প্রকাশ: শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩:৫৪ পিএম
পুষ্পিত সৌরভে মুখরিত করার মনটানা রাজ্যের আকুলতা উদযাপন নন্দিতা ঊর্মির কবিতা; অন্তর্মুখী জিজ্ঞাসার মধ্যে বুঁদ হয়ে থাকার সেই সৌন্দর্য মুহূর্তে বাহিত করার চিত্রিত রূপকল্পে, নন্দিতা ঊর্মির কবিতা আগল খুলে দিতে যেই পারদর্শিতা দৃশ্যতে ধরে সেটিতে সত্য দর্পিত হয়; এসব কবিতা পড়ে যেতে অকৃত্রিম মিষ্টি অনুভবের অনুধাবন নির্ভেজাল আন্তরিকতায় আকর্ষণ করে। এখানেই এখনকার নিরীক্ষার নামে হম্বিতম্বি ও সাময়িক উত্তেজনা কিংবা ভাঁওতাবাজি একেবারে অচল; সোজা কথায় বললে- নন্দিতা ঊর্মির কবিতা পড়ে আরাম কেদারায় মুহূর্তকে দারুণভাবে হৃদয়গত করার সফল প্রয়াস। প্রচলিত মতবিশ্বাসে কবিতা হয় কিংবা কবিতা হয় না সেইসবে আমার বলা- কবিতা কীভাবে হয় সেটিই তো জানি না, এজন্যই বুঝি একেকজনের প্রিয়জন একেকজন! এই বৈচিত্র্যে আমার আনন্দ যখন দিনের একেকটা সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মেজাজের ঘটন পছন্দ; কিছু কিছ কবিতা পড়লে একটা স্নিগ্ধ সুষমায় ভরা পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করে, একদম হাতে লেখা চিঠির সে-ই সময়ের আর্তি ঝরে, সেই টানের উপলব্ধি গাম্ভীর্যে সুশোভিত করে, এইসব মিলেই নন্দিতা ঊর্মির কবিতা-নিদ্রাহীন কোন কোন রাতে/ভর করে গভীর আড়ষ্টতা/চাঁদের ছায়া মেখে কেঁপে কেঁপে উত্তাল সমুদ্র/পাথরে পাথরে রুদ্ধ সময়ের হাহাকার বাজে/ভালোবাসার বুকে গ্রহণ লাগে হিংস্রতার!/শূন্য দৃষ্টি নিয়ে ওড়ে দিকহীন গাঙচিল/কিছু কিছু রাত হৃৎপিণ্ডে নীল দাগ রেখে যায়। (দাগ; ৩৫পৃষ্ঠা)
খ. এসেছিলো সে মেঘের মালা হাতে/দিয়েছি কথা তাকে,/কোন এক ঘোর জোছনার রাতে/বুকে গুঁজে অন্ধকারের ফুল/একাকার হবো দু’জনে জীবনের বিপরীতে! (অন্ধকারের ফুল; ১১পৃষ্ঠা)
গ. লোভ ও দ্বিধার শীৎকারে,/আকাক্সক্ষা গড়িয়ে জমে প্রার্থনায়;/অতলে ছুঁই ধ্যানীবক-/বিপন্ন ডানায় নকল সন্ন্যাস!/জল ফেলে জলের ছায়া গভীরে উজানে/ফুঁসে ওঠে ক্রোধের দাবানল;/ভেসে যায় ধর্ম-মোক্ষ-কাম/কল্পনার কাছাকাছি জেগে থাকেন অলীক ঈশ্বর!/ক্রমাগত বাড়ে মস্তিষ্কের ভর/বাতাসে তিরতির শব্দের কম্পন কিংবা ইথার!/ধ্বংসের ঘোরে নক্ষত্রচোখ/গভীর আলিঙ্গনে মৃত্যুডাক-/চারদিকে অন্ধদৃশ্য/হারিয়ে যায় চন্দ্রালোক,/লোভ-ঘৃণা-ক্ষোভ-ক্ষুধা,/প্রেম কিংবা দীর্ঘ শোক।/আলো ভেঙে ক্রমশ অন্ধকার/উধাও মানুষ, উধাও পৃথিবীর ভার।/-ক্রমশ ঝাপসা পৃথিবী/অদূরে দৃশ্যমান কৃষ্ণবিবর!/ (কৃষ্ণবিবর কিংবা একটি গন্ধম ফুল; ১৮পৃষ্ঠা)
নন্দিতা ঊর্মির কবিতার উপরোক্ত উদ্ধৃত অংশগুলো ২০২১ বইমেলায় কবির প্রকাশিত কবিতা বই- ‘দিলাম চিঠি মেঘের হাতে’ বই থেকে; এখনকার কবিতায় যে আড়াল নিয়ে আড়ালের কথা পরাবাস্তবতায় সেখানে নন্দিতা ঊর্মির কবিতা যথার্থ উপমার বন্ধনে স্মার্ট শব্দের উপস্থাপন, কখনো আলগা মনে হয়নি; উপলব্ধির বোধ আর জ্ঞানের চমৎকার পরিশীলিত রূপকল্প নন্দিতা ঊর্মির কবিতা, তবে নিজেকে ভাঙার নিজের কবিতা'কে বিভিন্ন আঙ্গিকে, নিরিখ টাঙিয়ে দেওয়ার চাওয়া চাইতেই পারি এই কবির কাছে, কেননা নন্দিতা ঊর্মির কবিতাকে সৌন্দর্যে সৃজিত সত্যি বলার মাধ্যম মনে হয়েছে...
আজকালের খবর/আরইউ