
গাজীপুরের অন্যতম প্রধান সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বর্তমানে ডাক্তার সংকটে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন গাজীপুর মহানগরীসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে হাজার হাজার রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলেও, ডাক্তার সংকট, যন্ত্রপাতির অকার্যকারিতা, ছারপোকার উপদ্রব ও অব্যবস্থাপনার কারণে চিকিৎসাসেবা কার্যত অনেকাংশে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ ওয়ার্ডে নির্ধারিত সময়ের পর কোনো চিকিৎসক উপস্থিত থাকেন না। কোনো ওয়ার্ডে ডাক্তার না থাকায় রোগীদের অন্য ওয়ার্ডে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এতে রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পেতে দেরি হয়।
একজন ডাক্তারকে কখনো কখনো একাধিক ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। হাসপাতালে কর্তব্যরত একাধিক নার্স নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমাদেরও কিছু করার নেই, ডাক্তার সংখ্যা কম। রাউন্ডের সময় ছাড়া অধিকাংশ সময় রোগীরা চিকিৎসক পাচ্ছেন না।
হাসপাতালের রোগনির্ণয় বিভাগেও অব্যবস্থাপনার চিত্র লক্ষ করা গেছে। বিভিন্ন জরুরি পরীক্ষার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে বলে জানা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিই নেই। ফলে, গুরুতর রোগীদের বাইরের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হচ্ছে, যা রোগীদের জন্য ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ।
গুরুতর অসুস্থ একজন রোগীর স্বজন বলেন, বাবার অবস্থা খারাপ। এখানে সিটি স্ক্যান, এমআরআই করতে পারছে না, বললো বাইরে নিয়ে যান। এত দূর থেকে এসে আবার বাইরে টেস্ট করানো অনেক কষ্টের।
রাতের বেলা ছারপোকার উপদ্রব এতটাই বেশি যে, অনেক রোগী ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেন না। ওয়ার্ডে টয়লেট ও বাথরুমগুলোতে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ রোগীদের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বাথরুমগুলো অপরিচ্ছন্ন ও ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় রোগীরা সেখানে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন।
রোগীদের অনেক স্বজন অভিযোগ করেন, হাসপাতালে চিকিৎসকরা অনেক আন্তরিক হলেও, নার্সদের অনেকেই দুর্ব্যবহার করেন। তারা স্বজনদের সঙ্গে অহেতুক তর্কে জড়ান। এক রোগীর স্ত্রী বলেন, নার্সদের আচরণ খুবই খারাপ এমন অভিযোগ করেন।
শুক্রবার ও শনিবার বাদে প্রতিদিন হাসপাতালের ইনডোরে শত শত রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন। কিন্তু দুপুর ১টার পর চিকিৎসকদের উপস্থিতি কমে যায়। অনেক সময় রোগীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসা পান না।
অভিযোগ রয়েছে, দুপুরের পর বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা চিকিৎসকদের সঙ্গে দেখা করতে ভিড় করেন। এতে রোগীদের সিরিয়াল ও সময় নষ্ট হয়, যার ফলে অনেকেই চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে যান।
গাজীপুরের এই গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসক সংকট ও বিভিন্ন যন্ত্রপাতির অকার্যকারিতা রোগীদের জীবনকে প্রতিদিন ঝুঁকির মুখে ফেলছে বলে মনে করেন সচেতন মহল । প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা-পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ চিকিৎসা যন্ত্রপাতি মেরামত ও নতুন যন্ত্র সংগ্রহ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা নার্স ও কর্মীদের আচরণ প্রশিক্ষণ ওষুধ কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে কঠোর নীতিমালা বাস্তবায়ন করা।
আজ বৃহস্পতিবার (৩১জুলাই) এ ব্যাপারে শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ডাক্তার আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মেসেজের মধ্যামে জানিয়েছেন বিজি আছেন। প্রতিবেদককে মেসেজ দিতে বলেছেন।
সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী রোগীরা।
আজকালের খবর/ এমকে