
কক্সবাজারের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ। এক সময় যেখানে বাড়ির পাশে টিউবওয়েল মানেই ছিল নির্ভরযোগ্য সুপেয় পানি কিন্তু এখন পুরো উপজেলা জুড়েই পানির সংকট যেন নিত্যসঙ্গী।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাস টেকনাফবাসীর জীবনে সবচেয়ে কঠিন সময়। এসময় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এতটাই নিচে নেমে যায় যে অনেক টিউবওয়েলে পানি ওঠে না। ফলে টেকনাফ পৌরসভা, সদর ইউনিয়ন, হ্নীলা, হোয়াইক্যং এবং বাহারছড়ার বহু পরিবারকে দূর-দূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টেকনাফ সদরে গভীর পানির স্তরে ৪৫০ থেকে ৫৫০ ফুট,হ্নীলায় ৫৮০ থেকে ৬৫০ ফুট,হোয়াইক্যংয়ে ৫৮০ থেকে ৭৮০ ফুট, বাহারছড়ায় ৪৫০ থেকে ৫৬০ ফুট, সাবরাংয়ে ৫ থেকে ৬০ ফুট, সেন্টমার্টিনে ৫ থেকে ৩০ ফুট। এছাড়া টেকনাফ উপজেলায় গভীর টিউবওয়েল মধ্যে রয়েছে ১,৪৫০টি আর অগভীর টিউবওয়েল রয়েছে ২,৩৪৯টি। তবে টিউবওয়েলের সংখ্যায় বেশি হলেও পর্যাপ্ত পানি মেলে না অনেক গুলোতেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের লবণাক্ত পানি এখন আরও ভেতরের দিকে অনুপ্রবেশ করছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনিয়ন্ত্রিত গভীর নলকূপ স্থাপন, পানি সংরক্ষণের অভাব, এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যা চাপ।
আব্দুর রহমান নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সংকট শুধু পানির স্তরে নয়, টেকনাফের বহু এলাকায় টিউবওয়েলের পানি নোনা হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মার্চ এপ্রিল মাসে এই লবণাক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে রান্না-বান্না, গোসল কিছুই করা যায় না ঠিকমতো।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপ-সহকারী প্রকৌশল জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন জানান, টেকনাফ একটি পানি সংকটপ্রবণ এলাকা। পৌরসভা এবং পুরো উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে সুপেয় পানির ঘাটতি রয়েছে। স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করে সরবরাহ করা হচ্ছে। যেসব স্থানে পানির সমস্যা সবচেয়ে বেশি, সেসব এলাকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পানি পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া যেখানে পানিতে আয়রনের মাত্রা বেশি, সেখানে ফিল্টার ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, প্রতিবছর টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানির সংকট দেখা দেয়। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর চেষ্টা করছে যেসব স্থানে সমস্যা বেশি, সেখানে পানি সরবরাহ করতে যদিও তা এখনো পর্যাপ্ত নয়।
তিনি আরও বলেন, এই সংকটের স্থায়ী সমাধান করতে হলে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন। পৌরসভার পানি সংকট নিরসনে কিছু প্রকল্প বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
টেকনাফে দিন দিন পানির সংকট ভয়াবহ হচ্ছে। দ্রুত পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগ না এলে টেকনাফের মানুষের জীবন-জীবিকা আরও হুমকির মুখে পড়বে।।
আজকালের খবর/বিএস