রাজধানীতে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে পরের ছয়ঘণ্টা ধরে যে টানা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ডুবেছে এই শহরের পথঘাট। অনেক সড়ক থেকেই যে পানি নামেনি বুধবার দুপুর পর্যন্তও।
বুধবার নিউ মার্টেক এলাকা, গ্রিন রোড, আজিমপুর, আরামবাগ, মালিবাগ, মৌচাক মার্কেট এলাকাসহ আরেক কয়েক জায়গায় সড়কে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। এই জলাবদ্ধতার জন্য ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে পথে বের হওয়া মানুষদের।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভারি বর্ষণ চলতে পারে আগামী চারদিন। এতে শহরের কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা বাড়ার আশঙ্কা জানিয়ে এই সমস্যা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ঢাকায় বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ২০৩ মিলিমিটিার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এরমধ্যে মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা এই সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।সকাল থেকেও রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। বেলা বাড়লে কিছুটা রোদের দেখা মিলেছে।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা বলেন, “আগামীকাল থেকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবের বৃষ্টির প্রভাব শুরু হবে। ৪ তারিখ পর্যন্ত চলবে। আগামীকাল বৃষ্টি বাড়বে, ঢাকায় ভারি বর্ষণের সতর্কতা দিচ্ছি। জলাবদ্ধতার সতর্কতা জানিয়ে দিচ্ছি, কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, জলাবদ্ধতা দূর করতে তারা প্রস্তুত আছেন।
শহর ঘুরে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টায় ডিআইটি রোডের আবুল হোটেলের সামনের সড়কে এবং পৌনে ১০টায় মালিবাগের মৌচাক মার্কেটের সামনের সড়কে পানি জমে আছে।
সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৭ নম্বর এলাকায় ধানমন্ডির রাপা প্লাজার সামনে এবং গ্রিন রোডের রাস্তায় পানি দেখা গেছে।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় আরামবাগের নটরডেম কলেজের সামনের এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। ওই সময় পর্যন্ত পানি ছিল নিউ মার্কেট এবং বকশিবাজারে শিক্ষা বোর্ডের সামনের সড়কেও।
সকাল ১০টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগের সামনের সড়কে পানি জমে থাকায় হাসাপাতালে যাওয়া আসায় সমস্যা পড়েন অনেকে।
সকালে পানি ছিল মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এলাকার সড়কেও।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিউ মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে হাঁটু সমান পানি। পানিতে কেউ হেঁটে, কেউ ভ্যান বা রিকশায় চড়ে রাস্তা পারা হচ্ছে। পানি জমেছে বিভিন্ন দোকানের ভেতরেও।
নিউ মার্কেটের একটি দোকানের কর্মী জুয়েল রানা বলেন, “এইটা তো সারা বছরের দুর্ভোগ, রাস্তা নিচু এই কারণে বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়।”
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী রোমান মিয়া বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এই সমস্যা চলছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন।
“দোকানদাররা জানে বৃষ্টি হলে দোকানের কোন পর্যন্ত পানি উঠতে পারে। সেই হিসাব করে মালমালা উঁচুতে রাখে। তারপরও অনেক সময় পানিতে মালপত্র নষ্ট হয়।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার বুধবার বেলা ১২টায় বলেন, রাতের বৃষ্টিতে ঢাকার প্রায় সব এলাকায় পানি জমেছিল। বেলা ১২টা পর্যন্ত আশিভাগ এলাকার পানি নেমে গেছে। কিছু এলাকার সড়কে এখনও পানি আছে।
“এখনও নিউ মার্কেটসহ কিছু এলাকায় পানি আছে। আমাদের কর্মীরা পানি সরাতে কাজ করছে। সকাল ৯টায় গ্রিনরোড এলাকায় কোমর সমান পানি ছিল। এখন সেখানে কোনো পানি নেই।”
তিনি বলেন, “আবহাওয়ার পূর্বাভাসের বিষয়টি জেনেছি। জলাবদ্ধতা দূর করতে আমরা কাজ করছি, প্রস্তুত আছি।”
এ বি এম সামসুল আলম বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে খাল, ড্রেন পরিষ্কারের একটা বড় কর্মসূচি চালিয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন। ফলে বেশিরভাগ সড়কে এখন আগের মত পানি জমে না।
“আমরা ধারণা ছিল খালগুলো পরিষ্কার করলে, ড্রেনগুলো পরিষ্কার করলে জলাবদ্ধতা হবে না। এ কারণে ড্রেন-খাল পরিষ্কার করেছি। এর ফল পাওয়া শুরু করেছি। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে সব সময় জলাবদ্ধতা হত, এবার হয়নি।”
তিনি বলেন, “বিমানবন্দর এলাকায় অনেকগুলো উন্নয়ন কাজ চলার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেখানে কিছু জলাধার ছিল সেগুলোও ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি যেতে পারে না।”
কমডোর এ বি এম সামসুল আলম বলেন, আগামী চার দিন ঢাকায় ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় পানি সরাতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
“আমাদের কুইক রেসপন্স টিমের লোক আছে। আমাদের পরিচ্ছন্নকর্মীরা আছেন। পাশাপাশি আমাদের প্রকৌশল বিভাগের কর্মীরাও সহায়তা করবেন। তবে জলাবদ্ধতা দীর্ঘমেয়াদে দূর করতে হলে অবশ্যই লোকজনকে সচেতন হতে হবে। তা যেখানে সেখানে ময়লা ফেললে সেগুলো ড্রেনে যায়, খালে যায়। পানি যেতে দেরি হয়।”
আজকালের খবর/ এমকে