
দেশ ও জনগণের বন্ধু দেশবন্ধু গ্রুপ দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ভোগ্যপণ্য, নিত্যপণ্য, বেভারেজ, জাহাজ শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, আবাসন শিল্প ও মিডিয়াসহ প্রায় সব সেক্টরেই দেশের মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে গ্রুপটি। শুধু তাই নয়, দেশবাসীর সেবার পাশাপাশি গ্রুপের বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে দেশবন্ধু গ্রুপ। এমনকি দেশের প্রচলিত সব নিয়ম-কানুন মেনে দেশের শেয়ারবাজারেও তালিকাভুক্ত রয়েছে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মোট কথা, দেশবন্ধু গ্রুপ গত ৩৭ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে দেশে-বিদেশে ব্যবসা করে আসছে এবং গ্রুপের নিবন্ধিত বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সম্যক ভূমিকা পালন করছে।
তবে সম্প্রতি দেশবন্ধু গ্রুপের অগ্রযাত্রায় বাগড়া দিচ্ছে কিছু অতি উৎসাহী মিডিয়া। তারা দেশবন্ধু গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির নামে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, গল্পনির্ভর ও চটকদার সংবাদ শিরোনামে প্রচার করে দেশবন্ধু গ্রুপকে থামিয়ে দিতে চায়; যা দেশবন্ধু গ্রুপ শুধু নয়, দেশের অর্থনীতিকে আটকে দিয়ে চায়। এমনটি হলে গ্রুপে কর্মরত ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের কর্মসংস্থান হারাবেন। এমনিতেই দেশের বিরাট একটি অংশ কর্মসংস্থানবিহীন অবস্থায় রয়েছেন। তার সঙ্গে দেশবন্ধু গ্রুপে কর্মরত এ ৩০ হাজার কর্মী যুক্ত হলে দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাবে বলে মনে করছেন গ্রুপের কর্মকর্তারা।
অতি সম্প্রতি দেশবন্ধু গ্রুপের সুগার মিলস ও সিমেন্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে অসত্য ও বানোয়াট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কিছু মিডিয়া। অসত্য ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সিঙ্গাপুরে কোম্পানি খুলে ১৯৪ কোটি টাকা পাচার’। বিভ্রান্তিকর এই প্রতিবেদনটি গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। এদিকে ‘সিঙ্গাপুরে কোম্পানি খুলে ১৯৪ কোটি টাকা পাচার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি দেশবন্ধু গ্রুপের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে দেশবন্ধু গ্রুপকে জড়িয়ে এলসি খোলা এবং বিদেশে অর্থ পাচার সম্পর্কে যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা যথাযথ এবং বস্তুনিষ্ঠ নয় বলে মনে করে গ্রুপের কর্মকর্তারা। এর পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণাদিও বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছেন গ্রুপের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরিচালক মুশফিকুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন দেশবন্ধু গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন, প্রশাসন, এইচআর ও কমপ্লায়েন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাকির হোসেন পিএসসি পিএইচডি, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিএফও বশির উদ্দিন। এসময় তারা সুগার মিল ও সিমেন্টের এলসি ও তার বিপরীতে আনা মালামালের তথ্য-উপাত্ত তারিখসহ জমা দেন।
এমনকি আমদানিকৃত পণ্য খালাস ও সরকারকে শুল্ক কর প্রদানের বিস্তারিত প্রমাণাদিও দেখান। বিএফআইইউ’র পরিচালক মুশফিকুর রহমান সব ধরনের প্রমাণাদি দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দেশবন্ধু গ্রুপের বিষয়ে মিডিয়াতে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ’র শাখা থেকে সরবরাহ করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, প্রয়োজনে আপনারা আমাকে কোড করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নথি অনুযায়ী, দেশবন্ধু সুগার মিলের জন্য ২০-১০-২০১৬ তারিখে সাউথ ইস্ট ব্যাংকে ৫৫ লাখ ডলারের একটি এলসি করা হয়। এলসি নাম্বার-১৩৩৫১৬০২০৩৪২। উল্লেখিত আমদানিকৃত পণ্য মোট ৬৩ বারে খালাস করা হয়। এর বিপরীতে সরকারি কোষাগারে ৮২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪৫ টাকা শুল্ক কর প্রদান করে। অন্যদিকে দেশবন্ধু সিমেন্ট মিলের জন্য ২১-১০-২০১৪ সাল থেকে ২৯-১০-২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ১২টি এলসির মাধ্যমে ৯৯ লাখ ৬৮ হাজার ২১ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলারের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি করে। যার এলসি নাম্বার যথাক্রমে- ১৩৩৫-১৪-০২-০৩১৮ (২১-১০-২০১৪), ১৩৩৫-১৫-০২-০০৯৮ (০৯-০৩-২০২৫), ১৩৩৫-১৫-০২-০২৭০ (০৭-০৭-২০১৫), ১৩৩৫-১৫-০২-০৫৪১ (২৮-১২-২০১৫), ১৩৩৫১৬০২০১০৮ (২৪-০৩-২০১৭), ১৩৩৫১৬০২০২৩০ (১২-০৭-২০১৬), ১৩৩৫১৬০২০৩২৮ (০৯-১০-২০১৬), ১৩৩৫১৭০২০১১০ (৩০-০৩-২০১৭), ১৩৩৫১৭০২০১২৭ (০৬-০৪-২০১৭), ১৩৩৫১৭০২০২০৯ (১০-০৭-২০১৭), ১৩৩৫১৮০২০৪০২ (০৫০৯-২০১৮), ১৩৩৫১৮০২০৪৮১ (২৯-১০-২০১৮)। এসব এলসির মাধ্যমে মোট ৯৯ লাখ ৬৮ হাজার ২১ হাজার ২৫ লাখ ইউএস ডলারের ২ লাখ ২০ হাজার ১৬৫ টন পণ্য আমদানি করা হয়। এর বিপরীতে সরকারি কোষাগারে ৩১ কোটি ৮২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭৪ টাকা শুল্ক কর প্রদান করা হয়।
এ প্রসঙ্গে দেশবন্ধু গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন, প্রশাসন, এইচআর ও কমপ্লায়েন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাকির হোসেন পিএসসি পিএইচডি বলেন, দেশবন্ধু গ্রুপ গত ৩৭ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে এবং গ্রুপের নিবন্ধিত বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সম্যক ভূমিকা পালন করছে। এরূপ একটি গ্রুপের নামে কোনো রকম সংবাদ পরিবেশনের আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গ্রুপের বক্তব্যসহ রিপোর্ট পেশ করা বাঞ্ছনীয় ছিল; যা এক্ষেত্রে প্রতিপালিত হয়নি।
এতে গ্রুপ ও গ্রুপের মালিকদের মানহানি এবং ব্যবসায়িক সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। বস্তুতপক্ষে, দেশবন্ধু গ্রুপের সংশ্লিষ্ট দেশবন্ধু সুগার মিলস্ লিমিটেড এবং দেশবন্ধু সিমেন্ট মিলস লিমিটেড ১৯৯৬ সাল থেকে সাউথ ইস্ট ব্যাংকের সঙ্গে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে। দেশবন্ধু গ্রুপ ব্যাংকটির সঙ্গে সর্বমোট ২,৬৬৩.৮৩ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে, যার মধ্যে ২,৫৯৬.০৯ কোটি টাকা অদ্যাবধি পরিশোধিত হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, দেশবন্ধু সুগার মিলস্ লিমিটেড ২০১৬ সালে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৫৫ লাখ ডলারের একটি এলসি খোলে এবং দেশবন্ধু সিমেন্ট মিলস্ লিমিটেড ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ক্লিংকার আমদানির জন্য ১৩টি এলসি খোলে। রিপোর্টে আরো দাবি করা হয়েছে, উক্ত মালামাল দেশে না এনে এক কোটি ৪৮ লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৫ ডলার পাচার করা হয়েছে, যা মোটেই সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ নয়।
বস্তুতপক্ষে, দেশবন্ধু গ্রুপের প্রতিটি এলসি দেশের আমদানি-রপ্তানি পলিসি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং উক্ত এলসিগুলোর বিপরীতে মালামাল শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ শুল্ক পরিশোধসাপেক্ষে দেশে আনা হয়েছে এবং কাঁচামাল হিসেবে কোম্পানি দুটিতে ব্যবহার করা হয়েছে। এই আমদানির স্বপক্ষে যথোপযুক্ত দলিল-দস্তাবেজ গ্রুপের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ দলিল-দস্তাবেজ দেখতে চাইলে আমরা দেখাতেও রাজি আছি। এরূপ বিভ্রান্তিকর, অসত্য, ভুল রিপোর্ট ছাপানোর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশবন্ধু গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাকির হোসেন।
আজকালের খবর/ এমকে