ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলি সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এই যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন ইসরায়েলি সেনা আত্মহত্যা করেছেন।
বুধবার (৩০ জুলাই) ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে সেনাবাহিনীতে আত্মহত্যার হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে।
এতে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালে মোট ১৭ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন, যাদের মধ্যে ৭ জন গাজা যুদ্ধ শুরুর পরপরই নিজেদের জীবন শেষ করেন। আর ২০২৪ সালের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত আরও ২৪ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন। সামগ্রিকভাবে যুদ্ধকালীন সময়ে প্রায় ৫০ সেনা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।
হারেৎজের প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় ভয়াবহ ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে মনোরোগ চিকিৎসক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, এবং সমাজকর্মীদের সংকট এতটাই প্রকট যে, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরা বহু সেনা বা দায়িত্বরত সদস্য সময়মতো চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
যেসব ইউনিট ‘নিহত সেনাদের মরদেহ শনাক্তে’ কাজ করে, সেখানকার সদস্যদের মধ্যে মানসিক ট্রমা এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার অনেক বেশি। সেনাবাহিনীর তথ্যমতে, প্রতি মাসেই শত শত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সেনাকে পুনর্বাসন শাখায় ভর্তি করাতে হচ্ছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৮৯৮ জন ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং ছয় হাজার ১৩৪ জন আহত হয়েছেন। তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ মহলে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি গোপনের অভিযোগ রয়েছে। অনেক পরিবার দাবি করছে, নিহত সেনার প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সামরিক তাণ্ডবের ফলে অঞ্চলটি ধ্বংস হয়ে গেছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকার ওপর যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলারও মুখোমুখি।
আজকালের খবর/ এমকে