লিম্ফ
মাহবুব আলী
প্রকাশ: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩:৫৮ পিএম
সেই মানুষের সঙ্গে পরিচয়, আলাপ আর কাজের কথা হতে হতে সন্ধ্যা নেমে এলো। জুলাইয়ের তপ্ত দিনকাল। সারাদিন একই প্যান্টসার্ট। চিটচিটে ঘাম। তখন মাগরিবের আজান শেষ হয়েছে। সত্যেন বাবু চায়ের জন্য বলেছেন। ভাইস প্রিন্সিপ্যাল মাহবুবুর রহমান মিডিয়া পারসন হিসেবে বসে আছেন। আজানের পর পর উঠে দাঁড়ালেন।
‘ভাই আপনি আলাপ করেন। আমি উঠি। নামাজ আদায় করে বাসায় যাব।’
‘হ্যাঁ ভাই যান। আগামীকাল দেখা হবে।’
সত্যেন বাবু সিগারেট ধরিয়েছেন। ট্রিপল ফাইভ। আলোছায়া বাতাসে চমৎকার সুবাস। তিনি চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে একবার বাইরে তাকান। মোটরসাইকেল ঠিক জায়গামতো আছে কিনা। একটু দূরে পাহাড়ের মতো উঁচু করা ধান বস্তায় তোলা শেষ। ট্রাক্টরের শ্রমিকেরা শোরগোল তুলে ব্যস্ত হলো। সত্যেন বাবু বলেন- ‘আপনি তাহলে শহর থাকি আসেন। প্রতিদিন?’
‘জি দাদা। আসতে-যেতে তিরিশ দ্বিগুণে ষাট কিলোমিটার বাসে, তারপর সাইকেলে এক কিলো করে দুই কিলোমিটার।’
‘কতদিন ধরে চাকরি করছেন?’
‘আড়াই বছর হয়ে গেল।’
‘কত টাকা দরকার? কবে নেবেন? ভাইস প্রিন্সিপ্যাল কি ডিটেইল বলেছে?’
‘তেমন কিছু বলেননি। আপনার সাথে যোগাযোগ করে দেবেন। আজ তাই আসা হলো। আমার পনেরো হাজার টাকা খুব দরকার।’
‘যেহেতু রেফারেন্স পাইছি, আপনার ডিডবন্ড দেওয়া লাগবে না। বেতন তোলার চেকবই জমা দিলেই হবে। বেতন টু বেতন দশ পার্সেন্ট লাভ।’
‘যত টাকা ঋণ, তার উপর সুদ? হাজারে এক শত টাকা?’
‘হ্যাঁ। সুদ নয়, বলেন লাভ। এটা আমার ব্যবসা।’
সত্যেন বাবু এই ব্যবসা করে তিনতলা বাহারি বিল্ডিং করেছেন। ভেতর-বাহির গ্লাস আর টাইলসের চকমকি। শওকত শুধোয়Ñ ‘টাকা কবে পাব দাদা?’
‘কবে নেবেন? এখনও নিতে পারেন। সে-জন্য অবশ্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমি বাসায় গিয়ে টাকা এসে দেব। চেকবই সাথে আছে?’
‘আমার কাছে এখন চেকবই নেই।’
‘তবে কাল নেন।’
এইসব গল্প-আলাপ শেষে বাসে বসে যেতে যেতে সাত-আট কিলো পথ শেষে ভিড় বেড়ে গেল। আমতলিতে জমে থাকল অনেকক্ষণ। আকাশে গোধূলির লালিমা কেটে অন্ধকার হয়ে এসেছে। দিগন্তরেখায় মিটমিট করছে দু-একটি তারা। শওকত বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে গেছে প্রায়। তখনই বাস চলতে শুরু করে। আজ লক্ষ্মীতলা বাজার। আগের বাসের টাইম গ্যাপ আছে। ফলে বাস চলছে মন্থর গতিতে আর যাত্রীও অনেক। বাস থেকে নেমে যাওয়াও কষ্টকর। সুপারভাইজার এরমধ্যে আরো একবার সামনে এসে দাঁড়ায়।
‘কই ভাই, ভাড়া দেন।’
‘ভাড়া দিতে তো রেডি। আপনি নিচ্ছেন না।’
‘আমবাড়ি উঠেছেন না? ত্রিশ টাকা। ওসব হাফপাস হবে না।’
সুপারভাইজার আমবাড়ি থেকে বাস ছেড়ে আসার সময় ভাড়া কালেকশন শুরু করে। শওকত পনেরো টাকা বের করে দেয়। সুপারভাইজার টাকা হাতে নিয়ে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে গোঁফ কুচকে ধরে। অবশেষে হাফপাস দেখতে চায়। শওকত পাস বের করে। প্যাডের পাতায় সাদাকালো একটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি। সেটির অর্ধেক ঢেকে মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সিল। নিচে বলপয়েন্টে লেখা। 
যাহার জন্য প্রযোজ্য
জনাব শওকত আলী একজন অসচ্ছল শিক্ষক। তিনি প্রতিদিন বাসযোগে দিনাজপুর হইতে রাঙ্গামাটি বিডিআর ক্যাম্প পর্যন্ত যাতায়াত করিবেন। তিনি অত্র ইউনিয়নের একজন সদস্যের ভাই। কন্ডাক্টর ভাইকে বাসভাড়া অর্ধেক নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হইল।
প্যাডের ডানদিকে নিচে সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর ও সিল।
শওকতের কাছে বাড়তি কিছু টাকা থাকে। দশ-বিশ-তিরিশ। আজ সত্যেন বাবুর সঙ্গে দেখা করার জন্য ভ্যানে কিছু খরচ হয়ে গেছে। পকেটে কুড়ি টাকা মাত্র। সেখান থেকে পনেরো টাকা। সুপারভাইজার হাফপাস তাচ্ছিল্যভরে ফিরিয়ে দিতে দিতে বলেÑ ‘আজ পাসের খাওয়া নাই। পুরো ভাড়া দেন।’
‘প্রতিদিনই তো এই টাকা দিই ভাই।’
‘আজ তিরিশ টাকা দিতে হবে।’
শওকতের দিকে কৌতুহলি দু-একজন তাকিয়ে আছে। নিজেকে এত ছোট কোনোদিন মনে হয়নি শওকতের। তার অভাব আছে গরিবি আছে; সেটি একান্ত গোপনীয়র মতো নিজস্ব। আজ সন্ধের আলোছায়ায় একেবারে ন্যাংটো হয়ে গেলেন। তিনি অধোবদনে বসে থাকলেন। কোথা থেকে তিরিশ টাকা দেবেন? কোনোদিন কারো কাছে ধারকর্জ নেননি। এবার মাত্র পনেরো টাকার জন্য আশপাশে তাকালেন। পরিচিত কেউ নেই। এখন উপায়? তার হাতে একটি দশ টাকার নোট আর পাঁচ টাকার কয়েন ঘামতে শুরু করল। বাস চলছে। সুপারভাইজার কালেকশন করতে এগিয়ে গেল।
শওকত এবার কী করেন? অন্ধকার হয়ে এসেছে। ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে ফেলে রাখা সাইকেল আছে কিনা কে জানে। শহরের পরিস্থিতি ভালো নয়। চোর আর হেরোইন খোরের উৎপাত আছে। তিনি পুনরায় পনেরো টাকা হাতের মুঠিতে ধরে এগিয়ে দিলেন। উঠে দাঁড়ালেন। মোলায়ের স্বরে অনুরোধ করলেন।
‘ভাই, আজ আমার হাতে টাকা নেই। প্লিজ এটা নেন।’
‘আপনি অন্য বাসে আসেন। সামনে লক্ষ্মীতলা। নেমে যান।’
অপমানের শেষ পর্যায়ে এসে সত্যি সত্যি নেমে গেলেন শওকত। তার মন খারাপ হয়ে গেল। কত মানুষ ভালো ভালো কতরকম চাকরি করছে। তিনি এখানে-ওখানে বেগাড় খেটে কোনো ভাগ্যে মাস্টারির চাকরি পেয়েছেন। সেটিতেও কুলোতে পারছেন না। ছাত্র খারাপ ছিলেন না। ইউনিভার্সিটিতেও ভালো করেছেন। চাকরি জন্য তদবির করতে পারেননি। তকদিরেও নেই। সাতাশ বছরের সীমারেখা ছয়মাসে পেরিয়ে হতাশ হয়ে বসে গেলেন। তার নোট কপি করে নিত জুলফিকার। একদিন শোনেন জজ হয়েছে সে। শওকতের বুকের মধ্যে যুগপৎ বিষাদ আর মাৎসর্যের ঢেউ বয়ে গেল। তারপরও কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। এটিই হয়তো নিয়তি। গ্রাম আর শহরের স্কুল-কলেজের মধ্যে আকাশ-জমিন পার্থক্য। অথচ ভর্তি থেকে চাকরি সবক্ষেত্রেই একসারিতে মূল্যায়ন। যে কয়েকটি ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন অসম এই প্রতিযোগিতায় হেরে গেলেন। গ্রামে অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিজেদের বেতনভাতা রক্ষা করতে পাবলিক পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীকে শিখিয়ে পড়িয়ে দেয়। নকল সরবরাহ করে। শিক্ষকতা পেশায় এসে যেমন এ-সব অভিজ্ঞতা হলো, প্রথমদিকে এমন অনৈতিকতার বিরুদ্ধে কথা বলতেন; এখন বলেন না। জীবনের বাস্তবতা হলো মিথ্যা, শঠতা। আপোশ করার শিক্ষা। নতজানু থাকার অভিজ্ঞতা।
লক্ষ্মীতলায় বাস থেকে নেমে ডুমুর গাছের নিচে দাঁড়ালেন। পান-সিগারেট স্টলের ডানে রেস্তোরাঁ। সেখানে বাইরে লুচি ভাজা হচ্ছে। শওকতের মুখ ভিজে উঠল। সেই সকালে দুটো রুটি আর রাতের বেঁচে যাওয়া সবজি দিয়ে নাশতা করেছেন। টিফিনের সময় রাঙ্গামাটি মোড়ে একটি নানখাতাই আর লাল-চা। আফসার হোসেন, বাংলা শিক্ষক, দিলখোলা মানুষ। কখনো কখনো একসঙ্গে মোড়ে যাওয়া হয়। চা খাওয়া চলে। রোটেশন করে বিল দেওয়া। আজ তিনি খাইয়েছেন। শওকত চাকরির এই আড়াই বছরে কোনোদিন টিফিন বক্স নিয়ে যাওয়া-আসা করেননি। স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষক স্থানীয়। প্রভাবশালী-অর্থশালী মানুষজন চাকরির জন্য স্কুল গড়েছেন। এখন আরামে-আরামে চাকরি করছেন। লাঞ্চের জন্য অনায়াসে বাসায় যান টিফিন পিরিয়ডে। শওকত লাইব্রেরিতে বসে থাকেন। কতরকম ভাবনা আসে।
এইসব হাবিজাবি ভাবনার মধ্যে পুবে অনেক দূর তাকিয়ে আছেন শওকত। বাস কখন আসবে? একটি যেমন-তেমন বাস এলেই উঠে পড়বেন। এখান থেকে বাসভাড়া পনেরো টাকা। সুপারভাইজারকে হাফপাসের কথা বলবেন না। আর কেন? একজোড়া হেডলাইট জ্বলতে জ্বলতে কাছে এলে রেডি হলেন, কিন্তু সেটি ট্রাক। অগত্যা ডুমুরগাছের নিচ থেকে পান-সিগারেট স্টলের সামনে দাঁড়ালেন। এখান থেকে রাস্তা পরিষ্কার দেখা যায়। অনেকক্ষণ পর বাস এলো। অনেক ভিড়। তিনি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, ওঠা কি ঠিক হবে; দাঁড়াবার জায়গাও তো নেই। তারপরও উঠে পড়লেন। একটু এদিক-ওদিক ফাঁকফোকর দেখে বা করে নিয়ে ইঞ্জিনের পেছনে পৌঁছতে পারলেন। আশ্চর্য পেছনে ছয় সিটের সামনে বেশ ফাঁকা। সেখানে কি ছোট ছেলেমেয়ে বসে আছে? তিনি তেমনভাবে খেয়াল করতে পারলেন না। কী ভেবে ধীরে ধীরে এগোলেন। ছয় সিট সারির সামনে একটি সিট খালি পড়ে আছে। একজন মানুষ একাই বসে আছে। শওকত ভালোভাবে লক্ষ্য করতে পারলেন না। বাসের মধ্যে একটি বাল্ব। আলোছায়া। তিনি তার পাশে বসে পড়লেন। বাস রওয়ানা দিলে জানালা গলিয়ে চমৎকার বাতাস আসতে শুরু করল।
লক্ষ্মীতলা পেরিয়ে বুড়িতলা আর গোয়ালহাট আসতে আসতে পাশের যাত্রীর দিকে দৃষ্টি দিতে অবসর পেলেন শওকত। একজন মানুষ। পঞ্চান্ন-ষাট বছর বয়সি। স্থুল। পরনে ল্যাঙট। ময়লাটে সাদা অথবা কালো। গলায় লাল টকটকে উত্তরীয় জাতীয় বস্ত্রখণ্ড। তার হাতে ত্রিশূল। সাধুসন্ন্যাসী মানুষ। শওকত চমকে উঠলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে অনুধাবন করে নিলেন যে, কেন এই সাধুর পাশে কেউ বসেনি। সাধুর শরীর জুড়ে লটকনের মতো লিম্ফের অজস্র ছোটবড় গোটা। শওকত এতক্ষণে এও বুঝতে পারলেন যে, বাসের আলোছায়ায় কয়েকজন যাত্রী কেন অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। তিনি অধোবদনে বসে থাকলেন। এখন উঠে দাঁড়াবার ফুরসত বা পরিসর নেই। তারপর সব মানুষই স্রষ্টার আদরে সৃজন। কাউকে ঘৃণা করতে নেই। মানুষের চেয়ে আর কেউ শ্রেষ্ঠ নয় ভেবে নিয়ে মাথা তুললেন। স্বাভাবিক থাকার অসম্ভব চেষ্টা।
বাস তখন চকরাামপুর পেরিয়ে যায় যায়। শওকতের আজ তিক্ত দিন। মানুষের জীবনে কোনো কোনোদিন আনন্দ-সুখের। কতগুলো অসম্ভব তিক্ততার। গরিব মানুষের জন্য সারাজীবন কষ্টের। যার টাকা নেই তার মানসম্মানও নেই। আজ ঋণের জন্য এমন মানুষের কাছে হাত পাতলেন, যা কোনোদিন কল্পনা করেননি। তার কত বন্ধুবান্ধব অর্থশালী আত্মীয়পরিজন, অথচ কেউ পরিচয় দেয় না; সামনে গিয়ে দাঁড়ালে চোখের দৃষ্টিতে গুরুত্বহীন হয়ে যান। তিনি মাথা নিচু অন্ধকারে পায়ের দিকে তাকাতে তাকাতে খুব বেদনায় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিলেন। তার জীবন-অস্তিত্ব পায়ের ছেঁড়া স্যান্ডেলের মতো। সেই পয়জারে দাগ নিয়েই বেঁচে আছেন। কত দূর আর যাবেন পৃথিবী নামক এই জঙ্গল থেকে? এতদিনেও কি বের হয়ে যাচ্ছেন না? তার মাথা ঝিম ঝিম করে উঠল। জানালা দিয়ে বাতাস আসছে। সারাদিনের গুমোট গরম আর তেমন নেই।
‘শওকত, এই শওকত, তোর খুব কষ্ট? কষ্ট কিছু নয় রে পাগলা। সবই এক জীবনের পাপপুণ্যের ফল।’
‘কে কে? কে আমার নাম ধরে ডাকে?’
‘আমি রে পাগলা! এক পাগলা তার গত জীবনের পাপের শাস্তি টেনে নিয়ে যায়। তুই যেমন।’
‘ঠিক ঠিক।’
শওকতের চোখ ভিজে আসে। অন্ধকার চারিদিক। কোথায় চলেছে বাস। কোথায় যাবে? তিনি কি নিজেকে বুঝতে পারছেন? নিজেকে কেন এত গোলকধাঁধা মনে হয়। তার চোখ দিয়ে টপ টপ কান্না নেমে আসে।
‘কি রে শওকত, কাঁদিস ক্যান? তোর টাকার অভাব। আর আমাকে দেখ, মানুষের মতো মানুষ হতে না পারার কষ্ট। প্রত্যেক মানুষের কোনো-না-কোনো কষ্ট আছে। অপূর্ণতা আছে। সবই প্রকৃতির বিচার। দুঃখ কীসের? এই জীবন দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে। তারপর এই জনমের পাপপুণ্যের জন্য আবার শাস্তি বা পুরস্কার। আরেক জনমের অপেক্ষা। শওকত...শওকত কাঁদিস না বাপ। কাঁদিস না।’
শওকত তন্দ্রঘোর থেকে আচমকা জেগে উঠলেন। বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে কত কথা বলে গেল। তিনি অভাগা সন্তান। বাবার জন্য কিছু করতে পারেননি। তার ঘরের বারান্দায় একটি পুরোনো টেবিলের উপর দু-হাত ফেলে রেখে জুলজুল করে তাকিয়ে থাকত। বাবার কষ্ট বুঝতে পারেননি শওকত। এখন বাবা হয়ে বোঝেন। বাবার বুকেও কষ্ট থাকে। যন্ত্রণা আছে। 
বাস থেমে গেল। শওকতের পাশের সেই মানুষ উঠে দাঁড়ায়। তিনি নামবেন। শওকত উঠে সিটের বাইরে একপাশে দাঁড়াল। লিম্ফ মানুষ নেমে যেতে যেতে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায় কিছুক্ষণ। শওকতের চোখের উপর চোখ। সেই চোখে কী কথা?
বাসস্ট্যান্ডে আসতে আসতে রাত নয়। শওকত নেমে অচেনা উৎকণ্ঠায় বট-পাঁকুড় গাছের দিকে এগোলেন। সেখানেই অনাথের মতো পড়ে থাকে সাইকেল। তিনি আলোছায়ায় চেইন লক খুলে হেঁটে হেঁটে রাস্তার সুবিধেজনক জায়গায় গেলেন। এবার বাসায় ফিরবেন। এক কিলোমিটার রাস্তা। সাইকেলে উঠে চলতে চলতে বাতাসের ঢেউয়ে ভালো লাগতে শুরু করল। সারাদিনের গুমোট গরম। মনের মধ্যে সহস্র তিক্ততা ধীরে ধীরে মুছে যেতে থাকে। 
শহরের রাস্তায় মানুষজন কম। ফকরুদ্দিন আর মঈন ইউ আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কঠিন শাসন। এদিক-ওদিক ধরপাকড় চলছে। দুর্নীতিবাজেরা ভয়ে অবৈধ টাকা কালো টাকা যেখানে-সেখানে লুকিয়ে রাখছে। আবর্জনার স্তূপে ফেলে দিচ্ছে। বন বিভাগের এক কর্মকর্তার বাড়িতে পাওয়া গেল বস্তায় বস্তায় টাকা। এমনকি বেডের নিচেও টাকা। মানুষের কত টাকা! শওকতের বাসভাড়ার টাকা নেই। দোকানপাট রাত নয়টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শওকত একজন সাধারণ মানুষ। তিনি মোড় পেরিয়ে কালভার্টে কাছাকাছি আসতে কিছু দেখতে পেলেন। আশপাশ প্রায় অন্ধকার। কেউ নেই। একটি র‌্যাকসেক ব্যাগ। বেশ মোটাসোটা। সম্ভবত ভারী। এই ব্যাগে কী আছে? বোমা বা ককটেল? অবৈধ অস্ত্র? তিনি থমকে দাঁড়ালেন। মানুষের মন বড় লোভী। কেউ বুঝি কৌতুহল আর লোভ জাগিয়ে তোলে। তিনি ধীরে ধীরে এগিয়ে ব্যাগ তুলে নিলেন। তারপর খুলে দেখে বিস্মিত। টাকা। অচেনা অনুভূতিতে কাঁপুনি এলো। আজ টাকার জন্য কাঙালের মতো বসে ছিলেন। কত অনুরোধ-উপরোধ। তারপর খুব স্বাভাবিক ব্যাগটি কাঁধে তুলে সাইকেলে উঠলেন। টাকা হলো ঈশ্বর। তাকে অবহেলা করতে নেই।
শওকত সপ্তাহ দুয়েক পর লক্ষ্য করলেন, বুকের বাঁ-পাশের ত্বকে ছোট্ট ফুলকুড়ির মতো ফুলে উঠেছে। 

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
বন্ধ ৯ কারখানা খুলছে এস আলম গ্রুপ
মোহনগঞ্জে প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের সাথে ইউএনও’র মতবিনিময়
দীর্ঘতম সৈকতে হাজারো মানুষ দেখলো বছরের শেষ সূর্যাস্ত
যেসব দাবি জানালেন চব্বিশের বিপ্লবীরা
দাম কমল ডিজেল-কেরোসিনের
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বাণিজ্য মেলায় ই–টিকেটিং সেবা চালু
শহীদ রুবেলের নবজাতক শিশু পুত্রকে দেখতে গেলেন ইউএনও
দুই সচিব ওএসডি
ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান
ইসকনের ২০২ অ্যাকাউন্টে ২৩৬ কোটি টাকা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft