বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে সাহিত্য কেন প্রয়োজন
দারুস সালাম মাসুদ
প্রকাশ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৪:০৯ পিএম
সাহিত্য সুপ্রাচীন। এর তৃপ্তি ও সুমধুর রস যুগে যুগেই মানুষকে আলোড়িত করেছে। প্রযুক্তির ইতিহাস বেশি দিন আগের নয়। এটি মানুষের হাতিয়ার ও কৌশল আবিষ্কারের ইতিহাস। প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে সাধারণ পাথরের সরঞ্জাম থেকে শুরু করে জটিল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি); যা নিকট অতীতে উদ্ভূত মাত্র। আর ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সূচনা। মানুষ তখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির দ্বারা জ্ঞানের বিবর্তনকে পরিচালনা এবং প্রত্যক্ষ করার যোগ্যতা অর্জন করে। এসব জ্ঞান এতটাই মৌলিক ছিল যে অনেকে মনে করেন এই পরিবর্তনটি প্রাক-বৈজ্ঞানিকতাকে নির্দেশ করে। কিন্তু ব্রোঞ্জ যুগে খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় ও দ্বিতীয় সহস্রাব্দে সুমেরীয় ভাষায় লেখা হয়েছিল সুমেরীয় সাহিত্য। যা প্রাচীনতম পরিচিত সাহিত্য। ঠিক কবে থেকে মানুষ প্রথম পাথরে-পাথরে ঘষে আগুন জ¦ালিয়েছিল আর প্রথম সাহিত্য শুরু করেছিল তা সুনির্দিষ্ট করে বলা খুবই দুরূহ। পৃথিবীর প্রথম মানব কিংবা মানবী যখন তার দেহের বাইরেও ইন্দ্রিয়শক্তির মাধ্যমে  চিন্তা-চেতনা ও প্রকৃতির সৌন্দর্য হৃদয়ের ভাষায় খোঁজে পান তখন থেকেই সাহিত্যের সূচনা হয়ে যায়।

প্রশ্ন হলো, আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও সাহিত্য কেন প্রয়োজন? এত এত বাহারী গাছ থাকতে বাগানে এখন কন্টকময় গোলাপ গাছটির কী আর প্রয়োজন, প্রশ্নটি আমার কাছে এখন ঠিক এমনই মনে হয়। তবু প্রশ্ন আসতেই পারে। যাইহোক, মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও সাহিত্য নিয়ে একটা সম্যক ধারণা নেই।

বিজ্ঞান হলো কোনো সুুনির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিশেষ জ্ঞান। যা কেবল নির্দিষ্ট কোনো বিষয়েই পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাপ্ত তথ্যের একটা গবেষণালব্ধ ব্যাখ্যা দেয়। 

তথ্যপ্রযুক্তি হলো কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ মাধ্যমে সকল প্রকার তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, সংক্ষেপণ, একত্রীকরণ, আহরণ, উপস্থাপন ও প্রেরণের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি। এটি সাধারণত কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক, বিভিন্ন ডিভাইস, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। যে কোনো প্রযুক্তিই হলো জ্ঞান ও যন্ত্র ব্যবহারের একটা সুকৌশল। এটি আধুনিক জীবন-যাত্রায় বির্ভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে এমন একটা সংমিশ্রণ প্রক্রিয়া যার দ্বারা জীবন যাপন আগের চেয়ে অধিকতর সহজ ও আরামদায়ক হয় এবং এটি আমাদের জীবনের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ। এর মধ্যে বর্তমান যুগে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, নেটওয়ার্ক ইত্যাদি।

সাহিত্য শব্দটি এসেছে ‘সহিত’ শব্দ থেকে, যার ধাতুগত অর্থ হচ্ছে মিলন। অর্থাৎ সাহিত্য মানুষের সাথে মানুষের, মানুষের সাথে সমাজের, আত্মার সাথে নিজের, প্রকৃতির সাথে মানবসত্তার মিলন ঘটায়। ইন্দ্রিয়শক্তির মাধ্যমে জাগতিক ও মহাজাগতিক চিন্তা-চেতনা, উপলব্ধি, সৌন্দর্য ও শিল্পের লিখিত রূপই হলো সাহিত্য। এক কথায় বর্তমানে সাহিত্য হলো লিখনরূপ। যেখানে বুদ্ধিবৃত্তির একটা আঁচ থাকে। যার মধ্যে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক রয়েছে। এগুলো মানব জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিষয় এবং সামাজিক প্রতিকৃতি উপস্থাপন করে।

মূলত বলতে গেলে সাহিত্য ও বিজ্ঞান দু’টোই সৃষ্টিশীল কাজ। মানুষ তার তীক্ষè সৃজনশক্তি দিয়েই এ দুটো কাজ সুনিপুণভাবে করে থাকে। বিজ্ঞানের যে কোনো আবিস্কার যুক্তিযুক্ত পথে গিয়ে একটা নির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছতে পারে বিধায় এর সত্য প্রত্যক্ষ করা যায়। কিন্তু সাহিত্যের সত্য অনেক ক্ষেত্রেই চাক্ষুস নয়। এটি ভিন্ন ভিন্ন পাঠককে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি ও চিন্তার দিকে ধাবিত করে। আসলে আমাদের হৃদয়ের ভেতর অনেক কিছুই ঘটে, সত্য-মিথ্যার প্রভেদ, যুক্তি-তর্কের অবসানে সিদ্ধান্ত, সুন্দরের প্রতিচ্ছবি, মায়ার মোহজাল, কিন্তু কোনোটাই বিজ্ঞানাগারে প্রমাণ করা এখনো সম্ভব নয়। সাহিত্য সেই সত্য যাকে তুলে এনে বিজ্ঞানীর গবেষণাগারে প্রমাণ করা না গেলেও, হৃদয়ের গবেষণাগারে এর প্রভাব ধরা পড়ে প্রগাঢ় হয়ে এবং বহুমাত্রিকভাবে। হয়তো এসব ভেবেই জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিখ নিটশে বিজ্ঞান ও দর্শনের চেয়ে সাহিত্য ও মিথকে সত্যের অধিক নিকটবর্তী মনে করেছেন। তার কারণ মানুষ হিসেবে এই বিশ্বজগতকে একমাত্রিক দেখার প্রবণতা দূর হয়ে সেখানে বহুমাত্রিকতা আসে। ফলে আকাশ ও মাটি, নদী ও সমুদ্রের কথা বলাকেও সেখানে অস্বাভাবিক মনে হয় না। এভাবে সাহিত্যের ভেতর দিয়ে বিশ্বকে দেখার স্বাধীনভঙ্গি বহুমাত্রিক রূপ নিয়ে আসে আমাদের হৃদয়।

বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতার কারণেই আইনস্টাইন ও রবীন্দ্রনাথের মূল্যবান ঐতিহাসিক সংলাপটির অংশ এখানে আজ উল্লেখ করতে পারি। ১৯৩০ সালের ১৪ জুলাই বিজ্ঞান ও সাহিত্য নির্ভর সত্য, সুন্দর ও চেতনা নিয়ে দু’জনের মধ্যে এক তুলনামূলক আলোচনা হয়। দু’জনেই জগত বিখ্যাত। একজন বিজ্ঞানী, আরেকজন সাহিত্যিক। এই আলোচনায় সত্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বারবার সত্যকে মানবকেন্দ্রিক করে দেখতে চেয়েছেন আর আইনস্টাইন বলতে চেয়েছেন, সত্য হলো মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেন, ‘সত্যকে অবশ্যই মানব অভিক্ষতা থেকে স্বাধীন হতে হবে। আমি এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে পারব না কিন্তু এটি আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমি বিশ্বাস করি পিথাগোরাসের তত্ত্ব এমনিতেই সত্য। এতে মানব অভিজ্ঞতার কোনো দরকার নেই।’

অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘যে সত্তা বিশ্বসত্তার সাথে একীভূত, কেবল তাকেই সত্য বলা যায়। নতুবা আমাদের নিজস্ব সত্য, যা বৈজ্ঞানিক সত্য বলা হয়, যা যুক্তিচিন্তার মাধ্যমে পাওয়া যায়, তা কখনো সত্য হতে পারে না।’

এ সংলাপ থেকে বলা যায়, বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক দু’জনের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হলেও উভয়ের গন্তব্য যে একই দিকে সে বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করা যায়। একজনের কাছে বস্তুই সত্য, আরেক জনের কাছে বস্তুর অভিঘাতটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কেউই বস্তু নিরপেক্ষ নন।

সাহিত্য ও বিজ্ঞান কি পরস্পর বিরোধী? না, বরং সহায়ক। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে সাহিত্য ও বিজ্ঞান দুটি দুই মেরুর। আসলে এ দুটির মঝে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সাহিত্য মানুষকে বাস্তব-পরাবাস্তব কল্পনা করতে শিখায়; যার দরুণ মানুষ অবিশ্বাস্য নানা বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ডের ধারণা পেয়েছিল। মানুষ দেহে পাখা লাগিয়ে রূপকথায় তাকে আকাশে উড়াতে পেরেছিল বিধায়ই আজ সে সত্যি সত্যিই বিমানে চড়ে আকাশে উড়তে পারছে। সাহিত্য যদি মানুষকে আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিহীন কল্পনা করতে উদ্বুদ্ধ না করত তাহলে বিজ্ঞান সেই কল্পনাকে বাস্তবায়নের ধারাবাহিক রূপ দিতে পারত না। ফেলে দেওয়া একখণ্ড বাঁশের কোনো মূল্য নেই, কিন্তু যখন কল্পনাশক্তি দিয়ে এটির মাধ্যমে সৌন্দর্যময় একটা কিছু তৈরি করা যায় তখন সেটির মূল্য আছে। যেকোনো আবিস্কারের প্রথম শর্ত হলো বুদ্ধিদীপ্ত কল্পনাশক্তি। যেটি সাহিত্যের মধ্যে ফুটে ওঠে বারবার। আবার বিজ্ঞান যা আহরণ করে শিল্প-সাহিত্য তা প্রকাশ শেখায়। সাইন্স ফিকশন লেখকরা বিজ্ঞানকে মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন তাদের সুচারু লেখনীর মাধ্যমে।

সাহিত্য কি কোনো নির্দিষ্ট যুগের জন্য? মোটেই না, এটি সময় ও সভ্যতার সাথে চলমান। যুগের হাত ধরেই সে এগিয়ে যায়। নইলে অদ্যাবধি সে বেঁচে থাকত না। বর্তমান সময়ে সাহিত্য পাঠ কিংবা চর্চা আরো বেশি প্রয়োজন বলে উপলব্ধি করি। আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে মানুষ আরো বেশি হিংস্র, অসভ্য ও অমানবিক। রাষ্ট্র তথা সমাজের দিকে তাকালেই আজকাল দেখা যায়, ছোটো-বড়ো অনেকেই বিবেক বর্জিত কাজে জড়িয়ে পড়ছে হরহামেশাই। সাহিত্য মানুষকে মানবিক ও সভ্য বানায়। ফুটিয়ে তোলে অন্তরনয়ন। আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে সাথে আধুনিক সাহিত্য চলমান। বিজ্ঞানের মতো সাহিত্যও পরিবর্তনশীল এবং অগ্রগামী। মানুষের আবেগ, বিবেক, অনুভূতি, কল্পনা এ সবই সাহিত্যের উপজীব্য। আর আকাশ-বাতাস, চন্দ্র-সূর্য, দিন-রাত, তরু-লতা, নদী-সাগরসহ সমস্ত চরাচরই এর উপকরণ। কোনো মানুষই এসবের বাইরে নয়। তাই মনুষ্যজীবন যতদিন এ ধরায় থাকবে ততদিন সাহিত্যও বেঁচে থাকবে চলমান হয়ে, শোভমান হয়ে।

জীবনের গভীর অবলোকন শেখায় সাহিত্য। আমৃত্যু একটা জীবন ধারণ করে রাখলেও সুন্দর হৃদ-বাগানের কতটা নিকটে পৌঁছতে পারি আমরা? কতটা মিষ্টি সুবাস নিতে পারি তার? আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি বলেন আর আধুনিক বিজ্ঞান বলেন এগুলো আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করে দিয়েছে, আবার মৃত্যুকেও সহজ করেছে। মনে রাখতে হবে, আনন্দময় জীবনই সার্থক জীবন। আনন্দহীন জীবন মৃত বৃক্ষের ন্যায় শুস্ক। কেবল আনন্দের অভাবে এ জগতে কত মানুষ নীরবে ধীরে ধীরে মরে গেছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। সাহিত্য সেই আনন্দময় দৃষ্টি তৈরি করে জীবনের পথে। বিজ্ঞান আপনাকে নতুন নতুন মডেলের গাড়ি দিবে, সুউচ্চ অট্টালিকা দেবে, জীবনের গতি দেবে কিন্তু সাহিত্য দেবে বাঁচার প্রশান্তি, নির্মোহ উৎসাহ, আনন্দময় রসদ, মানসিক দৃষ্টির প্রসার।

এ যুগে সাহিত্য পাঠ না করলে কি জীবন চলবে না? অবশ্যই চলবে। শুধু সাহিত্য কেন, কোনো কিছু পাঠ না করলেও জীবন থেমে থাকবে না একদিনের জন্যও। যে লোক কোনোদিন বিদ্যালয়ের মাঠে পর্যন্ত যায়নি তার জীবন কি আটকে আছে?  জীবন চলা আর আলোময়-জ্ঞানময় জীবন যাপন করা এক জিনিস নয়। জীবন একটি ভ্রমণ। এ ভ্রমণটি কতটুকু আনন্দময় ও তাৎপর্যময় হলো সেটিই বিবেচ্য বিষয়। আপনার মনোজগতে আলো জ¦লবে নাকি অন্ধকার থাকবে, সেটি আপনার হাতে বটে, কিন্তু এ কথা বলতে পারি, মনোজগতে আলো না থাকলে যাপিত জীবনের মিষ্টি স্বাদ নাও পেতে পারেন।  মানুষ তার আত্মার সাথে নিজের সম্পর্ক দৃঢ় চায়, নিজের সাথে নিজের শক্ত বাঁধন চায়, হতাশায় আত্মহনন চায় না, নিজের সাথে নিজের দূরত্ব চায় না। তাই প্রযুক্তি ব্যবহাররের মধ্য দিয়ে শুধু বাইরের জীবনটাকে সুসজ্জিত করলে হবে না ভেতরটাকেও রাঙিতে তোলতে হবে সাহিত্যের বর্ণচ্ছটায়। মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, এ বোধ থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পাশাপাশি সকল উন্নত জাতিই এখনো সাহিত্যচর্চা অব্যহত রেখেছেন এবং ভবিষতেও রাখবেন স্বমহিমায়।

মানব মন বড়ো বিচিত্র্য। আমাদের মনোজগতটা আমরা চোখে দেখি না বটে, কিন্তু এর প্রভাব উপলব্ধি করতে পারি অবিরত। মনোজগতটা খারাপ হয়ে গেলে বর্হিজগতেও প্রভাবে পড়ে চলার পথে। সাহিত্য সেই মনোজগতটাকে অনুভব করতে শেখায় পুরোপুরি। যেখানে আমাদের সত্তা, আমাদের আবেগ, বিবেক। সাহিত্য আমাদের ভাবতে শেখায় নিজেকে নিয়ে, অন্যকে নিয়ে, সমাজ-রাষ্ট্র নিয়ে, আমাদের চারপাশ ও প্রকৃতি নিয়ে। মানুষ যেহেতু ইন্দ্রীয় শক্তি নিয়ে জন্মায়, তাই মানুষ মানুষই। মানুষ রোবট নয়। যন্ত্র নয়। মন ও আত্মার সংমিশ্রণে এক অবয়ব। এই মন ও আত্মাকে কে জাগাবে? কে প্রস্ফুটিত করবে মনের বাগান? এ ভার যে সাহিত্যের ওপর। 

বিজ্ঞান যেমন বহির্জগতকে সমৃদ্ধ করেছে তেমনি যুগে যুগে সাহিত্য সমৃদ্ধ করেছে মানবের মনোজগত। সাহিত্য এক বড়ো ব্যাপার। এটি কেবল নিজের মনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সাহিত্যের বন্ধন ও সম্পর্ক  জল, স্থল, আকাশ, বাতাস, পুরো মহাবিশ্বে। সাহিত্য যেমন মানব জীবনের দর্পন তদ্রুপ এটি সমাজেরও  দর্পন। সমাজের ক্ষত চিহ্নগুলো যুগে যুগেই সাহিত্য আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে সাহিত্যের পরিবর্তন ঘটে। রামায়নের মহাভারত কিংবা আরব্য রজনীর উপন্যাসের যুগ আর সেক্সপিয়রের যুগ এক নয়। আবার রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের যুগ তাদের চেয়ে আলাদা। প্রত্যেকের  উপলব্ধি, ভাবনা, প্রতিচ্ছবি, প্রতিক্রিয়া সেই সময়ের, সেই যুগের। তাই সব যুগেই সাহিত্য প্রাসঙ্গিক। সাহিত্য যেমন কল্পনার ওপর সৃষ্টি আবার কিছু সাহিত্য অনুসন্ধানমূলক, গবেষণামূলকও। এজন্যই সাহিত্য বড়ো বিষয় এবং শক্তিশালী। এর কাছ থেকে মানুষ যুগে যুগে অনেক কিছু শিখেছে, এখনো শিখছে। এর কাছে মানব সভ্যতা ঋণী। সাহিত্য আমাদের প্রথম আক্রান্ত করে অনুভবে, পরে ব্যক্তি জীবন থেকে এ চেতনা ছড়িয়ে পড়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে।

সাহিত্য ও বিজ্ঞান দুটোই কল্পনা শক্তির ফসল। দুটোর ভেতরেই এক গভীর আবেগ থাকে প্রথমে। নইলে কোনো সৃষ্টিই তার সৃষ্টিরূপ পায় না। সাহিত্যের ছাত্রদের যেমন প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান জানা জরুরি তেমনি বিজ্ঞানের ছাত্রদেরও সাহিত্য, ইতিহাস ও রাজনীতি জানা আবশ্যক। সাহিত্য বিবেকহীনকে বিবেকবান, নির্জীবকে সজীব, আদর্শহীনকে আদর্শবান করে গড়ে তোলতে সহায়ক। এটি আত্ম-পরিচয়ের নিশানা তৈরি করে জাতি ও সংস্কৃতিকে উজ্জ্বল করে। সাহিত্যের ওপর কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিদ্বেষ থাকতে পারে। হয়তো ঐ ব্যক্তি এখনো এমন কোনো সাহিত্যের বই পাননি বা পড়েননি যা পাঠে তাকে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু কোনো জাতি বা রাষ্ট্রের বিদ্বেষ থাকতে পারে না। সাহিত্যের প্রভাব সমাজে যদি যুগে যুগে বিস্তর ভাবে না থাকত তাহলে আধুনিক বিজ্ঞান ও এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে  সাহিত্য আর থাকত না। মানবজীবনে এর প্রয়োজনীয়তাকে কোনো কালেই অস্বীকার করা যায় না বলে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় আজও। গোলাপ ছাড়াও একটি বাগান তৈরি হতে পারে, কিন্তু একটি গোলাপ বাগানের কতটা সৌন্দর্য, মনের আনন্দ ও মুগ্ধতা বৃদ্ধি করতে পারে তা কেবল একজন আদর্শ মালীই জানেন ও বোঝেন। সাহিত্য হলো সমাজ ও জীবনবাগানের সেই গোলাপ যা যুগে যুগেই প্রয়োজন।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
বন্ধ ৯ কারখানা খুলছে এস আলম গ্রুপ
মোহনগঞ্জে প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের সাথে ইউএনও’র মতবিনিময়
দীর্ঘতম সৈকতে হাজারো মানুষ দেখলো বছরের শেষ সূর্যাস্ত
যেসব দাবি জানালেন চব্বিশের বিপ্লবীরা
দাম কমল ডিজেল-কেরোসিনের
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বাণিজ্য মেলায় ই–টিকেটিং সেবা চালু
শহীদ রুবেলের নবজাতক শিশু পুত্রকে দেখতে গেলেন ইউএনও
দুই সচিব ওএসডি
ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান
ইসকনের ২০২ অ্যাকাউন্টে ২৩৬ কোটি টাকা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft