
খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারায় ১৪৪ ধারা চলার মধ্যেই সংর্ঘষ হয়েছে। এসময় তিনজন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সেনা-পুলিশসহ আহত হয়েছেন অনেকে। সংর্ঘষের এক পর্যায়ে একটি বাজারে আগুন দেওয়া হয়েছে। রবিবার বেলা ১টায় উপজেলার ‘রামেসু বাজারে’ এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর হুশিয়ারি দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে হতাহতের ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করা হয়।
জানা যায়, গুইমারা উপজেলায় দুষ্কৃতকারীদের হামলায় তিন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর একজন মেজরসহ ১৩ জন সেনা সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) তিন পুলিশ সদস্য এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন। রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপপ্রধান তথ্য অফিসার/পরিচালক) ফয়সল হাসান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ মর্মে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অতি শিগগির তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
সবাইকে শান্ত ও সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এরই মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
অপর দিকে তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আহসান হাবিব পলাশ। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। তিনি বলেন, গুইমারায় তিনজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তাদের লাশ হাসপাতালে রয়েছে। তবে কীভাবে মারা গেছে, বিস্তারিত জানা যায়নি। তিনি আরো বলেন, তিনজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আরো তিনজন আহত হয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ সাবের রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, গুইমারা থেকে তিনজন পুরুষের লাশ এসেছে খাগড়াছড়ি জেলা হাসপাতালে। তাদের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। সোমবার সকালে ময়নাতদন্ত করা হবে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে গুইমারা থেকে আনা আহত চারজন চিকিৎসাধীন।
অন্যদিকে চলমান আন্দোলনের পেছনে একটি পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা।
রবিবার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, আগুনে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকান পুড়ে যায় এবং বাজারের পাশে থাকা বসতঘরও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ ঘটনার পর খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাজারটি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে। সেখানে আগুন দেওয়ার ভিডিও ও ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে আগুনে বাজারের দোকানপাট জ্বলতে দেখা যায়। বাজারের দোকানমালিকদের অধিকাংশ পাহাড়ি বলে জানা গেছে। এর আগে গুইমারায় ১৪৪ ধারা মধ্যেই সড়ক অবরোধ করে ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবরোধকারীদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। তখন অবরোধকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। এক পর্যায়ে সংর্ঘষের সূত্রপাত ঘটে। এলাকায় গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
এর আগে গত শনিবার থেকে গুইমারা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কায় অনিদিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইরিন আকতার ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আন্দোলনের নামে সহিংসতা তৈরি করতে সেখানে একটি পক্ষ অর্থায়ন করছে। আমি নিশ্চিত, কেউ না কেউ এদের পেছনে অর্থায়ন করছে। যারা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে তাদের বয়স অনেক কম। তাদের পক্ষে গাড়ি ভাড়া খরচ করে দীঘিনালা, পানছড়ি থেকে জেলা সদরে আসা সম্ভব নয়। একটি পক্ষ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। পাহাড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি রোধ ও পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পার্বত্য উপদেষ্টা।
সুপ্রদীপ বলেন, জেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। যদি ১৪৪ ধারা কেউ ভাঙে তাহলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে অ্যারেস্ট করতে হবে। নতুন নতুন ইস্যু তৈরি করে পাহাড়কে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলে নির্বাচন দেওয়া। কেউ যদি নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নতুন করে কোনো ইস্যু তৈরি করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এখন ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ মিছিল মিটিং করতে পারবেন না। তারা যে অবরোধ করছে সেটা অবৈধ। পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ছাড়া কারো হাতে অস্ত্র থাকবে না।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়া শেষে ফেরার পথে অষ্টম শ্রেণির এক মারমা কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনার পর দিন ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় সন্দেহভাজন যুবক শয়ন শীলকে আটক করে পুলিশ। বর্তমানে তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ‘জুম্ম ছাত্র জনতার’ ব্যানারে চলছে অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ কর্মসূচি। এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। জনগণের জান ও মালের ক্ষতি সাধনের আশঙ্কায় গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা অব্যাহত রয়েছে।