আর্থিক কেলেঙ্কারি ও গুরুতর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগরের জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দলটির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গণমাধ্যমের বরাতে নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও গুরুতর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। যা দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে। এমতাবস্থায়, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় তাকে দলের সব ধরনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো। এই বহিষ্কার আদেশ আজকের তারিখ হতে কার্যকর হবে।
একইসঙ্গে, তাকে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না। তার লিখিত ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান জনাব, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল-আমিনের নিকট আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী (দপ্তর) আরিফ মঈনুদ্দিন স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়, গত ১০ আগস্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ মারফতে আপনার একটি ভিডিও এনসিপি, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির নজরে এসেছে। ফলে আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। এমতাবস্থায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে কেন আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে প্রধান যুগ্ম সমন্বয়কারী, এনসিপি চট্টগ্রাম মহানগর, মীর আরশাদুল হক বরাবর আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত ব্যাখা প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।
রোববার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগর শাখার সাবেক যুগ্ম সদস্যসচিব রাহাদুল ইসলামের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ওই ভিডিওর ক্যাপশনে রাহাদুল লেখেন, ‘সাইফপাওয়ার টেকবিরোধী আন্দোলন দমন করতে গিয়ে নিজাম উদ্দিন ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, এটা শুধু দুর্নীতিই নয়, এটি ছাত্র ও জনতার বিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা। ’
এদিকে, ফেসবুকে এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর নিজাম রাতে লাইভে এসে ওই অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার দাবি, এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
নিজাম বলেন, ৩০ মে রাত ১২ টার দিকে এক ছোট ভাই রিফাত আমাকে কল দেয়। সেদিন আমি দুষ্টুমি করে অনেক কথা বলেছি। সেই ভিডিওধারণ করে তারা আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়। আমি কোনো টাকা চাইনি। চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। প্রয়োজনে গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করুক। এটা আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ডাউন করার জন্য পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। রিফাতকে দিয়ে জোরপূর্বক এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
ভাইরাল হওয়া দেড় মিনিটের ওই ভিডিওতে আফতাব হোসেন রিফাত নামে একজনকে নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা বলতে দেখা যায়। তার এ কথা বলার দৃশ্য অন্য আরেকটি ফোনে ভিডিও করা হয়। ভিডিওতেই নিজাম উদ্দিন আফতাব হোসেনকে আশ্বস্ত করেন বন্দরকেন্দ্রিক আন্দোলন বন্ধ করানো হবে। আফতাব হোসেনকে জিজ্ঞেস করেন, টাকা দিয়েছেন কি না। আফতাব ৫ লাখ টাকা দিয়েছে বলে জানান নিজামকে। নিজাম উদ্দিন বলেন, আরও ৫ লাখ টাকা নিতে পারো কি না দেখ, প্রেসার দিয়ে। নিতে পারলে রোহান, মীরদেরকে কিছু দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা হবে।
এই মীর রোহানরা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে। আর আফতাব হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক সমন্বয়ক বলে জানা গেছে।
নিজামের বিরুদ্ধে এর আগেও দুই কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে এক নারীর স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। এ অভিযোগে ওই নারী সিএমপি কমিশনারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। গত ৫ জুলাই এই অভিযোগ দেওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম নগর শাখার তার তৎকালীন সদস্যসচিব পদ স্থগিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই পদ আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
আজকালের খবর/ এমকে