার মা’র মৃত্যুর পর মা’র নামে বৃত্তি দেওয়া শুরু করেছিলাম, দশজন গরীব মেধাবী ছাত্রী  নির্বাচন করার দায়িত্বও  যতীন স্যার নিয়েছিলেন। 

আশির দশকের শেষ দিকে পত্র পত্রিকায় কবি সাহিত্যিকদের নিয়মিত  কলাম লেখার চল শুরু হয়েছিল। আমিও লিখতাম। যতীন সরকারকে লেখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম আমিই। খবরের কাগজ নামের ম্যাগাজিনে ছাপাবার জন্য যতীন সরকারের বাড়ি থেকে লেখা নিয়ে আসতাম, ছাপা হওয়ার পর ম্যাগাজিন তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসতাম, লেখার সম্মানীটাও দিয়ে আসতাম। ময়মনসিংহের স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে আমি ঢাকার হাসপাতালে বদলি হওয়ার পর লেখা পাঠানোর কাজ যতীন স্যার নিজেই করতেন। 

মনে আছে একবার তিনি খুবই দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে হঠাৎ অবকাশে এসেছিলেন। সেদিনের পত্রিকায় আমার একটি কলাম পড়ে চলে এসেছিলেন, যে কলামে আমি লিখেছিলাম আমার এক মামা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, তিনি যুদ্ধ থেকে ফিরে এলে বাড়ির সবাই খুব খুশি হয়েছিল, আর এক দূরসম্পর্কের খালাকে পাকিস্তানী আর্মিরা ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল, সেই খালা ফিরে এলে কেউ খুশি হয়নি, তাই সেই খালাকে আত্মহত্যা করে বাঁচতে  হয়েছিল। যতীন স্যার আমার সেই খালার জন্য বেদনায় নীল হয়েছিলেন। নিজের কথাও  বলেছিলেন, একাত্তরে তাঁর পরিবারের সবাইকে মুসলমান নাম নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়েছিল। 

আমার নির্বাসন জীবন শুরু হয়েছে ৩১ বছর আগে। দেশের বাইরে থেকে খবর পেয়েছি  যতীন স্যারের জনপ্রিয়তা ময়মনসিংহের গণ্ডি পার হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, এক এক করে তাঁর প্রচুর বই বেরিয়েছে।  স্যারের জন্য গর্ব হতো খুব।  আমাকে খুব স্নেহ করতেন যতীন স্যার, আমার নির্বাসন তাঁকে কষ্ট দিত।   আমার আত্মজীবনীর  বইগুলো পড়ার উৎসাহ দেখিয়েছিলেন বলে সাতটি খণ্ডই তাঁর ঠিকানায় পাঠিয়েছিলাম। সাতটি খণ্ডই পড়েছিলেন, ভালো লেগেছিল তাঁর। নিজেই বলেছিলেন, এ নিয়ে লিখবেন। জানিনা শেষ পর্যন্ত কিছু লিখতে পেরেছিলেন কি না।   

তিনি আজ পৃথিবী ত্যাগ করলেন। আশির ওপর বয়সে  কারো মৃত্যু হলে আমি সাধারণত খুব দুঃখ করি না। দীর্ঘ একটি জীবন পেয়েছেন যতীন স্যার।  তিনি অনেক দিয়েছেন মানুষকে, সমাজকে, দেশকে। উজাড় করে দিয়েছেন। মানুষের ভালবাসা, শ্রদ্ধাও তিনি অনেক পেয়েছেন। অগাধ জ্ঞানের ভাণ্ডার ছিলেন তিনি, ছিলেন সৎ এবং আদর্শবান একজন  পণ্ডিত। তাঁকে  আমরা যারা কাছ থেকে দেখেছি, তারা হাহাকার টের পাচ্ছি বুকের ভেতর। তিনি বেঁচে আছেন, এই খবরটিই আমাদের স্বস্তি দিত। তিনি নেই, হাহাকারটি এ কারণে। হাহাকারটি   আরও এই কারণে যে, আমাদের আশঙ্কা,  তাঁর মতো শিক্ষক টালমাটাল বাংলায় আর জন্ম নেবে না।

আজকালের খবর/আতে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
উলিপুরের দুর্গম চরাঞ্চলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের গোপন বৈঠক, গ্রেপ্তার এক
দেবীদ্বারে চাঁদাবাজীর মামলায় সাবেক ছাত্রদল নেতা আটক
খাগড়াছড়িতে মগ পার্টির সশস্ত্র প্রধান নিহত
হলে হঠাৎ অসুস্থ ঢাবি ছাত্রী, হাসপাতালে মৃত্যু
আদনান সামির জন্মদিন আজ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টদের চরম ভোগান্তি
১৫ আগস্ট ঘিরে কড়া নিরাপত্তায় ধানমন্ডি ৩২
সাদাপাথর লুটের ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান আটক
আমার মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা ঘুষ খেলে ফাঁসিতে ঝুলানো হবে: ধর্ম উপদেষ্টা
বৈধ না হলে নির্বাচন আয়োজনের কোনো মানে হয় না : ড. ইউনূস
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft