ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহিল আমান আযমীর লেখা ‘বিভীষিকাময় আয়নাঘর: ফ্যাসিবাদের গোপন কারাগারে ২৯০৮ দিন’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বইটি প্রকাশ করেছে মহানগর পাবলিকেশন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আয়নাঘরে দীর্ঘ আট বছর বন্দি জীবন কাটান আমান আযমী। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে তিনি।
বইটির প্রকাশনা উৎসবে দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক আদর্শ থেকে বিচ্যুতি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকেই আয়নাঘরের মতো ভয়াবহ টর্চার সেল গড়ে উঠেছে।
মাহমুদুর রহমান আরো বলেন, হাসিনা সরকার যে ধরনের জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে তা সম্ভব হয়েছে এই আদর্শচ্যুতির ফলেই।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর জেনারেল মুজিবের ক্যু করার ব্যর্থ চেষ্টা ও দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার দেশ পত্রিকা জাতির সামনে তুলে ধরেছে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীতে কী এমন ঘটেছিল যে এই সময়ে এতো সংখ্যক বিকৃত মানসিকতার অফিসার তৈরি হলো? এই দায় শুধু রাজনীতিবিদদের নয়, সেনাবাহিনী নিজেও দায় এড়াতে পারে না। সেখানে দেশপ্রেমিক আদর্শের ভয়াবহ অবক্ষয় হয়েছে। না হলে মুজিবের মতো লোক সেনাবাহিনীতে জায়গা পেতো না। তিনি বলেন, ভারতীয় সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বইয়ে লিখা আছে কীভাবে এক-এগারোতে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে ভারত ষড়যন্ত্র করেছিল। ক্ষমতায় আসার পর ভারতের একজন জেনারেল বলেছিÑ‘বাংলাদেশকে আর কোনোদিন ভারতীয় রাডারের বাইরে যেতে দেওয়া হবে না’। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে হাজারো তরুণের আত্মত্যাগে আমরা সেই রাডারের বাইরে আসতে পেরেছি। আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন ঘটাতে পেরেছি।
কারাগারে নির্যাতনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাকে র্যাবের আয়নাঘরে বন্দি করে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছিল। ভাবা যায়, সেনাবাহিনীর ভেতর আয়নাঘরের মতো জায়গা কীভাবে গড়ে উঠলো? কারা তৈরি করেছিল এই টর্চার সেল?
দেশবাসীকে সতর্ক করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের কলাকৌশল যদি আমরা বুঝতে ভুল করি, তাহলে দেশ আবারও সংকটের মুখে পড়বে।
তিনি জানান, এক-এগারোর সময় থেকেই তিনি ফখরুদ্দিন-মঈন সরকারের বিরুদ্ধে লিখতে শুরু করেন এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেও লিখেছেন। এর জন্য আমাকে যে নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তা আপনারা জানেন। আমাকে নির্বাসনে যেতে হয়েছিল, কিন্তু যখন ফিরে এলাম তখন এক নতুন বাংলাদেশ দেখলাম- যেখানে তরুণদের মধ্যে দেশপ্রেম এবং ঈমানের কোনো ঘাটতি নেই।
তিনি বলেন, এই প্রজন্মের ঈমান ও দেশপ্রেম আমাদের আশা জোগায়-আমরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারবো।
বইটির প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান বলেন, বইটি দেখে মনে হয়েছে, লেখক কোনো পক্ষকে বাঁচাতে চাননি, কোনো সত্য গোপন করেননি। আমি পুরো বইটি পড়ার অপেক্ষায় আছি।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সভাপতি মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
আজকালের খবর/আরইউ