বুধবার ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
ড. আবুল হাসনাত মোহা. শামীম
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সর্বশেষ যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল (২০০১-২০০৬) সে সময়ে বর্তমান শতাব্দীর রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পূর্ণ নতুন মোড় নেয়। বলা ভাল, পাশ্চাত্য বা পুরো ওয়েষ্টক-কে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিল অর্থাৎ আমেরিকা ও বৃটেন—তাদের রাজনীতির বিশ্বমঞ্চ নতুন নতুন অভিমুখ প্রস্তুত করছিল। এখন আর এসব কথা গোপন নেই বা রাখাও সম্ভব‌ নয়। তথ্যপ্রযুক্তি, ইন্টারনেট ও স্যোশাল মিডিয়া দুনিয়াকে যেমন নিকটতর করেছে, ঠিক তেমনি দুনিয়া জুড়ে রাষ্ট্রের উপর রাষ্ট্রের প্রভাবের ধরণ ও মাত্রা ক্রমশ পাল্টে যাওয়া প্রত্যক্ষ করছে সকলে। ঠিক সিকি শতাব্দী আগের বিশ্ব রাজনীতির বাস্তবতা ও বিশ্বরাজনীতির মানচিত্র বদলে গেছে বহুলাংশে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে মিশেল ফুকুয়ামার ‘দ্য এন্ড অফ হিস্ট্রি অ্যান্ড দ্যা লাস্ট ম্যান' (The End of History and the Last Man) ব‌ইয়ের বিষয়বস্তু ইতিহাসের শেষ কথা হয়ে বদ্ধমূলভাবে আর টিকে নেই। বরং শুধু প্রতিপক্ষ আর জোটগুলো পাল্টে গেছে সময়ের আবর্তে, সব কিছুই পাল্টে যায় যেমন।

সাম্রাজ্যবাদ, নব্য উপনিশবাদ ইত্যাদি তত্ত্ব আলোচনায় না গিয়েও আমরা বিষয়ের সরলতায় দেখাতে চাইব যে, বর্তমান বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের দেশ ত্যাগ ও দেশে প্রত্যাবর্তনের মধ্যকার সময়েও এই দক্ষিণ এশিয়া তথা পৃথিবীর ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন কত দ্রুত ও বর্ণিল বেগে ধাবিত হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে পরিবর্তনের ধাক্কা কেমন ও কি কি প্রকৃতিতে বিরাজিত করেছে রাজনৈতিক সামগ্রিকতা। বর্তমান লেখার মূল আলোচনা—জনাব তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের গুরুত্বকেন্দ্রিক হলেও বিশ্বরাজনীতির প্রসঙ্গ খুব স্বাভাবিকভাবেই আসছে। শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজনীতি দিয়ে অবশ্যই সকল ঘটনা ব্যাখ্যা করা  কোনক্রমেই সম্ভব নয়।

আমরা জানি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গড়ে ওঠা নতুন বিশ্বব্যবস্থায় পাশ্চাত্যের জোট ‘ন্যাটো’র প্রতিপক্ষ 'ওয়ারশ (WARSAW) জোট' সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার সাথেই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। নতুন বিশ্বশক্তির অংশ হতে চীন প্রায় নীরবে অপেক্ষা করে এই শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত আর রাশিয়া করে সিরিয়া যুদ্ধ অবধি। যে যার জায়গা থেকে ক্ষমতা-বলয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সর্বশক্তি দিয়ে প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে এবং যাচ্ছে। অর্থনৈতিক এবং ভৌগলিক কাঠামোর চুলচেরা বিশ্লেষণ আর সামরিক কৌশলের পরিপূর্ণ মাত্রা যাচাই-বাছাইয়ে প্রত্যেকেই আজ অহর্নিশ গবেষণারত হয়ে পড়েছে।

বিএনপি যখন সর্বশেষ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে তখনই বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে যায় “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধ"। এই ‘ওয়ার অন টেরর’ কি, কেন ও কতটুকু সফল বা বিফল, সে আলোচনা এই পরিসরে করার সুযোগ নেই। কিন্তু সংক্ষেপে এটা বলাই যায়, এই বিশাল পরিকল্পনার অংশ হয়ে আফগান, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায়সহ বেশ কিছু দেশে সরকার ও রাষ্ট্রের পতন ঘটে এবং গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এর রেশ এখনও চলমান রয়েছে। এই মাস্টার প্লানের অংশ হিসেবে পরবর্তীতে গঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কোয়াড (QUAD) জোট (আমেরিকা, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া)। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধে আমেরিকার অন্যতম সহযোগী দেশ হিসাবে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কিছু সুবিধাও আদায় করে এখান থেকে।

বিশ্ববাণিজ্য ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় মার্কিন-ভারত সম্পর্ক এমন একটি অবস্থায় পৌঁছানোর কথা ছিল যেখানে উভয়েই সমৃদ্ধির উন্নত স্তরে উন্নীত হতে পারে। তবে সেই স্বপ্ন কতোটা ফলেছে! ভারতের কাছে প্রায় ২৫ বছর আগের সেই সময় এখন ভিন্নরূপে প্রতিভাত হয়েছে। যেমন হয়েছে পতিত ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাস্তবতায় 'সুপারপাওয়ার’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ভারতের অভিলাষ রয়েছে। সুহৃদ হিসেবে এদেশের তৎকালীন নেতৃত্বের সহযোগী ছিল তারা। আওয়ামী লীগের শাসনামলে পরিপূর্ণ মাত্রায় বন্ধুত্ব বজায় রেখেছে। এর মধ্য দিয়ে এদেশের জনগণের‌ও আস্থা অর্জনের চেষ্টা ছিল। তবে আওয়ামী শাসন এদেশের জনগণের ভালোবাসা পায়নি। বাকশালীয় আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনমানসে আসন পাওয়া ক্রমশ অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। স্বচ্ছ রাজনীতি বা জনপ্রিয়তার যাচাইয়ের মাধ্যমে অর্থাৎ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা- এককথায় অসম্ভব হয়ে উঠেছিল তাদের জন্য। দেখা যায়—রাজনীতির সংকীর্ণ কূটকৌশলের পথ অনুসরণ করে এবং অতিমাত্রায় ভ্রান্ত নীতির আবহে আওয়ামী রাজনীতি বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মাঠে সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়েছে। এদিকে দেশীয় রাজনীতিতে সেরকম পথ অনুসরণ করে আওয়ামী লীগের দোসররাও ঘৃণিত, জনবিচ্ছিন্ন ও পলাতক দলে পরিণত হয়েছে। এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং নীতি বিসর্জনজনিত ঐক্য। সামাজিক মানুষের আজ পরিচ্ছন্ন এবং দূর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশের দাবি বিশ্বজনীন।

প্রায় সতেরো বছর পরে জনাব তারেক রহমান আজ যখন দেশে ফিরছেন, তখন বিশ্ব রাজনীতি বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির চিত্রটি বিশ্লেষণ করে নেয়া উচিত। বিএনপি'র রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে সর্বশেষ সময়ে (২০০১-২০০৬) সংঘটিত সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার এবং শাস্তি বিএনপি'র হাতেই শুরু হয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক হিসেব নিকেশ ছিলো অন্য—পরবর্তী সময়ে তাদের লক্ষ্য ও বিন্যাসে সন্ত্রাসী বা অপরাধী না হয়ে—হয়ে উঠে বিএনপি’র নেতা-কর্মী অর্থাৎ বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা টার্গেটে পড়ে যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ নির্বাচনহীন নতুন এক রাষ্ট্রব্যবস্থার দুঃসহ অভিজ্ঞতা লাভ করে। ‘বাকশাল-২' কায়েমের মধ্য দিয়ে যতটা পারা যায় মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে বিএনপি'র নেতৃত্বকে কালিমালিপ্ত করা হয়। যার সবকিছুই আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি'কে নেতৃত্বশূন্য করার বাকশালী চক্রান্ত‌ও আজ সুদূর অতীত মাত্র। জনাব তারেক রহমানের বাংলাদেশ-প্রত্যার্পন ঘিরে আজ এই দেশে রাজনীতি আবর্তিত। সবচেয়ে আকাঙ্খিত ও স্বাভাবিক বিষয় বর্তমানে নতুন এক বাংলাদেশ এবং পূনর্গঠনের মহানায়ক তারেক রহমান। যদিও তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে বাধাগ্রস্থ করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানান চক্রান্ত‌ও কিন্তু থেমে নেই।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন হয়েছে তা হলো সংকীর্ণ মানসিকতার প্রভাব বলয় থেকে বাংলাদেশসহ মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলংকা সহ অন্য সকল দেশের মুক্তির যাত্রা। ন্যাটোর প্রতিপক্ষ বা জোট হিসেবে 'ওয়ারশ' জোট‌ও কর্মক্ষম নেই। তবে এশিয়া প্যাসিফিক ও ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের স্ট্রাটেজিক জোট 'কোয়াড' এর বিপরীতে ব্রিকস (BRICS)' জোট এখন সক্রিয় ও কার্যকর। কৌশলগত যে কাজে ভারতকে আমেরিকার দরকার ছিল—চীনের বাণিজ্য রুট মালাস্কা প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ, কিন্তু চীন এসবের একাধিক বিকল্প রুট‌ও বের করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তান হতে রিক্তহস্তে আমেরিকার বিদায়, ইউক্রেনের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ, সিরিয়া ফ্রন্টে ফিলিস্তিন-ইজরায়েল যুদ্ধ ও সর্বশেষ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিয়েছে বহু অংশে।

গত ফ্যাসিস্ট আমলে বিএনপি'র হাজার হাজার নেতী-কর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, লক্ষ লক্ষ হামলা-মামলা মোকাবেলা করেছেন। এবং দলের মধ্যে প্রকাশ্য বিভাজন না হলেও স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ ফ্যাসিজম বিএনপি'র দেশীয় নেতৃত্বের একটা অংশকে পুরনো রাজনীতির খোলসে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। জনাব তারেক রহমান এমন সময় দেশে ফিরছেন যখন বিএনপি দলীয়ভাবে নতুন বাস্তবতায়। তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন তাই কেবল দেশে আসা নয়, বিএনপি’র আগামী দিনের রাজনীতি উন্নত মঞ্চে পরিচ্ছন্ন এবং মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রায় জনবান্ধব নীতি অনুসরণ করছে। তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় ও কোটি কোটি নতুন ভোটারদের আশা আকাঙ্খা পূরণের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের শুরুর যাত্রা শুরু হয়েছে। আর এই নতুন বিন্যাসে অপরিহার্য একজন নেতা—জনাব তারেক রহমান মহান আলোকবর্তিকা হয়ে আসছেন।

পৃথিবীর পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় যখন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য লুট, টাকা পাচার বা মুদ্রাস্ফীতির কারণে প্রায় ভঙ্গুর, দেশের প্রতিটি সেক্টর‌ই যখন রুগ্ন—সেই মুহূর্তে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, নতুন শিল্প সম্ভাবনা, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা প্রতিটি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কঠিন চ্যালেঞ্জটি জনাব তারেক রহমানকে মোকাবেলা করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। মানসিক দৃঢ়তা, রাজনৈতিক বিজ্ঞতা, সততা এবং পরিশ্রমের ভিতর দিয়ে—ভেঙ্গে পড়া এক বাংলাদেশকে আবার দেশ হিসেবে জাগিয়ে তুলবেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের এ জয়গানে কেন্দ্র থেকে প্রান্তের প্রতিটি মানুষ অনুপ্রাণিত হয়ে সকলে মিলে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে গৃহযুদ্ধ ও দূর্ভিক্ষের ফলাফল হিসেবে ১৯৭৫ সালের অগাষ্ট ও নভেম্বরে দু’টি বিপ্লব সংঘটিত হয়। এর মাঝে নভেম্বরে কয়েকদিনের ব্যবধানে আরো দু’টি বিপ্লব হয়। অবশেষে ৭ই নভেম্বরের বিপ্লবে রাষ্ট্রক্ষমতা দেয়া হয় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে। তখন তিনি তাঁর মেধা, দক্ষতা ও অক্লান্ত চেষ্টায় বাংলাদেশকে যেভাবে ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা করেছেন, উন্নয়ন ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন, অর্ধ শতাব্দী পরে আবারও বাংলাদেশ ও জনাব তারেক রহমানের সামনে তেমনি এক প্রেক্ষিত তৈরি হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষক ও মাঠে সরাসরি যুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়ার সুবাদে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কোনো আপস করেননি। তাঁর সুচিন্তিত ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এনেছিলো দৃঢ়-আত্মবিশ্বাস। একটা জাতির এগিয়ে যাবার জন্য সেই আত্মবিশ্বাস‌ই সবচেয়ে প্রধান অবলম্বন। জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বেও বিএনপি আজ তৃণমূল পর্যন্ত জনআস্থা সৃষ্টি ও আত্মবিশ্বাসী করবে। বেগম খালেদা জিয়ার মতো সর্বশ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদের উত্তরাধিকারের এই প্রত্যাবর্তন আজ শুধুই প্রত্যাবর্তন নয় বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক গুরুত্বাবাহী। দেশ নতুন জাগরণের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে।

দীর্ঘ ফ্যাসিজমের চরম নিকৃষ্টকালে আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জালিমের কারাগারে বন্দি ছিলেন; জনাব তারেক রহমান ছিলেন নির্বাসিত। যেকোনো রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে এই অবস্থায় কয়েকটি সমস্যা তৈরি হয়। একটি হলো দলীয় আদর্শের সংকোচন! বাংলাদেশে যে কারণে মানুষ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে ভালোবেসে 'শহীদ' সম্বোধন করে, যে কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী এবং পুরো জাতির অভিভাবকরূপে শ্রদ্ধেয়া হন, তা তৈরি হয়েছে তাদের দলীয় আদর্শকে সমুন্নত রেখে দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ ও উৎসর্গের মাধ্যমে। যেকোনো রাষ্ট্রনায়কের জন্যই তা অত্যন্ত গৌরবজনক।

জনাব তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক গুরুত্ব হলো, মানুষ দীর্ঘদিন পরে বিএনপি'র (আইডিওলজিকাল ফ্রেমওয়ার্ক) আদর্শগত কাঠামো এবং সামাজিক বিন্যাসের সাথে সুসংঘবন্ধ অবয়বে জীবনের নিত্যপ্রয়োজনে কাছাকাছি পাবে। দেশ গড়ার নতুন কাজে নিবেদিত হতে লক্ষপ্রাণ তরুণ-যুবক, মা-বোন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। শুধুমাত্র নির্দেশনা চাই প্রিয় নেতার। একজন অভিভাবক, একজন দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের হাত ধরে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক অনেক স্বপ্ন তাদের। তাঁর দেয়া ৩১ দফা বাস্তবায়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করতে চায়। বাংলাদেশকে সত্যিকারের মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ায় পাশাপাশি হাঁটতে চায় সকলে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুনর্নির্মাণের অংশীদার হতে চায়।

বিএনপি সর্বশেষ (২০০১-২০০৬) যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল, সেই সময়ের সাথে বর্তমানের অনেক পার্থক্য ঘটে গেছে। এই পরিবর্তন কেবল আন্তর্জাতিক বা দেশীয় রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। তথ্য-প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, স্যোশাল মিডিয়া, আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেনস ইত্যাদি গোটা দুনিয়ার মানুষের চাহিদা, রুচি ও আকাঙ্খার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। জনাব তারেক রহমান দীর্ঘ প্রবাস জীবনে স্বচক্ষে তা নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে অনুধাবন করেছেন। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনীতির বিন্যাসের মত করেই দেশের সামাজিক স্তরের গড়ন, আপন রাজনীতির মধ্যে ধারণ করতে পারে যে রাজনৈতিক দল, দীর্ঘমেয়াদে মানুষের কাছে সেই রাজনৈতিক দল বা নেতারাই স্বমহিমায় মূল্যায়িত হন এবং জনপ্রিয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

অত্যাচার, খুনসহ শত অপরাধে দাগি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ছিল অন্যের সেবাদাসী। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার বিদেশী প্রভুদের দয়ায় যেহেতু পুতুলের মতো পরিচালিত হতো, তাই তারা শুধু সেটুকুই করেছে, যা তাদের প্রভুরা‌ চেয়েছে। দুনিয়া বদলে যাওয়ার দিকে তাদের বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ ছিল না। সমানতালে যে নিজ শিক্ষা, সংস্কৃতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়, সকল কিছুই যে  তালে তাল মিলিয়ে বিশ্বমানে চলতে হয়—এসব‌ই ছিল অবহেলিত। উন্নয়ন, প্রগতি ইত্যাদি ব্যাপার বোঝার চেষ্টাও করেনি, এমনকি তেমন মেধাও ছিলো না। চুরি ও প্রভু তোষণ বাদে তাদের শাসনামলের উল্লেখযোগ্য কোন কীর্তি নেই। শেখ মুজিবের শাসনামলকেও ভয়াবহ, কুৎসিত ও বিশ্রী সব শব্দেই মূল্যায়ন করেছিলেন তাঁদেরই বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড. আহমদ শরীফ তাঁর স্মৃতিকথা ‘ভাবনার বুদবুদ’ বইয়ে।

জনাব তারেক রহমান সেই অর্থে প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ, তথ্য প্রযুক্তির নতুন সম্ভাবনা, নতুন দিগন্ত, নতুন রাষ্ট্রনীতি, জনকল্যাণ নীতি, দলীয় শৃঙ্খলা, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক উৎসবের সামাজিক পরিকাঠামো বিন্যাস, পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহযোগিতা ইত্যাদির উন্নত মনোভাব তৈরিতে মনোযোগী থাকবেন। দেশের মানুষের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আগামীর কান্ডারি হয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে তাঁকে। দেশের প্রতিটি ইঞ্চির সার্বভৌমত্বের আত্মবিশ্বাস দেশের মানুষের মনে প্রোথিত করার জন্যই, জনসংখ্যামাফিক দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় সর্বোচ্চ শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন, বাহিনীসমূহের মর্যাদা, আধুনিকরণ, আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ এসবই আগামীর বাংলাদেশে সাজাবেন তিনি—ভালবাসা, শ্রদ্ধা এবং বিনয়ের আদলে।

এদেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, কিন্তু কারো বশ্যতা শিকার এদেশের মানুষের মাঝে নেই। ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দিন বারনি এই দেশকেই বলেছিলেন "বুলগাকপুর" (বিদ্রোহের নগরী)। বাংলাদেশের ইতিহাস প্রথম নিজ হাতে লিখতে চেয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট  জিয়াউর রহমান। তাঁর পরামর্শদাতারা যেমন অসম্ভব পণ্ডিত ও মেধাবী ছিলেন, তিনি নিজেও ছিলেন পরিশ্রমী ও দেশপ্রেমী। একজন ক্যারিয়ার আর্মি অফিসার হয়ে তিনি নিজ আগ্রহে রাজনীতি শিখেছেন।

রাজপথে রাজনীতি শিখেছেন, বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দেশের সীমানা নির্বাচন করেছিলেন। এক কথায় তিনি বিএনপি'র রাজনীতির আলপনা এঁকেছেন, “ওদের হাতে গোলামীর জিঞ্জির, আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা”—এমন উচ্চারণ যে কেউ পারেন না! দেশপ্রেম, সাহস, বিজ্ঞতা আর জনগণের ভালোবাসার দাবিতে তৈরি হয় এমন বোধ। এই বিশ্বাসের পেছনে রয়েছে গণতন্ত্রের ক্ষমতার উপর আস্থা রাখার দৃঢ়তা। বিশ্বাস আর দেশপ্রেম মিলে জনতার কাতারে যেতে পারে যেসব নেতৃত্ব—শুধু তারাই বহন করেন সার্বভৌমত্বের পতাকা।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়া-র এই পতাকা উত্তরাধিকার হিসেবে জনাব তারেক রহমানের হাতে। দেশপ্রেম দিয়ে মানবতার বাংলাদেশ গড়ায় এই পতাকাই প্রত্যয়। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন তাই তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় বর্ণিল হয়ে উঠবে, দেশের সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক বলয়ে শ্রদ্ধেয় হবে। রাজনৈতিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবেন তিনি।

লেখক : অধ্যাপক, গবেষক ও ট্রেজারার বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিরেক্টর (ফিন্যান্স), জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন।

আজকালের খবর/ এমকে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
দেশে সোনার দাম বাড়ার রেকর্ড
দিপু দাসের পরিবারকে আর্থিক ও কল্যাণমূলক সহায়তা দেওয়া হবে : শিক্ষা উপদেষ্টা
তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা
১শ ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে মোহনগঞ্জ কৃষি প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউট
উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন হচ্ছে এমন তথ্য জানা নেই : মন্ত্রিপরিষদ সচিব
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
হাতিয়ায় চর দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ-গুলি, নিহত ৫
শেখ হাসিনা-সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিচার শুরু
নিখোঁজের ২৩ দিনেও সন্ধান মিলেনি চান্দিনার রাসেল মুন্সির
হাসনাত আব্দুল্লাহর পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেন শহিদ পরিবার
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়লে ব্যবস্থা নেবে বিএনপি
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft