
সিলেটে দিন দিন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংক্রমণ। ডেঙ্গু রোগী বাড়ার সাথে সাথে সিলেটে জনমনে আতঙ্ক ছাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সিলেটে ডেঙ্গুতে সাতজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। সব চেয়ে আশঙ্কাজনক হচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় দিন-দিন বাড়ছে এডিস মশার প্রকোপ। গত বছরের চেয়ে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বেশি বাড়তে পারে ডেঙ্গু। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হবে ও মৃত্যুর সংখ্যাও সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। কোনো এলাকায় লার্ভার ঘনত্ব যদি ২০ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে সেই স্থানকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়। এ বছর রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকা উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।
জরিপে মশার প্রজনন উৎস হিসেবে সিমেন্টের পানির ট্যাঙ্ককে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ (ব্রুটো ইনডেক্স ২২ শতাংশ) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপরই রয়েছে মেঝেতে জমে থাকা পানি (২০ শতাংশ), প্লাস্টিকের ড্রাম (১৩ শতাংশ), ওয়াটার মিটার চেম্বার (১১ শতাংশ), প্লাস্টিকের বালতি (১০ শতাংশ), ফুলের টব ও ট্রে/প্লাস্টিকের পাইপের গর্ত (৭ শতাংশ), পরিত্যক্ত টায়ার (৬ শতাংশ), বাড়ির ভেতরের পানির চ্যানেল (৫ শতাংশ) এবং সিমেন্টের প্লট (৪ শতাংশ)। প্রাক-বর্ষাজরিপ অনুযায়ী, এডিস মশার লার্ভার সবচেয়ে বেশি ঘনত্ব (৫৮.৮৮ শতাংশ) পাওয়া গেছে বহুতল ভবনগুলোতে।
জেলাওয়ারি এডিস মশা নিয়ে আইইডিসিআরের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি বেশি। অন্য বছরের চেয়ে এবার ডেঙ্গুর আক্রান্তের হার বেশি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যাপক জনসচেতনতার অভাব, মশকনিধনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করায় সিলেটে ডেঙ্গু বাড়ার পেছনে এই তিন কারণকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লষ্টি সূত্রমতে, সিলেটে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ এখন জনসচেতনতার অভাব। গত কয়েক বছর আগে এই ভাইরাস যখন ঢাকায় ভয়াবহ, তখনো সিলেট ছিল নিরাপদ। কিন্তু, ঢাকা থেকে বাহকের শরীরে করে এই ভাইরাস সিলেটে এসে ছড়িয়েছে। আক্রান্ত হওয়ার পর যথাসময়ে চিকিৎসার আওতায় আসতে না পারার কারণে ডেঙ্গু রোগীকে বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, ইতোমধ্যে সিলেট নগরবাসীকে সচেতন করতে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং শুরু করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। নামমাত্র মশকনিধন অভিযান পরিচালিত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
নগরবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সময়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত পরিষদ থাকা অবস্তায় মেয়র ও কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় মশকনিধন এবং এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের অভিযান বেশ জোরালোভাবে পরিচালিত হলেও এখন সেই তৎপরতা নেই। অতীতে কাউন্সিলররা নিজে উপস্থিত থেকে এসব তদারিক করতেন।
কিন্তু, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর নতুন সরকার দায়িত্বগ্রহণ করে জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করার ফলে এখন এসব কাজ ব্যাহত হচ্ছে। যেখানে একজন কাউন্সিলরের পক্ষে একটি ওয়ার্ডের পুরোপুরি তদারকি করা কঠিন হতো, এখন একজন সরকারি কর্মকর্তার পক্ষে নিজ দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনটি ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। আর নির্বাচিত মেয়রের অবর্তমানে সিসিকের প্রশাসক হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকলেও তিনি কোথাও যেতে পারছেন না।
সিসিক সূত্র জানিয়ে, মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণের পর বিভাগীয় কমিশনারকে প্রশাসক হিসেবে মেয়রের দায়িত্ব ও ১৪ জন সরকারি কর্মকর্তাকে নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি ৪২টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত মেয়র যেখানে প্রতিদিন অফিস করেও নগরবাসীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় সেখানে প্রশাসক অনিয়মিত অফিস করে জনগণের কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
আজকালের খবর/ওআর