পরিচয়
মা পাখি পোষেন; পোষেন আপসও
পোষা পাখির ডানা থাকে না— তারও নেই
সংসারে ঢুকে গেছেন ওড়ার আগেই
সংসার বলতে তিনি ছবি আঁকা বোঝেন
যেখানে শুধু রঙের খেলা।
একবার মাকে জিজ্ঞেস করেছি—
মা, সংসার বলতে কী বোঝেন?
উত্তরে তিনি বলেন—
এটা অদৃশ্য একটা স্বপ্নের মায়াঘর।
যে ঘরে ঢুকতে নানান হিসেব কষতে হয়
অসংখ্য দরজা দিয়ে প্রবেশের আমন্ত্রণ থাকলেও
বেরোনোর কোনো দরজা থাকে না।
কথাগুলো শুনে বলেছিলাম—
মা এটা তো গোরস্তান!
মা তখন ঈশ্বরকে চেনাতে—
তার আঁকা ছবি, আমাকে দেখতে বলেন।
অন্ধ প্রেম
মা বুকের বামে ছবি আঁকেন
আঁকাআঁকির হাত ভালো জেনেই
একদিন একদল বাঘ উঠানে উপস্থিত।
মা তাদেরও ছবি আঁকেন— কী অদ্ভুত সুন্দর!
মানচিত্রের মতো ঢেউ খেলানো ডোরাকাটা
শুধু নেই কোনো হিংস্রতা।
আমি মায়ের কাছে আবদার করি—
আমার ছবি আঁকতে—
এক জোড়া ডানাও আঁকতে।
আকাশে উড়তে না পারলেও—
অন্তত এক জোড়া ডানা থাকুক।
মা বললেন—আমি সন্তানের ছবি আঁকি না
তার ডানা হোক তাও চাই না!
সে থাকুক আমার বুকে।
বিদ্যাশ্রমের ইতিহাস
মা নাকি ঘন ঘন স্বপ্ন—দুঃস্বপ্ন দেখেন
আমি ডুবে মরি হাঁটু জলে, উঠান পুকুরে
তাই মা পুকুরজলে দুধ দিচ্ছেন—বাবা চিনি
বাড়িতে মিলাদ হচ্ছে—হুজুরের হাসিভরা মুখ
স্বজন আর কাঙালের পেটভরা সুখ
কেউ কেউ আবার খানার অতৃপ্তি নিয়ে
কটুবাক্য ছুড়ছে আড়ালে-আবডালে
এসব দেখে আমি ও আমার লাশ
বিমূর্ত বিস্ময় নিয়ে উঠানে বসে কাঁদি...
মা জানেন না—বিদ্যাশ্রমের ইতিহাস,
অথচ মা ও বাবা প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখেন।
মানুষ একটা সংখ্যামাত্র
শূন্য এমন একটি সংখ্যা—
যার পদতলে কপাল ঠুকতে বারবার ফিরে আসি
কপালে দাগ পড়েছে। মনেও রাগ জমেছে—
তাতে কী? রাগ তো আর পিরামিড নয়;
নয় আসমানি অদৃশ্য কোনো আদেশ-নিষেধ!
এ কারণেই মানুষ পুড়ে ছাই হয়
মানুষের চোখের জলের সাথে
আকাশের চোখের জলের মিলন ঘটে—
আর আমরাও দেখে যাই শূন্যের কারিশমা।
মানুষ একটি সংখ্যামাত্র—শুধু শূন্য!
যা দেখতে দেখতে নাই হয়ে যায়
পড়ে থাকে অপার শূন্যতা, শুধু শূন্য।
আজকালের খবর/আরইউ