
গত দেড় দশকে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনকে (বিটিভি) ‘বোকার বাক্স’ বানিয়ে লুটে খাওয়ার প্রতিযোগিতা দেখেছে জনগণ। মানহীন অনুষ্ঠান আর অধিক বিজ্ঞাপন মূল্যহারের কারণে দর্শকশূন্য হয়ে পড়ে বিটিভি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তবর্তী সরকার। মাধ্যমটিকে ১৮ কোটি মানুষের চাহিদা উপযোগী করতে অভিজ্ঞ সাবেক প্রযোজক মো. মাহবুব আলমকে ডিজি এবং নুরুল আজম পবনকে জিএম (ঢাকা) করে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাদের দেওয়া প্রস্তাবনার অন্যতম এজেন্ডা ছিল ঢাকা কেন্দ্রের জন্য বিজ্ঞাপনের মূল্যহার সময়োপযোগী করার। তারই অংশ হিসেবে কমছে বিজ্ঞাপনের মূল্যহার; যা অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর প্রায় সমপরিমাণ। যা আগের ৬০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১৮ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাভ করেছে। শিগগিরই প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হবে বলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকালের খবরকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে ঢাকা কেন্দ্রের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনাটি পাস হয়। আশা করছি, উপদেষ্টা মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে চলতি সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। আর এতে করে বিটিভি আবারো দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হতে পারবে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিটিভির প্যাকেজ প্রিভিউ কমিটি গঠন করে সরকার। কিন্তু বিজ্ঞাপন মূল্যহার বেশি হওয়ায় ঢাকা থেকে ‘ইত্যাদি’ এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দু-একটা অনুষ্ঠান দেখা ছাড়া এই কমিটির উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ নেই। এমনটা পর্যবেক্ষণ করে কমিটির প্রথম বৈঠকে প্রচলিত বিজ্ঞাপনের মূল্যহার কমানোর অর্থাৎ বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে মূল্যহার পুনঃনির্ধারনের জোর তাগিদ দেন। ওই বৈঠকে কমিটি ডিজি, উপসচিব (টেলিভিশন) এবং জিএম উপস্থিত ছিলেন। তারাও কমিটির কথায় সায় দেন।
জানা গেছে, বাজার যাচাই না করেই সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিজ্ঞাপনের মূল্যহার পুনঃনির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে।
ওই জারিকৃত পুনঃনির্ধারণী মূল্যহার অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টাকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছিল। এতে ‘সুপার পিক’ ধরা হয়েছিল রাত ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। ৬০ সেকেন্ড বা ১ মিনিট হিসাবে এর মূল্যহার ছিল ৬৫ হাজার টাকা। ‘পিক টাইম’ বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা। ৬০ সেকেন্ড বা ১ মিনিট হিসাবে এর মূল্যহার ছিল ৬০ হাজার টাকা। অফ পিক সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৪টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত। ৬০ সেকেন্ড বা ১ মিনিট হিসাবে এর মূল্যহার ছিলো ৩০ হাজার টাকা।
এছাড়া বাংলা সিনেমা মধ্যবিরতিতে স্পট বিজ্ঞাপন হার ঈদে ৬০ সেকেন্ড বা ১ মিনিট ৫২ হাজার টাকা। শুক্র ও শনিবার সিনেমার মধ্যবিরতিতে বিজ্ঞাপন মূল্যহার ৬০ সেকেন্ড বা ১ মিনিট ৫০ হাজার টাকা নির্ধারিত ছিল।
অপরদিকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় অনুষ্ঠানের গুণগত পরিবর্তন এবং দর্শক চাহিদাকে গতি দিতে মূল্যহার এতটাই রিজেনবল করে যে, বিটিভিতে অনুষ্ঠান সম্প্রচার কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকে। এক সময়ে এটাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘বোকার বাক্স’ হিসেবে দর্শক ট্রল করতে শুরু করে।
৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের বর্তমান প্রশাসন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিটিভিকে নতুন করে আপামর দর্শকের উপযোগী করতে প্রস্তাবনা দেয়। প্রস্তাবনা অনুযায়ী নতুন মূল্যতালিকা পিক আওয়ার ৬০ সেকেন্ড বা ১ মিনিট হিসাবে ৮ হাজার টাকা, যা তিন মিনিট হিসাবে ২৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি অফ পিক আওয়ার হিসাবে ৬০ সেকেন্ড বা ১ মিনিট হিসাবে ৬ হাজার টাকা; যা তিন মিনিট হিসাবে ১৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিভির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিটিভিকে সময়োপযোগী করার উদ্যোগের ফলে শহর ও প্রান্তিক জনতার প্রিয় মাধ্যম হিসেবে বিটিভি হাজির হবে বলে বিশ্বাস করি।
আজকালের খবর/আতে