
ফরিদপুরে এক ইজিবাইক চালক হত্যায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া নওগাঁয় অপহরণ করে হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দু’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার পৃথক আদালতে এসব রায় দেওয়া হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ফরিদপুরে পাঁচজনের যাবজ্জীবন:
ফরিদপুরে শওকত মোল্যা (২০) নামের এক ইজিবাইক চালক হত্যায় পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এই মামলার অপর এক আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ১০ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক মো. মাকসুদুর রহমান এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মো. মেহেদী আবু কাওসার (২৫), মো. জনি মোল্লা (৩০), রাসেল শেখ (২৫), রাজেস রবি দাস (২৯) ও মো. রবিন মোল্লা ওরফে ভিকি (২৫)।
রায়ের সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে উপস্থিত আসামিদের পুলিশ পাহারায় কারাগারে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে মো. রাসেল শেখ পলাতক থাকায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। অপর আসামি রাজবাড়ীর মজলিসপুর এলাকার বাদশা শেখকে (৩১) ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ১০ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর শওকত মোল্যা (২০) নামে এক যুবক নিজ বাড়ি থেকে বিকালে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এরপর তার পরিবার তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরের দিন সকাল ৭টার দিকে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মোল্যা বাড়ি সড়কের শেষ মাথার বাইপাস রোডের কাছে আবুল হোসেনের ধান ক্ষেতের মধ্যে তার মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। এরপর তার পিতা আয়নাল শেখ বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট চৌধুরীর জাহিদ হাসান (খোকন) বলেন, এই মামলায় আমরা সর্বোচ্চ রায় পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি।
নওগাঁয় হত্যা মামলায় দু’জনের মৃত্যুদণ্ড, ধর্ষণে দু’জনের কারাদণ্ড:
নওগাঁয় অপহরণ করে হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের ১ লাখ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
অপহরণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মিশু (১৯) এবং পিংকি (৩০)। এছাড়া এ মামলায় দশ বছরের আটকাদেশ প্রাপ্ত আসামিরা হলেন হুজাইফা এবং সাজু আহমেদ।
ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মোরশেদ (৩৫) এবং রবিউল (৩৮)। এছাড়া এ মামলায় সুলতানা পারভিন নামে এক নারীকে খালাস প্রদান করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার খাদাইল গ্রামের নাজমুল নামের এক স্কুল ছাত্রকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি এবং হত্যা করে লাশ গুম করে একটি চক্র। এ ঘটনায় নিহত নাজমুলের পিতা বদলগাছী থানায় একই গ্রামের মিশু (১৯), পিংকি (৩০) ও শিশু হুজাইফা (১৪) ও সাজু আহম্মেদর(১৪) নামে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা থাকায় তাদের নামে মামালা দায়ের করে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলায় ২০ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মিশু ও পিংকিকে মৃত্যুদণ্ড এবং হুজাইফা ও সাজু আহমেদকে ১০ বছরের আটকাদেশ প্রদান করেন আদালত। এছাড়া শিশুদ্বয়ের বর্তমান বয়স আঠারো বছরের ঊর্ধ্বে হওয়ায় তাদেরসহ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামিকে সাজা পরোয়ানা মূলে জেলা কারাগারে প্রেরণেরও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
আদালত সূত্রে আরো জানা যায়, পিংকি মোবাইলে ছদ্মনাম ব্যবহার করে নাজমুলকে (১৪) প্রেমের ফাঁদে ফেলেন। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায় পিংকি নাজমুলকে দেখা করার কথা বলে কৌশলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নারিকেল বাড়ি রোডে ডেকে নেয়। সেখান থেকে আবার পিংকি নাজমুলকে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার কেসের মোড় রেললাইনে ডেকে নেয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর সকাল ১০টায় আসামিরা সকলে মৃত নাজমুলের মোবাইল ফোন থেকে তার বাবার মোবাইলে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে উক্ত স্থানে আসামিরা নাজমুলকে খুন করে। মৃত নাজমুলের লাশ গোপন করার জন্য আসামি মিশু বাড়ি থেকে সাদা রংয়ের প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে এসে অন্যান্য আসামিদের সহযোগিতায় নাজমুলের মৃত দেহটি বস্তায় ভরে আক্কেলপুর রেলগেটের উত্তর পাশে ডোবার মধ্যে ফেলে রাখে।
ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলা: আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নওগাঁর মান্দা উপজেলার চকদেবীরাম গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণের এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন মোরশেদ ও রবিউল নামের দুই যুবক। পরবর্তীতে ওই মেয়েকে রবিউল বিয়ে না করলে মেয়ের পরিবার তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের পরে রবিউল ওই মেয়ের স্বামীর কাছে ধর্ষণের ভিডিও এবং অশ্লীল ছবি পাঠায়। ধর্ষণের ভিডিও এবং ছবি দেখে ওই মেয়ের স্বামী তাকে তালাক দেন। পরবর্তীতে মেয়ের পরিবার রবিউলকে বিয়ে করতে বললে রবিউল বিয়েতে অস্বীকৃতি জানান। কিছুদিন পরে ঢাকার বিক্রমপুরে ওই মেয়ের দ্বিতীয় বিয়ে হলে রবিউল তার দ্বিতীয় স্বামীর কাছেও ধর্ষণের ভিডিও এবং অশ্লীল ছবি পাঠান। তখন তার দ্বিতীয় স্বামী আইনি পরামর্শের কথা বলে ওই মেয়েকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। ধর্ষণের শিকার ওই মেয়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলে মান্দা থানা পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে সংশ্লিষ্টতা থাকার রিপোর্ট প্রদান করেন।
দীর্ঘদিন ধরে চলা এ মামলায় ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত মোরশেদ এবং রবিউল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন। এ মামলায় সুলতানা পারভিন নামে আরেক আসামির অভিযোগ প্রমাণিত না হয় আদালত তাকে খালাস প্রদান করেছেন।
উভয় মামলার রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২-এর বিশেষ কুশলি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আজকালের খবর/ওআর