প্রকাশ: শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২, ৭:৪৭ পিএম
গোপেশচন্দ্র সূত্রধর সিলেটের একজন প্রসিদ্ধ লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও ছড়াকার। যিনি বাংলাদেশের রূপকার, বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক বঙ্গবন্ধুকে নিবেদন করে লিখেছেন ‘হাজারো ছড়ায় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে একটি গ্রন্থ। কোনো মহান ব্যক্তিকে নিয়ে এককভাবে এক হাজার ছড়া কিংবা কবিতা দিয়ে এমন কোনো গ্রন্থ রচিত হয়েছে কিনা এখন পর্যন্ত তা জানা যায়নি। ছড়াকার গোপেশচন্দ্র তার ছড়াগ্রন্থে জাতির জনকের কৃতি, খ্যাতি, মহানুভবতা, স্বদেশপ্রেম, মানবীয় গুণাবলি, আদর্শ-প্রজ্ঞা ইত্যাদি বিষয় ছড়ার ছন্দে তুলে ধরেছেন। তাতে আরো তুলে ধরেছেন- বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, জাতির জন্য তার ত্যাগ-তিতিক্ষা, তার কর্মময় জীবনের অনেক ঘটনার ইতিবৃত্ত- যা সত্যিই প্রশংসনীয়। ছড়াকারের এই গ্রন্থটি বাঙালি জাতিকে অবশ্যই উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করবে। গ্রন্থটি শিগগির প্রকাশ হতে যাচ্ছে বলে লেখক জানিয়েছেন।
গোপেশচন্দ্র অনেক গ্রন্থের প্রণেতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যানেজার। তিনি ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৩ আগস্ট সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার আসলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করে চুনারুঘাট দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসে যোগদান করেন এবং দীর্ঘ কর্মজীবন শেষ করে ২০১০ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক সিলেট অফিস থেকে অবসর গ্রহণ করেন। স্কুলজীবন থেকেই ছড়া, কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে তার লেখালেখি শুরু হয়। তিনি সমাজদর্পণসহ বিভিন্ন সংবাপত্রে লেখালেখি করে আসছেন এবং এখনো তা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বই পড়েন এবং বই সংগ্রহ করেন। বই পড়া, বই কেনা ও লেখালেখি তার নেশা। লেখালেখির সুবাদে বিভিন্ন সাহিত্য ও কবিতা গ্রন্হ সংগ্রহ করে তার মায়ের নামে ‘পুষ্প পারিবারিক গ্রন্থাগার’ প্রতিষ্ঠা করেছেন; যা ভব্যিষতে একটি সমৃদ্ব পাঠাগার হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তিনি ইতোমধ্যে চারটি পাণ্ডুলিপি তৈরী করেছেন। প্রকাশিত করেছেন ‘আমি মরিলে ঘুচিবে জন্জাল’ নামের একটি গ্রন্থ। পাশাপাশি পত্র পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সংগ্রহ করে আটটি খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখছেন নিয়মিত। তার এসব ব্যতিক্রমী সাহিত্যচর্চা তাকে সিলেট জুড়ে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। কুড়িয়েছেন সুনাম ও সম্মান, পেয়েছেন একাধিক সম্মাননা।
গোপেশচন্দ্র সূত্রধরের মাতা পুষ্প রাণী সূত্রধরকে ২০১০ সালের ৮ আগষ্ট সিলেট মহালয়া উদযাপন পরিষদ রত্ন-গর্ভা সম্মাননায় ভূষিত করে।
গোপেশ চন্দ্র ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ও আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত হন। সেই থেকেই বঙ্গবন্ধুকে তার মনের গভীরে লালিত করে আসছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার গভীর ভালোবাসার প্রতিফলনই তার এই ছড়াগ্রন্থ। বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে লালন করেই তিল তিল করে এক হাজার ছড়া রচনা করে এক অসামান্য অনবদ্য কাব্যসম্ভার সৃষ্টি করেছেন। তার এই ছড়াগ্রন্থটি প্রকাশিত হলে জাতির জনকের আদর্শ ও গুণাবলী সকল বাঙালিকেই উদ্ভাসিত ও অনুপ্রাণিত করবে; অনন্য আলোয় আলোকিত করে তুলবে।
ব্যক্তি জীবনে সফল গোপেশচন্দ্র সূত্রধর বর্তমানে সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট হাওলাদার পাড়ায় বাসিন্দা। তার স্ত্রী কৃষ্ণা সূত্রধর অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা, দুই মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, তারা বর্তমানে স্বামী-সন্তান নিয়ে রাজধানীতে বসবাস করছেন।
গ্রন্থটি প্রসঙ্গে লেখক গোপেশচন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘আমরা জানি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, বাংলাদেশর স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক, বাঙালিদের অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশের সমুজ্জ্বলতায় আনন্দ-বেদনায়, স্মরণে-বরণে বাঙালিদের হৃদয়ে চিরদিনের জন্য লেখা এমন একটি অনন্য নাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানিদের সীমাহীন অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে তার আপোষহীন বজ্রকণ্ঠ গগনচুম্বী লেলিহান শিখার মতো জ্বলে উঠেছিল। পরাধীন বাঙালি জাতিকে জাগ্রত করে তাদের হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জয়পতাকা তুলে দিয়েছিলেন বাঙালির প্রাণের সেই নেতা। তার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসাই আমাকে ছড়া লেখার প্রেরণা যুগিয়েছে।’
তিনি জানান, সাহিত্য চর্চাই তার মূল অনুপ্রেরণা। সাহিত্যের মাধ্যমে নিজেকে অমর করে রাখতে চান। তাই লেখালেখি ও সাহিত্য চর্চায় সব সময় ব্যস্ত সময় কাটান। তিনি আগামীর সুন্দর পৃথিবীর জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
আজকালের খবর/আরইউ