প্রকাশ: বুধবার, ৩১ মার্চ, ২০২১, ৪:৩১ পিএম				
				
			 
					 পর্ন বা পর্নোগ্রাফি শব্দটা শুনলেই একটা সময় তরুণরা আড়ষ্ট হয়ে যেত। সেইসাথে লজ্জাও পেত। কিন্তু এখন পর্নোগ্রাফি যেন তেমন কিছু নয়। আগেরকার সেই আড়ষ্টতা নেই। নেই সহজাত সেই লজ্জাও।  এখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা পর্নোগ্রাফি ছবি, ভিডিও, অডিও এবং টেক্সট আকারে ব্যবহার করে। এই শিক্ষার্থীরা প্রধানত মোবাইল ফোনে অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখে। এর বাইরে ট্যাব, ল্যাপটপেও তারা দেখে। আবার পেনড্রাইভ ব্যবহার করে বিনিময়ও করে।। ইদানিং পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তের সংখ্যা ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাচ্ছে। ছোটো ছোটো বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝেও আসক্তির মাত্রা প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। সম্পর্কগুলো দিন দিন বেশ জটিলতার দিকে এগোচ্ছে। কখনো কখনো তা সম্পর্কচ্ছেদের করুণ পরিণতিতে গিয়ে শেষ হয়। যৌনতা প্রাণীজগতে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু সমস্যাটা তখনই হয়, যখন তা পর্নোগ্রাফির মতো একটি বিষয়ে আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়।
পর্ন বা পর্নোগ্রাফি শব্দটা শুনলেই একটা সময় তরুণরা আড়ষ্ট হয়ে যেত। সেইসাথে লজ্জাও পেত। কিন্তু এখন পর্নোগ্রাফি যেন তেমন কিছু নয়। আগেরকার সেই আড়ষ্টতা নেই। নেই সহজাত সেই লজ্জাও।  এখন বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা পর্নোগ্রাফি ছবি, ভিডিও, অডিও এবং টেক্সট আকারে ব্যবহার করে। এই শিক্ষার্থীরা প্রধানত মোবাইল ফোনে অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখে। এর বাইরে ট্যাব, ল্যাপটপেও তারা দেখে। আবার পেনড্রাইভ ব্যবহার করে বিনিময়ও করে।। ইদানিং পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তের সংখ্যা ভয়াবহ আকারে বেড়ে যাচ্ছে। ছোটো ছোটো বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝেও আসক্তির মাত্রা প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। সম্পর্কগুলো দিন দিন বেশ জটিলতার দিকে এগোচ্ছে। কখনো কখনো তা সম্পর্কচ্ছেদের করুণ পরিণতিতে গিয়ে শেষ হয়। যৌনতা প্রাণীজগতে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। কিন্তু সমস্যাটা তখনই হয়, যখন তা পর্নোগ্রাফির মতো একটি বিষয়ে আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়।তরুণরা পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত হওয়ার কারণ:
নৈতিক শিক্ষার অভাব আগে পরিবারেও ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার চর্চা ছিল। শাসন ছিল। কিন্তু এখন আর আগের মতো নেই। সবকিছুই যেন উঠে যাচ্ছে। নৈতিক শিক্ষা আর এতে করেই তরুণদের পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি বাড়ছে বলে জানা যায়। বিনোদনের অভাব বর্তমান সময়ে বিনোদনের অনেক মাধ্যম তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেইসাথে হারিয়ে গেছে সুস্থ বিনোদন। আর এতে করেই তরুণদের মধ্যে এই ধরণের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করছেন সামাজিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে একটা সময় খেলাধুলার জন্য মাঠ ছিল। তরুণদের খেলাধুলার পর্যাপ্ত জায়গা ছিল। কিন্তু এখন আর মাঠ চোখে পড়ে না। এতে করে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আগে পরিবারের সবাই মিলে টেলিভিশন দেখার একটা বিষয় ছিল। কিন্তু সুস্থ বিনোদন দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। সহজলভ্য প্রাপ্তি: জানা যায়, শুধু তরুণরা নয় সব বয়সের মানুষই পর্নোগ্রাফি দেখে। আর পর্নোগ্রাফির সহজলভ্যতা এর ব্যবহারকারী বা গ্রাহক বাড়িয়ে দিচ্ছে। পর্ণোগ্রাফির সরবরাহ বন্ধ না করলে এর ব্যবহার কমানো কঠিন বলে মনে করেন অনেকে। তারা বলেন, পর্নোগ্রাফি উৎপাদন এবং ব্যবহার দুটোই নিষিদ্ধ করা দরকার। পর্নোগ্রাফিতে যারা আসক্ত হয়ে পড়েন, তারা বিকৃত জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। এটা নিজেদের ক্ষতির দিক হলেও শিকার হন নারী ও শিশুরা। অনেকেই পর্নোগ্রাফির সহজলভ্য প্রাপ্তিকে তরুণদের আসক্তির বড় কারণ হিসেবে দেখছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন: তথ্য ও প্রযুক্তির এই যুগে আমরা প্রতিনিয়ত সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মধ্যে বাস করি। বাঙালি সংস্কৃতি এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। আমাদের গণমাধ্যমগুলোও প্রতি নিয়ত আধুনিকতার নামে ভিন্ন সংস্কৃতির চর্চা করছে। ফলে অনেক সময় তারা এর ক্ষতিকর প্রভাব বুঝতে পারছে না। অসুস্থ বিনোদন ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন তরুণদের পর্নোগ্রাফিতে আসক্তির অনেক বড় কারণ। যে কোন দেশের জন্যই সুস্থ সংস্কৃতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এক্ষেত্রে অনেক বড় একটি বাধা। এছাড়া অজানা কৌতূহলও একটা বড় কারণ। অজানা জিনিসের প্রতি শিশুদের কৌতূহল নতুন নয়। আমরা মানুষেরা সব সময় অজানাকে জানার জন্য ছুটছি। প্রতিনিয়ত ছুটছি। তরুণরাও বয়সের কারণে একটা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে যায়। ফলে পর্নোগ্রাফির প্রতি তাদের একটি অজানা আকর্ষণ কাজ করে। ফলে একসময় এতে আসক্তি হয়ে পড়ে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা এই বিষয়ে পরিবারকে সতর্ক থাকতে বলে।
গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে এড়াতে বিশ^জুড়ে লকডাউনের একঘেয়ে জীবন শুরু হয়, বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। জনপ্রিয় এক পর্ণ সাইট জানায়, করোনাকে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণার পর থেকেই নীল ছবিতে বেড়েছে আসক্তি। লকডাউন ঘোষণার পর ফ্রান্সে ৪০ শতাংশ বেড়েছে পর্ন দেখার প্রবণতা। জার্মানি ও বিধ্বস্ত ইটালিতেও উর্ধ্বমুখী গ্রাফ। দুই দেশে আসক্তি বেড়েছে ২৫ ও ৫৫ শতাংশ। স্পেনে পর্নসাইটের ট্রাফিক বাড়ে ৬৫ শতাংশ। রাশিয়ায় ধাপে ধাপে লকডাউন হয়। যাতে পর্ন দেখার আগ্রহ বাড়ে ৫৬ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ায় অবশ্য সম্পূর্ণ লকডাউন না হওয়ায় সেখানকার গ্রাফটা তেমন চোখে পড়ার মতো হয়। মার্কিন মুলুকে নানা বাধানিষেধ সত্ত্বেও বেড়েছে পর্নের আসক্তি। কিন্তু এ ব্যাপারে গোটা বিশ্বকে হার মানিয়েছে ভারত।
পর্ণ আসক্তি থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা:
ভয়াবহ পর্ণ আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজেকে নিজের প্রতি সৎ থাকতে হবে। প্রথমেই আপনার সংগ্রহে থাকা পর্ণ ভিডিওগুলো ডিলিট করুন। কারণ এ ব্যাপারে আসক্তদের সংগ্রহশালা বেশ উন্নত এবং পরিবর্ধনশীলনিয়মিত যেসব সাইটে ভিজিট করে আপনি আসক্ত হয়েছেন সেসব সাইট ব্লক করুন। আপনার পরিবারের সদস্যদের পর্ণ জগতের ধরা ছোঁয়ার বাহিরে রাখতে হলে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিংবা আপনি চাইলে বাচ্চার কম্পিউটার টেবিল বাসার এমন জায়গায় সেট করতে পারেন যেখান থেকে তার মনিটর দেখা যায়। এতে আপনার সন্তান কিছুটা হলেও এর থেকে রক্ষা পাবে। অনেক আসক্তদের কিছুক্ষণ পর পর পর্ণ দেখতে হয় কিংবা কাজের মাঝামাঝি সময়ে পর্ণ দেখতে হয়। তরুনরা যদি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত হয় তবে পর্ণ ছাড়া তাদের পছন্দের কোনো শখ বা বিনোদনের উৎস খুঁজে বের করুন। কাজের মাঝে মাঝে পর্ণ না দেখে সেই পছন্দের কাজ করুন কিংবা গান শুনতে পারেন অথবা ৫ মিনিট হেঁটে আসতে পারেন বাহিরের মুক্ত বাতাসে। এতে তরুণদের  মস্তিষ্ক এবং দেহ থাকবে সতেজ এবং ফুরফুরে। নিয়মিত পর্ণ দেখে যাদের অভ্যাস কিংবা ১০- ১৫ বছরের পুরনো অভ্যাস পর্ণ দেখা, তাদের জন্য আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। এখন থেকে একটি রুটিন তৈরি করুন, চাইলে গুগল ক্যালেন্ডারের সাহায্য নিতে পারেন। পর্ণের কালোজাদুর মোহ থেকে বেরিয়ে এসে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে একজন সুন্দর মনের মানুষ উপহার দিন। পাঠকের মনে হতে পারে এই পোস্ট শুধুমাত্র বয়স্কদের জন্য লেখা উচিত কিংবা রোয়ারের মতো প্ল্যাটফর্মে যেখানে কম বয়স্ক পাঠকরাও রয়েছেন সেখানে এমন পোস্ট দেয়া উচিত নয়। তাদের জন্য বলছি, পর্ণের কালোজাদুর মোহে তরুণ শিশু সন্তানও অন্ধকারের পথে পা বাড়াতে পারে। যে পর্ণ দেখে, তার এই লেখা বোঝারও বয়স হয়েছে। আমাদের দেশে যদিও যৌনতা এখনও ট্যাবু। কিন্তু এই ট্যাবু ভেঙ্গে বাবা- মা, শিক্ষক এবং বয়স্কদের উচিত শিশু কিশোরদের সঠিক তথ্য জানানো।
 লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আজকালেরখবর/টিআর