পাশাপাশি দুটি বালিশে মাথা রেখেও বুকের মধ্যে হাজার মাইলের দূরত্ব নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সাগ্নিক আর সেমন্তী। একদম নাভির কাছ থেকে বৃহত্তর একটি নিশ্বাস যেন দলা পাকিয়ে ফুসফুস ভেদ করে হু হু করে বেরিয়ে গেলো।তেরো বছরের সংসার, কলেজ শিক্ষক সাগ্নিক আর ব্যাংক কর্মকর্তা সেমন্তী। পেশাগত জীবনে দুটি ভিন্ন বলয়ে তাদের বিচরণ। হাউমাউ করে কান্নাকাটি করে এবং নিজের ভুল সংশোধন করে ময় মুরব্বীদের চাপে সংসার টিকিয়ে রাখার তথাকথিত সেই অবস্থানে তারা নেই।
নীতি, আদর্শ, ভালোবাসা আর বিশ্বাসে যার কাছে বিলীন হওয়া যায়, সেই তো স্বামী। চিন্তা আর আদর্শের বৈপরিত্য তাদের একটু একটু করে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিনের অভ্যাসগত কাজ এবং পেশাগত ব্যস্ততায় পেরিয়ে যাচ্ছে সময়, কেউ কাউকে বুঝে ওঠার ফুরসতটুকুও নেই। তথাকথিত শিক্ষিত ও ভদ্র সমাজ না হলে হয়ত একদিন কোন এক ঝড়ে সব লন্ড ভন্ড করে নতুন করে গুছিয়ে নিতো সবকিছু। কিন্তু এখানে হয় না, বুকের মধ্যে হাজারো কষ্ট থাকলেও কৃত্রিম হাসি দিয়ে ঢেকে দিতে হয় সবকিছু।
অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ার সময় বিয়ে হয়েছিল সেমন্তীর। ছোট বেলা থেকেই জেদী আর একরোখা মেয়েটিকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না বাবা সরওয়ার সাহেবের। একজন দায়িত্বশীল ভালো পাত্রের হাতে তুলে দিয়ে তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন।
যশোর শহরের রূপকথার মোড় সংলগ্ন একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে সাগ্নিক আর সেমন্তী। দুই বছরের নির্ঝর বাড়িটাকে যেন স্বর্গ বানিয়ে রাখে। বিশ্বস্ত কাজের মেয়েটি তার একমাত্র খেলার সাথী।
স্বাবলম্বী সেমন্তী অফিসে বসেই জীবনের স্বার্থকতা খোজে, ব্যাংক জব, প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ কাজ আর ব্যক্তিত্বে স্বতন্ত্র। এখানে সবাই কলিগ, কেউ বন্ধু নয়। এখানে সবাই একে অপরের দুর্বল জায়গা গুলোকে শকুনের মত খেয়াল করে। তবুও অরুনিমা ছিল, যার কাছে শেয়ার করতে পারতো সব কিছু। অরুনিমা ট্রান্সফার হয়েছে অন্য শাখায়। শনিবারের এক উইকেন্ডে তাদের দেখা হয়, কথা হয় অনেকক্ষণ...
: অরুনিমা তোমার বর এখন কি করে?
: আগে যা করতো এখনও তাই করে।
: রাজনীতি?
: হ্যা, রাজনীতি, মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে চেকের পাতায় সই করে দিতে হয়, টান পড়লে পার্টস খুলেও দিতে হয়।
: ডিভোর্স দিচ্ছ না কেন?
: অনেকবার ভেবেছি কিন্তু পারিনি। বাচ্চাদের কথা ভেবে সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছি, যতই চাকরী করি না কেন, দিন শেষে তাদের একটা পরিচয় আর আমার একটা আশ্রয় তো দরকার। তোমার কি খবর সেমন্তী?
: এইতো ভালই আছি, চলছে- আজ উঠিরে আরেকদিন কথা হবে। অরুনিমার চোখ ফাকি দিতে পারেনি সে। অরুনিমাও বেশি কিছু বুঝে উঠতে চায়নি, নিজেকে আড়াল করার সুযোগটুকু তাকে দিয়েছিল, আবার দেখা হবে, নুব...
সারা জীবন দুটি ভিনগ্রহের মানুষ একই ছাদের নিচে কিভাবে থাকবে, এমনি হাজারো প্রশ্ন মাথায় নিয়ে রিকশায় চড়ে বসলো সেমন্তী।
আপু কোথায় যাবেন?
দড়াটানা মূর্তির মোড়।
রিকশা ঘুরিয়ে অল্প বয়সী ছেলেটা এগিয়ে গেলো সামনের দিকে। যশোরও দিন দিন ব্যাপক জনবহুল হয়ে উঠেছে। দড়াটানা এলাকায় নদীর গা ঘেষে গড়ে ওঠা অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো এখন আর নেই, বেশ বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার মত একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
অন্যমনস্ক সেমন্তী হতচকিত হয়ে বললো- এই তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেন?
আপু, আপনি তো দড়াটানার কথাই বললেন।
না, আমি তোমাকে রূপকথার মোড়ে যেতে বলেছি।
আপু আপনার ভুল হচ্ছে...
থামো, এত কথা বলো কেন? হতবাক হয়ে গেলো ছেলেটি। হন্ত দন্ত হয়ে নেমে পড়লো সেমন্তী,
এই নাও টাকাটা নাও, যাও এখান থেকে...
মনে পড়লো সেমন্তীর, মনে মনে বার কয়েক সরি বললো ছেলেটাকে। আগেও একবার এমন হয়েছিল, কিন্তু কেন?
অনেক আগের কথা, এই দড়াটানার পাশেই ছিলো বাংলাদেশ লাইব্রেরি। এখানেই প্রথম পরিচয় হয়েছিল সাগ্নিকের সাথে।
সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন কিনতে এসেছিলো সেমন্তী। বইটি অর্ডার করতেই দেখে পাশে দাড়িয়ে থাকা এক ভদ্রলোক বইটি নাড়াচাড়া করছে। দোকানী দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই সাগ্নিক বইটি বাড়িয়ে দিল তার দিকে।
উজ্জল শ্যামলা পরিপাটি লোকটির চোখে চোখ পড়তেই এক মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেল তার ভিতর। বইটা নিতে গিয়ে তার হাতের ছোয়াও লেগেছিল সেদিন।
আপনি সাত কাহন পড়েন?
হ্যা, প্রথম খণ্ড শেষ করেছি।
দর্শনের ছাত্র হয়েও সাহিত্যের প্রতি তার নিবিড় ভালোবাসা। অবাক হয়নি সেমন্তী, টাকা মিটিয়ে বইটি নিয়ে সেদিন চলে গিয়েছিল সে। না, পরিচয় জানা হয়নি, ফোন নম্বর নেয়ারতো প্রশ্নই ওঠে না, সামান্য পরিচয়ে হ্যাংলার মতো এগুলো চাওয়া যায় নাকি? ধ্যাৎ, কি হচ্ছে এসব...
তবে সেদিন অবাক হয়েছিল, যেদিন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে প্রথম পরীক্ষা ছিল।
সিটি কলেজে সিট পড়েছিল ওর। বেশ আগেই বাসা থেকে বের হয়েছিল সে, কিন্তু যানজটের কারণে কয়েক মিনিট লেট হয়ে যায় তার।
নোটিশ বোর্ডে রোল নং খুজে নির্দিষ্ট রুমের দরজায় দাড়িয়ে বললো May I come in sir?
Yes, come in- বলেই যখন দরজার দিকে তাকালো সাগ্নিক তখন যেন আকাশ থেকে পড়লো সেমন্তী, তার শরীর হিম হয়ে আসছিলো। নিজেকে সামলে নিয়ে পরীক্ষায় বসলো সেমন্তী। যখন তখন যাকে তাকে দেখে প্রেমে পড়ার বয়সটা পার করে এসেছে সে। তার পর থেকেই পরিচয়, ভালোলাগা, ভালোবাসা এবং চূড়ান্ত পরিণয়।
কিন্তু এখন? একই সৌরমন্ডলে দুইটা পৃথিবী আর একটা চাঁদ। কিন্তু চাঁদটা কাকে প্রদক্ষিণ করে? দুটো পৃথিবীকেই সে বাংলা ৪ সংখ্যার গঠনের মতো প্রদক্ষিণ করে চলেছে।
এই খালি যাবে? বেল বাজিয়ে সামনে এসে দাড়ালো রিকশাটি।
আফা কনে যাবেন?
রূপকথার মোড়, এম এম কলেজ। ওঠেন আফা।
রিকশায় চেপে বসলো সেমন্তী। ভাড়া মিটিয়ে কিছক্ষণ থামলো সে। না বাসায় ঢুকতে ইচ্ছে করছে না তার, বোর লাগছে।
ভাবলো পাশের বাড়ির দুই তলার ভাবি জান মন এর মায়ের সাথে একটু গল্প করে আসি, ভারি পজিটিভ তিনি। ব্যবসায়ী হাসব্যান্ড, একজন পরিশ্রমী ভালো মানুষ।
মাম মামকে না পেয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছে নির্ঝর। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। দরকারী কাজে বাবাও বাইরে। হঠাৎ করে কলিংবেল বেজে উঠলো। শিলা দরজা খুললো, কে? নাহ্ কেউ নেই তো। দরজা বন্ধ করে দিল সে। ফিরে আসতে না আসতে আবার কলিংবেল বাজলো। আবার দরজা খুললো সে, কিন্তু কাউকে দেখা গেলো না। দরজা বন্ধ করে দিলো কিন্তু একটু পরে আবার বাজলো। না খুলেই -কে? কে বলছেন? না, কেউ সাড়া দেয় না, তবে কি ভূত? জানালা দিয়ে দুর থেকে খিল খিল হাসির শব্দ ভেসে আসে। ও আরো ভয় পেয়ে যায়। বুকে একটু থুথু ছিটিয়ে নেয়। বারো তেরো বছরের মেয়ে শিলা। বাড়িতে সৎ মা, অভাবের সংসার। সাগ্নিক এর গ্রামের দিককার এক প্রতিবেশির মেয়ে। বাড়ন্ত শরীর, ভালো খাওয়া পরা পেয়ে মেয়েটি একটু গায় গতরে হয়ে উঠেছে। ও ভয়ে কাপছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর আবার কলিংবেল বাজলো, কিন্তু উঠলো না শিলা, আবার বাজলো, তবুও উঠলোনা। যত বাজছে ও ততো ভয় পাচ্ছে। আবার বাজলো, আবার তবুও খুললো না।
সন্দেহ বাড়ছে সেমন্তীর। পত্র পত্রিকায় কত রকম খবর চোখে পড়ে, ভালো মানুষীর আড়ালে কতজন কত কি করে। সাগ্নিকেরও বাসায় থাকার কথা এই সময়। তবে কি... কি সব যা তা ভাবছি। শিলা, এই শিলা দরজা খোল। শিলা ভেতর থেকে ডাক শুনে একটু সাহস পেলো। কাঁপতে কাঁপতে যেয়ে দরজা খুলেই হাউ মাউ করে কাদতে কাদতে সেমন্তীকে জড়িয়ে ধরল।
কি হয়েছে বলবি তো!
সাগ্নিক, সাগ্নিক কোথায় তুমি সাগ্নিক? আমার নির্ঝর কই? ততক্ষণে শিলার দাঁত কপাটি লেগে গেছে। আশে পাশের সবাই ছুটে এসেছে। কে একজন ওর গালের মধ্যে পাঁচ টাকার কয়েন ঢুকিয়ে দাঁত ছাড়ালো। দাঁত খুলতে না খুলতেই ভূত ভূত বলে চিৎকার করে উঠলো শিলা। অমনি পাশের বাসার কাজের মেয়েটি খিল খিল করে হেসে উঠলো।
সেমন্তীর চোখ ঘরের চারিদিকে কি যেন খুজছে...ইতিমধ্যে জেগে উঠেছে নির্ঝর। মায়ের সান্নিধ্যে মাঝে মধ্যে ফুপিয়ে উঠছে সে। নির্ঝরকে নিয়ে সোফায় বসে আছে সেমন্তী, পাশে পায়ের কাছে কিছুটা স্বাভাবিক শিলা চুপচাপ বসে আছে, আবার কলিংবেল, ধক করে কেঁপে উঠলো শিলা।
যা খোল, অন্য মনস্ক সেমন্তী একটু চেচিয়ে উঠলো।
ঘরে প্রবেশ করতে না করতেই বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত, কোথায় ছিলে তুমি? কেন এত দেরি করলে? আমার বাচ্চাটার যদি কিছু হয়ে যেত? হকচকিয়ে গেল সাগ্নিক, কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। যে কথাই বলে না সে এত প্রশ্ন কেন করবে, something wrong? কথা বাড়ালোনা, শুধু বলল, আমাকে বলবেতো কি হয়েছে?
না, কিছু হয়নি। তুমি তোমার ক্লাব নিয়েই থাকো।
আহা! আমিতো ক্লাবে যাইনি, আমিতো বাড়িতে গিয়েছিলাম, বাবার সাথে দেখা করতে। হ্যা, সেতো যাবেই, তা এত ঘুরিয়ে বলার কি আছে? তোমার বখাটে ভাইটাকে বাইরে পাঠাতে যে পাঁচ সাত লাখ টাকা দিচ্ছ তা ওকি ফেরত দিতে পারবে কোনদিন?
নির্ঝরকে আস্তে আস্তে কোল থেকে নামিয়ে সাগ্নিকের মুখোমুখি হয়। বিদেশ গিয়ে কত জনতো জেলও খাটে আবার মারাও যায়...
আর সহ্য করতে পারলো না সাগ্নিক, তার পৌরুষ তাকে ধিক্কার দিচ্ছে। মুহূর্তের মধ্যে সেমন্তীর কথা শেষ হতে না হতেই ঠাটিয়ে ওর বাম গালে সজোরে এক চড় কষে দিলো...
সব নিরব, কোন টু শব্দটি কোথাও নেই। সেমন্তী এর আগে তাকে এতটা হিংস্র কোনদিন দেখেনি!! ও তার ঘরে চলে গেল, আমি দেখে নেব....
সাগ্নিক বুঝতে পারলো ভেজালটা কোথায়। বাবা এসেছিলেন কয়েকদিন আগে। ডাইনিং- এ খেতে খেতে কথাটা পেড়েছিলেন দুজনের সামনেই। সাগ্নিককে একাও বলতে পারতেন, কিন্তু সমীচীন হবে না ভেবে বৌমার সামনেই ছোট ছেলে দিপুর কানাডা যাবার বিষয়টি তুলেছিলেন এবং বড় ভাই হিসাবে তারও যে কিছু দায়িত্ব আছে এটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সেই দিন থেকেই যত সমস্যা।
উচ্চ শিক্ষিত ভদ্র পরিবার, প্রতিবেশিও আছে তেমনি। আর কথা বাড়ালোনা সাগ্নিক...
পরদিন সকালবেলা কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে গেল সেমন্তী, প্রায় বেলা ১টা বাজে তখন ফিরলো, অফিসতো আজ নেই তা কোথায় ছিলে এতক্ষণ? জানতে চাইল সাগ্নিক।
জাহান্নামে, তুমিকি কৈফিয়ত চাইছ? আমি তোমাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।
না, কৈফিয়ত চাইছি না, তোমার কাছে কৈফিয়ত চায় এমন বুকের পাটা কারো আছে নাকি? নির্ঝর কাঁদছিলো, তাকে বলতে পারিনি তুমি কোথায় আছো তাই।
আমি আলাদা বাসা নিচ্ছি,
মানে?
হ্যা, আমি আর তোমার সাথে এক ছাদের নিচে থাকবো না...
আমার ছেলেকে তুমি আমার কাছ থেকে আলাদা করতে চাইছ?
না, আমি তোমার কাছ থেকে আলাদা হতে চাইছি, আমি ডিভোর্স চাই...
তুমি কি পাগল হয়ে গেছ? তুমি জানো তুমি কি বলছ?
আর কোন কথা না বাড়িয়ে সেমন্তী বললো- আমি কালই বাসা ছাড়ছি...
ছোট্ট নির্ঝর সবকিছু না বুঝলেও এটুকু বুঝেছে যে তাকে তার পাপার কাছ থেকে আলাদা হতে হবে...
ব্যক্তিত্বের সংঘাত যেকোন সময় ঘটতেই পারে তাই বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেন নিতে হবে?
নির্ঝর এবং কাজের মেয়েটি ঘুমিয়েছে।
এদিক ওদিক পায়চারী করছে সাগ্নিক, রাত প্রায় ১২টা, ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ঘরে যাবার সময় সাগ্নিক সেমন্তীর হাত চেপে ধরলো, প্লিজ সেমন্তী এমন করো না, তুমি আমাদের অতীতটাকে এভাবে ভুলে গেলে?
ভুলতে পারলেইতো বেশী খুশি হতাম, বলে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলো সে।
I am sorry Semonty, please change your decision. I love you very much.
No, I won’t change my mind. Please leave me alone.
সেমন্তী তার ঘরে চলে গেল এবং সাগ্নিকের নাকের ডগায় যেন কটাস করে সিটকিনিটা লাগিয়ে দিলো।
মাস তিনেক হলো তারা আলাদা, জানেন না সেমন্তীর বাবাও।
একবার যদি কোন নারী ছেড়ে যেতে চায় তাকে আটকিয়ে লাভ নেই, সে যাবেই।
বাবা মা সহ অন্যসব আত্মীয় প্রতিবেশীর কাছে লুকোছাপা করেই দিন কাটছে তাদের।
ওদিকে সাগ্নিকের ছোট ভাই বিদেশ যাবার পথে মহা বিপদে, সমুদ্র পথে চোরাই ভাবে ইতালি যেতে দিন পনের না খেয়ে থেকে পরে মরনাপন্ন অবস্থায় পুলিশের হাতে এ্যারেস্ট হয়েছে, কারো মাথা ঠিক নেই।
সেমন্তীর বাবা তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তাদের আলাদা হওয়ার খবর পেয়ে স্ট্রোক করেছেন।
সাগ্নিকের কাছে ডিভোর্সের আইনী নোটিশ পাঠিয়েছে সেমন্তী।
না, সেমন্তী অন্য কোথাও প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়নি, সে যেন কোন পুরুষ মানুষকেই আর সহ্য করতে পারছে না, সাগ্নিক যখন এমন করলো তখন পৃথিবীর কোন পুরুষ মানুষই আমাকে বুঝবে না, এমনি মন্তব্য তার।
মত বদলানোর অনেক ব্যর্থ চেষ্টা করেছে সাগ্নিক কিন্তু সেমন্তী মোটেও সায় দেয়নি।
কোর্টে যাবার দিন ধার্য্য হলো সামনের সপ্তাহে রবিবার।
সবকিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল, অবচেতন মনে হাটতে হাটতে এম এম কলেজ ক্যাম্পাসের দিকে এগোতে লাগলো সাগ্নিক, বুকের মধ্য থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস স্ববেগে বেরিয়ে গেলো, মাথার উপর দিয়ে একটি কাক কা... কা... করতে করতে ওড়ে গেলো। ধপাস করে ঘাসের উপর বসে পড়লো সাগ্নিক। দু’হাত পেছনে মাটিতে সাপোর্ট দিয়ে ঘনায়মান অন্ধকারে আকাশের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইল সে।
আজকালের খবর/আরইউ