শিশুদের ভিডিওতে দু’দেশের সম্প্রীতির বার্তা
আনন্দমেলা ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৭:২৪ পিএম
সম্প্রতি পাকিস্তানে চিত্রায়িত একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। এতে ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। প্রতীকী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে নিষ্পাপ বাচ্চাদের। ভিডিওচিত্রটি প্রকাশ্যে আসতেই দু-দেশের মানুষের শুভেচ্ছায় ভেসেছে মিশরের কায়রো থেকে বানানো এই কনটেন্টটি। ভিডিওবার্তায় দেখা যায়- একদল বাংলাদেশি শিশু কাঁদছে। তাদের মন ভালো করতে পেছনে পাকিস্তানি পতাকার কাছে থেকে একদল শিশু বাংলাদেশ পতাকার কাছে থাকা দলটির কাছে আসে। একপর্যায়ে পাকিস্তানি শিশু তাদের খুশি করতে কান ধরে। এরপর তারা গলায় গলায় মিলে যায়। এভাবেই ভিডিওবার্তায় তারা ভ্রাতৃত্ববোধের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া চেষ্টা করেছেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে উর্দু ভাষায় একটি নিবন্ধ লিখেছেন দ্য ডেইলি পাকিস্তানের প্রধান সম্পাদক মুজিবুর রহমান শামি। লেখাটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন গওহর মুহাম্মদ জাওয়াদ।

নিবন্ধে লিখা হয়েছে- ভিডিওবার্তাটি গভীরভাবে দেখে এতটুকু স্পষ্ট যে এখানে একটি পরিস্কার বার্তা দেওয়া হয়েছে। যা মনের গভীরে তার ছাপ ফেলে চলেছে। সুদূর মিশরের কায়রো থেকে ভিডিও করা হয়েছে। এটি নীলনদের পাশে থাকা একটি সরকারি মিলনায়তন থেকে ধারণ করা বলে মনে হয়েছে। ভিডিওতে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে তা যেন আল্লামা ইকবালের শায়েরির সমার্থক। নীল নদের পাশে বসে যে শায়েরি তিনি লিখে মুসলিমদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। 

‘এক হো মুসলিম হেরেম কি পাসবানি কে লিয়ে
নীল কে সাহিল সে লেকার তাবখাকে কাশগর।’

অর্থাৎ

‘এক হোক মুসলিম, হারামের পবিত্রতার প্রহরায়,
নীল নদের তীর থেকে কাশগরের মাটি পর্যন্ত।’

তবে ভিডিওটির বার্তা প্রাচ্য পর্যন্ত পৌঁছেছে কি না তা জানা নেই, তবে এটি অবশ্যই ইসলামাবাদ এবং ঢাকায় পৌঁঁছেছে। লাহোর, করাচি, পেশোয়ার এবং কোয়েটাও এই ছবির বার্তা থেকে বঞ্চিত হয়নি। এমনকি চট্টগ্রাম ও নোয়াখালিতেও এটি স্পষ্টরূপে দৃশ্যমান।

ভিডিওচিত্রটি প্রথমে নিঃশব্দ ও স্থবির মনে হতে পারে। তবে নিঃশব্দ কখনো শক্ত বার্তা দিয়ে যায়। এটি এক অদৃশ্য ডাকে আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। দুই ব্যক্তি পরস্পরের মুখোমুখি বসে আছেন, কিন্তু তারা কেবল দুই ব্যক্তি নন। তাদের প্রতিচ্ছবিতে লাখ লাখ মানুষের অস্তিত্ব ও আশা প্রতিফলিত হচ্ছে। এই দুই ব্যক্তি ৪৫ কোটি মানুষের প্রতিনিধি। তাদের চোখে গাম্ভীর্য ও সংকল্পের ছাপ স্পষ্ট। তারা একে অপরের হাত ধরার জন্য, একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত। তারা একটি নতুন যুগের প্রারম্ভিক ইঙ্গিত দিচ্ছেন। নিজেদের ও দর্শকদের চোখে নতুন স্বপ্নের বীজ বপন করছেন, একটি নতুন পৃথিবী নির্মাণের প্রতিজ্ঞা করছেন।

তাদের উভয়ের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত, যা বহন করছে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। সেই চিহ্নের নেপথ্যে আছে বহু হাত, বহুমুখী অভিযোগ। তাদের অভিমানের ভাষায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ঘটে যাওয়া ঘটনার আবহ- ‘তুমি কেন আমার সঙ্গে এমন করলে? কেন আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করলে? কেন তুমি আমার শত্রু হলে? কেন তুমি আমার শত্রুদের সঙ্গে হাত মেলালে? তুমি আমাকে কেন অচেনা করে তুললে? তুমি কীভাবে ‘ইউসুফের ভাই’ হলে? তুমি আমাকে কুয়োয় নিক্ষেপ করলে কেন?’

কেউই দায় স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়, তবে কেউই একে পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারছে না। উভয়ের হাতই রক্তে রঞ্জিত, উভয়েই নিজেদের ‘ইউসুফ’ মনে করছে, অন্যজনকে ‘ইউসুফের ভাই’। উভয়েই নিজেদের নিষ্পাপ বলে ভাবছে, একে অপরকে দোষারোপ করছে। কিন্তু সত্যের সরল রেখা তাদের বিভ্রান্ত করছে।

‘ইউসুফ’ কে এবং ‘ইউসুফের ভাই’ কে? পূর্ব থেকে দেখলে এক চিত্র, পশ্চিম থেকে দেখলে ভিন্ন। উভয়ই হতে পারে ‘ইউসুফ’, উভয়ই হতে পারে ‘ইউসুফের ভাই’। তারা একসঙ্গে কুয়োয় পড়েছিল, কুয়ো থেকে উত্তোলিত হয়েছিল এবং আজ একে অপরের মুখোমুখি। কিন্তু কে আসল ‘ইউসুফ’, সেই সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে।

ভিডিওচিত্রের সংলাপে উচ্চারিত হচ্ছে- যে আগে ক্ষমা করবে, সেই হবে সত্যিকারের ‘ইউসুফ’। উভয়ে একসঙ্গে এগিয়ে আসে। তাদের কণ্ঠস্বর একত্রে উচ্চারিত হয়: ‘আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি। আমার রক্তের মূল্য আমি নিজেই দেব, তোমার কাছে কোনো দাবি করব না।’

তারা একে অপরকে আলিঙ্গন করে, নতুন করে পথচলার অঙ্গীকার করে এবং একে অপরকে শাসনভার ভাগাভাগি করার ঘোষণা দেয়। ছবিটি তার বাণী পুনর্ব্যক্ত করছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস একে অপরের মুখোমুখি বসে ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে নতুন রূপ দিচ্ছেন। পরস্পরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মাঝে ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করছেন। তারা একত্রে দক্ষিণ এশিয়ার মানচিত্র বদলে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন।
যদি সেই ৫৩ বছর আগের ঘটনায় শেহবাজ ও ড. ইউনুস উপস্থিত থাকতেন, তবে ইতিহাস আজ অন্যরকম হতো। কিন্তু সেই সময় তারা আমাদের ভাগ্যে ছিলেন না। যারা তখন আমাদের নেতৃত্বে ছিলেন, তারা ক্ষমতার লোভে দেশকে টুকরো করে দিয়েছিলেন। এক পা পিছিয়ে গিয়ে যদি তারা আত্মত্যাগ করতেন, তবে আমাদের ইতিহাস কলঙ্কমুক্ত হতো।

যদি তাদের মধ্যে কেউ এক পা পিছিয়ে আসত, আত্মত্যাগ করত, তবে আমাদের ইতিহাস এমন কলঙ্কিত হতো না। পাশের শত্রুভাবাপন্ন (ভারত) প্রতিবেশী কখনো আমাদের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকানোর সাহস করত না। তার সেনাবাহিনী আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করত না। তার কুমতলব সফল হতো না।

কিন্তু যারা দেশের বিভক্তির পেছনে দায়ী, তাদের ইতিহাসও কম নির্মম নয়। কেউ (শেখ মুজিব) নিজ সেনাদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে, কেউ (ভুট্টো) তার মনোনীত সেনাপ্রধানের হাতে ফাঁসিতে ঝুলেছে, কেউ নিজের কৃতকর্মের যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করেছে। এমনকি সেই শাসক রাণীও (ইন্ধিরা গান্ধী) তার নিজের রক্ষীদের হাতে বিদ্ধ হয়েছে।

বাংলাদেশকে যে স্বাধীনতার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা প্রমাণিত হয়েছে নতুন দাসত্বের পথ। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশ আজ মুক্ত, সজাগ, জেগে উঠেছে। তার সম্পর্ক নতুন করে পাকিস্তানের সঙ্গে একাত্ম হচ্ছে। তারা আজ পরস্পরকে ভ্রাতৃত্বের দৃষ্টিতে দেখছে, সহযোগিতার নতুন পথ খুঁজছে। শেহবাজ শরীফ এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুস আজ তাদের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন।

ছবিটি কথা বলছে, ভুলে যাওয়া ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করছে। পুরোনো যাত্রার নতুন সূচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান মৈত্রী চিরজীবী হোক!

মহাকবি আল্লামা ইকবাল বলেছেন -
‘আমি অন্ধকার রাতে আমার ক্লান্ত কাফেলাকে নিয়ে এগোব,
আমার দীর্ঘশ্বাস হবে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, আমার শ্বাস হবে দহনশিখা।
যে সিংহ মরু থেকে উঠে এসে রোমান সাম্রাজ্যকে উল্টে দিয়েছিল,
স্বর্গীয় বার্তা বলছে, সেই সিংহ আবার জেগে উঠবে।’

লেখক: মুজিবুর রহমান শামি
প্রধান সম্পাদক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক, দ্য ডেইলি পাকিস্তান।
অনুবাদক: গওহর মুহাম্মদ জাওয়াদ
বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদ, পাকিস্তান।

আজকালের খবর/আতে








সর্বশেষ সংবাদ
বন্ধ ৯ কারখানা খুলছে এস আলম গ্রুপ
মোহনগঞ্জে প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের সাথে ইউএনও’র মতবিনিময়
দীর্ঘতম সৈকতে হাজারো মানুষ দেখলো বছরের শেষ সূর্যাস্ত
যেসব দাবি জানালেন চব্বিশের বিপ্লবীরা
দাম কমল ডিজেল-কেরোসিনের
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বাণিজ্য মেলায় ই–টিকেটিং সেবা চালু
শহীদ রুবেলের নবজাতক শিশু পুত্রকে দেখতে গেলেন ইউএনও
দুই সচিব ওএসডি
ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান
ইসকনের ২০২ অ্যাকাউন্টে ২৩৬ কোটি টাকা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft