
গাজীপুর মহানগরীর দেশীপাড়া এলাকায় মসজিদের চলাচলের রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ বিরোধে শুধু জমি সংক্রান্ত সমস্যা নয়, স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকার অন্তত ২০টিরও বেশি পরিবার প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় বাসিন্দা মো. কাজী শাহাদাৎ হোসেন রিন্টু, মো. মোসলেম উদ্দিন ও মৃত শাহাবুদ্দিনের ছেলে আহমদ আলীসহ কয়েকজনের মধ্যে বিরোধ চলছে।
স্থানীয়দের দাবি, এই রাস্তা দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে নামাজ আদায় করেন, শিশু-কিশোররা মক্তবে আরবি শিক্ষা নিতে যায় এবং সামাজিক বিভিন্ন প্রয়োজনে রাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম।
গত ২০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষ একটি আপোষনামায় স্বাক্ষর করেন। তাতে বলা হয়- পূর্ব পাশে ৮ ফুট, পশ্চিম পাশে ৫ ফুট এবং মাহফুজের বাড়ি থেকে উত্তর দিকে ৭ ফুট ৮ ইঞ্চি প্রশস্ত রাস্তা তৈরির জন্য জমি ছেড়ে দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে কোনো পক্ষ যেন এই রাস্তায় স্থাপনা নির্মাণ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে শর্তও উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই আপোষনামা কার্যকর হয়নি, বরং রিন্টু মিয়া এবং অন্যপক্ষ নিজেদের দাবি নিয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন।
স্থানীয় জোতদার জানান, তিনি নিজস্ব সম্পত্তি থেকে প্রায় ১০ ফুট প্রশস্ত ও ১৫০ ফুট দীর্ঘ রাস্তার জমি দিয়েছেন। অথচ বিরোধী পক্ষগুলো মসজিদের রাস্তার জন্য জমি ছাড়তে রাজি নন।
অভিযোগ রয়েছে, রিন্টু মিয়া রাস্তার জন্য জমি না ছেড়েই নিজের সীমানায় বাউন্ডারি নির্মাণ করছেন। এতে স্থানীয়রা বাধা দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এদিকে রিন্টু দাবি করেন, তিনি তার সীমানা থেকে তিন ফুট ছেড়ে দেয়াল তুলছেন। অপরদিকে মোসলেম উদ্দিন দাবি করেন, রাস্তার জমি একাই তিনিই দিয়েছেন।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাজী সাহাদাৎ হোসেন রিন্টু দেশীপাড়া মৌজার খতিয়ানভুক্ত (১০৭) সিএস ও এসএ দাগ নং ২৭০, ২৬৬ এবং আরএস দাগ নং ৪০১, ৪০৫, ৪০৭ ও ৪০৯-এর ওপর গাজীপুর জেলা আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করান। কিন্তু, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তিনি নিজেই ওই বিতর্কিত জমিতে কাজ করছেন এবং প্রতিবেশী আহমদ আলীসহ অন্যদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছেন।
এদিকে কাজী সাহাদৎ হোসেন রিন্টু সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা।
অভিযোগের বিষয়ে আহমদ আলী জানান, তার পরিবারকে মিথ্যা মামলা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি সেনাবাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তাদের আতঙ্কিত করার ঘটনাও ঘটেছে।
গাজীপুর সদর মেট্রো থানার পরিদর্শক এসআই জাবেদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা আছে। স্থানীয়ভাবে আপোষ-মীমাংসা হয়েছে। তবে আপোষের পরও উভয় পক্ষের মধ্যে নতুন করে বিরোধ তৈরি হচ্ছে বলে শুনেছি। আমি সরেজমিনে গিয়ে উভয়পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস ও আপোষনামা মেনে চলার জন্য অনুরোধ করেছি।
স্থানীয়দের মতে, মসজিদের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে নামাজ আদায় ও ধর্মীয় কার্যক্রমে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হবে।
মাহফুজ নামের এক বাসিন্দা জানান, তিনি নিজ উদ্যোগে রাস্তায় মাটি ফেলেছেন, বৈদ্যুতিক বাতি লাগিয়েছেন। রাস্তার জন্য জমি ছাড়তে অনীহা দেখানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, এ বিরোধ দ্রুত সমাধান না হলে এলাকাবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়বে। তারা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন-মসজিদের রাস্তা সরকারি নথিতে স্থায়ীভাবে স্বীকৃতি দিয়ে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হোক।
আজকালের খবর/ওআর