রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস সোমবার অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার (সেভেরিজেস রিক্সব্যাঙ্ক পুরস্কার) ঘোষণা করেছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ মার্কিন-ইসরায়েলি অর্থনীতিবিদ জোয়েল মকির, ফ্রান্সের ফিলিপ আজিওঁ এবং কানাডার পিটার হুইটের নাম এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে।
জুরি বোর্ড জানায়, মকির পুরস্কারের অর্ধেক পেয়েছেন ‘প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির পূর্বশর্ত চিহ্নিত করার’ জন্য, আর বাকি অর্ধেক ভাগ করে নিয়েছেন আজিওঁ ও হুইট ‘সৃজনশীল ধ্বংসের মাধ্যমে টেকসই প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব উপস্থাপনের’ জন্য।
জোয়েল মকির ঐতিহাসিক উৎস ব্যবহার করে অনুসন্ধান করেছেন, কীভাবে টেকসই প্রবৃদ্ধি ‘স্বাভাবিক অবস্থা’তে পরিণত হয়েছে।
তিনি দেখিয়েছেন, একের পর এক উদ্ভাবন যদি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় চলতে থাকে, তবে শুধু ‘কিছু কাজ করছে’ জানা যথেষ্ট নয়—বরং ‘কেন কাজ করছে’ তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও থাকা জরুরি। শিল্পবিপ্লবের আগে এই ব্যাখ্যাগত জ্ঞান প্রায়ই অনুপস্থিত থাকত, যা নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ওপর ভিত্তি গড়ে তোলা কঠিন করে তুলেছিল। মকির আরো গুরুত্ব দিয়েছেন এমন একটি সমাজের প্রয়োজনীয়তার ওপর, যা নতুন ধারণার প্রতি উন্মুক্ত ও পরিবর্তনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। ফিলিপ আজিওঁ ও পিটার হুইটও টেকসই প্রবৃদ্ধির পেছনের প্রক্রিয়াগুলো বিশ্লেষণ করেছেন।
১৯৯২ সালের এক গবেষণাপত্রে তারা ‘সৃজনশীল ধ্বংস’ (ক্রিয়েটিভ ডিস্ট্রাকশন) নামে পরিচিত একটি ধারণার গাণিতিক মডেল তৈরি করেন—যেখানে দেখা যায়, কোনো নতুন ও উন্নত পণ্য বাজারে এলে পুরনো পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই উদ্ভাবনটি একদিকে সৃজনশীল, কারণ এটি নতুন কিছু উপস্থাপন করে, আবার ধ্বংসাত্মকও, কারণ পুরনো প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না।
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এই তিন অর্থনীতিবিদ দেখিয়েছেন, কীভাবে সৃজনশীল ধ্বংস নতুন সংঘাত তৈরি করে, যা গঠনমূলকভাবে মোকাবিলা করা জরুরি—অন্যথায়, বড় কোম্পানি ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্ভাবনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
অর্থনীতিতে নোবেল কমিটির চেয়ার জন হ্যাসলার বলেন, ‘এই পুরস্কারজয়ীদের কাজ প্রমাণ করে যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কোনো স্বয়ংক্রিয় বিষয় নয়।
আমাদের সৃজনশীল ধ্বংসের অন্তর্নিহিত প্রক্রিয়াগুলো রক্ষা করতে হবে—না হলে আমরা আবার স্থবিরতায় ফিরে যাব।’
আজকালের খবর/ওআর