
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় জনগনের আস্থা ও ভরসা অর্জনে সফল হয়েছেন সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বায়েজীদ আকন। স্থানীয় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি ও নানা ঘটনায় পুলিশের সেবা নিতে থানায় আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
সোনাগাজী মডেল থানায় ওসি বায়েজীদ আকন যোগদানের পর ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে আগষ্ট ২০২৫ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অত্র থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ পুলিশের সার্বিক কার্য্যক্রম পর্যালোচনায় দেখা গেছে থানায় হয়রানি মুক্ত নাগরিক সেবা অর্থ্যাৎ মামলা, জিডি, তদন্ত, ক্লিয়ারেন্সসহ সকল সেবা সহজলভ্য হয়েছে। যে কোনো সেবা প্রার্থীর বক্তব্য ওসি নিজে শুনেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। উল্লেখিত ৯ মাসে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন পূর্বক আসামি গ্রেপ্তার ও আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
তার উল্লেখযোগ্য সাফল্য সমূহের মধ্যে রয়েছে-
১. সোনাগাজীর বহুল আলোচিত ক্লুলেস হাশেম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন পূর্বক ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঘটনায় জড়িত ৭ আসামিকে গ্রেপ্তার এবং হত্যায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার এবং আসামিদের মধ্যে আদালতে ৫ জনের স্বীকারোক্তি প্রদান।
২. পশ্চিম তুলাতলীর প্রবাসীর স্ত্রী লাইলী আক্তার তানিয়া হত্যার রহস্য উদঘাটন পূর্বক ৭২ ঘন্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার।
৩. ২১ জানুয়ারি মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় কতিপয় দুর্বৃত্ত কর্তৃক ফেনী রেলওয়ে স্টেশন অফিসার মীর মোহাম্মদ ইমরান ও তার স্ত্রীকে জিম্মি করে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবিসহ নগদ টাকা ও মোটরসাইকেল লুটের ঘটনার অভিযোগ প্রাপ্তির ৪ ঘন্টার মধ্যে দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত পূর্বক গ্রেপ্তার ও লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার।
৪. নারীদের অশ্লীল ছবি দিয়ে ব্লাকমেইলিংসহ যে কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এমনকি অভিযুক্ত বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর থেকেও গ্রেপ্তার করে আনা হয়েছে।
৫. চরচান্দিয়ার নতুন সওদাগরহাট এলাকায় প্রবাসী আ. কুদ্দুসের বাড়িতে আলোচিত চুরির ঘটনায় ৭২ ঘন্টার মধ্যে চোরাই স্বর্ণ ও মোটরসাইকেল উদ্ধারসহ চোর গ্রেপ্তার।
৬. দীঘিনালার দুর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে গৃহবধূ গণধর্ষণের পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারসহ হিন্দু নারীকে ধর্ষণের আসামি দু’জনকে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছেন।
এছাড়া সোনাগাজী পৌর-শহরের প্রসিদ্ধ ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাই ভাই স্টোরে চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস চুরির ঘটনায় পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।
তিনি কিশোর গ্যাং, চোর ও মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছেন। তিনি নিজেই এসব অভিযানে স্ব শরীরে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। তার কঠোর অবস্থানের কারণে মুহুরী প্রজেক্ট কেন্দ্রীক পর্যটক হয়রানী বর্তমানে শুন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
এছাড়া তিনি নিয়মিত মসজিদ, বাজারসহ বিভিন্ন জন সমাগম স্থানে গিয়ে অপরাধ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করছেন। তার দায়িত্ব পালনের সময়কালে আদালতের পরোয়ানা মূলে ৩৭৯ জন আসািম গ্রেপ্তার, নিয়মিত মামলায় ১৬৩ জন এবং পুলিশ আইনের ৩৪ ধারায় ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই সময়ে পুলিশের নিয়মিত অভিযানে ৩৩২ পিস ইয়াবা, ৪৫ লিটার চোলাই মদ, ১,৩৫০ গ্রাম গাঁজা, ৫টি পাইপগান, ৬টি কার্তুজ, ২ কিরিচ ও ১টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হারানো ডায়েরী ও অভিযোগের ভিত্তিতে ২২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে মালিকের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দমন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ গ্রহেণর ক্ষেত্রে ওসি বায়েজীদ আকন যথেষ্ট সফল এবং জনগনের আস্থা ও ভরসা অর্জনে সফল হয়েছেন বলে মনে করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ওসির কর্মকান্ডের প্রশংসা করে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিব্যক্তি জানিয়ে পোস্ট করেছেন- সোনাগাজী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল মোবারক ভিপি দুলাল, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খুরশিদ আলম ভূঞাঁ, পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন, সদস্য সচিব রাসেল হামিদী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক মারুফ, উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল সজিব, ফেনী জেলা জিয়া সাইবার ফোর্সের সভাপতি নুর নবী মেম্বারসহ নেতৃবৃন্দের বেশ কয়েকজন। এছাড়া শিক্ষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ওসি বায়েজিদ আকনের দক্ষতা এবং দূরদর্শি কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেছেন।
সওদাগরহাট এলাকার আবদুল কুদ্দুস জানান, গত ২৭ আগষ্ট রাতে আমার বাড়িতে চুরি হয়, থানায় অভিযোগ দেয়ার পর পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তদন্ত শুরু করে, অল্প সময়ের মধ্যে চোর শনাক্ত করে গ্রেপ্তারসহ চুরি হওয়া স্বর্ণালংকার ও জিনিসপত্র এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। আমি সোনাগাজী মডেল থানার ওসিসহ সকল পুলিশ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
সোনাগাজী বাজার বনিক সমিতির সভাপতি নুর নবী বিএসসি জানান, সোনাগাজীতে অপরাধ দমনে পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক, ম্যান হিসাবে ওসি সাহেব ভালো মানুষ এবং একজন পেশাদার, দক্ষ ও কৌশলী অফিসার। তবে পুলিশি সেবা সন্তোষজনক ও আশানুরুপ করতে থানার জনবল বাড়াতে হবে।
সোনাগাজী মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার উপ-পরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া জানান, সোনাগাজীতে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে। ওসি স্যারের দুরদর্শী ও দক্ষ নেতৃত্বে থানার অফিসার ও ফোর্সগণ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে। তিনি অফিসার ফোর্সের কল্যাণে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি সর্বদা তার অধীনস্থদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট থাকেন। রাত হলে আমাদের ৫টি টিম মাঠে থাকে। যে কোনো বেআইনী কাজের বিরুদ্ধে স্যার জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করে থাকেন।
সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বায়েজীদ আকন বলেন, দায়িত্ব পালনে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। এখানে রাজনিতীবিদ, শিক্ষক, সাংবাদিক ব্যবসায়ী সব শ্রেণি-পেশার মানুষ দায়িত্ব পালনে পুলিশকে সহযোগিতা করছেন, তাই সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ফেনী জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় মামলা জিডি ক্লিয়ারেন্সসহ থানার সকল নাগরিক সেবা হয়রানিমুক্ত ভাবে ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হয়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সহ যেকোন অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে।
সহকারি পুলিশ সুপার (সোনাগাজী সার্কেল) সৈয়দ মুমিদ রায়হান বলেন, ছোটখাটো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ব্যতিত সোনাগাজীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং পুলিশের এক্টিভিটিস ভালো। যেমন- গত আগষ্ট মাসে সোনাগাজী মডেল থানায় ৬টা চুরির মামলা হয়েছে, এর মধ্যে ৫টা মামলায় আসামি গ্রেপ্তার ও মালামাল উদ্ধার হয়েছে। এক কথায় দায়িত্ব পালনে পুলিশের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।
আজকালের খবর/ওআর