
উখিয়ার জনস্বাস্থ্য এখন অস্বাভাবিক চাপে রয়েছে। অতিবৃষ্টি, তীব্র গরম, জমে থাকা পানি, বন ধ্বংস, অপরিচ্ছন্নতা এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রভাবে ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, চর্মরোগ ও হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। নারী, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই এর প্রভাবে ভুগছেন।
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগস্ট মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৩ জন, তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন ৪৭ জন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ জন। এছাড়া বিভিন্ন প্রাণীর কামড়ে রোগীর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এসব তথ্যই প্রমাণ করছে, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ ও জনসংখ্যার চাপ সরাসরি স্থানীয়দের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সচেতন থাকার চেষ্টা করলেও দারিদ্র্য, অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও আশেপাশের অপরিচ্ছন্নতা তাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কুতুপালং এলাকার মো. ইমরান আইকন বলেন, “বাচ্চাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও খাবার নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। কিন্তু, রোহিঙ্গা শিবিরের বর্জ্য ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ আমাদের সমস্যায় ফেলছে।”
গৃহবধূ উম্মে হাবিবা বলেন, “ইদানীং চর্মরোগ বেড়ে গেছে। নিয়মিত গোসল করি, কাপড় পরিষ্কার রাখি, তবু পুরোপুরি নিরাপদ থাকতে পারছি না। আশেপাশের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশই সমস্যাকে জটিল করছে।”
স্থানীয় যুবক মো. ফারুক বলেন, “ডায়রিয়া বা জ্বর হলে চিকিৎসা নেই, কিন্তু চারপাশের অপরিচ্ছন্নতা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বন্যপ্রাণীর কামড়ে এই মাসেই বহু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।”
উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সাজেদুল ইমরান শাওন বলেন, “অতিবৃষ্টি ও তীব্র গরমে পরিবেশগত অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। বৃদ্ধদের মধ্যে শ্বাসজনিত সমস্যাই বেশি। এছাড়া কুকুর, বিড়াল ও বন্যপ্রাণীর কামড়ের রোগীও বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশুদ্ধ পানি পান করা, অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে বিরত থাকা, বাড়ি-আশপাশ পরিষ্কার রাখা ও মশা নিধন কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখা জরুরি।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছা. নাসরিন জেবিন বলেন, “গরমে হিটস্ট্রোক, পানিবাহিত রোগ ও চর্মরোগ বেড়েছে। আশ্রয় শিবিরের বর্জ্য, বনাঞ্চল ক্ষয় ও অপরিচ্ছন্নতা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ইউনিয়নভিত্তিক ইমার্জেন্সি হেলথ রেসপন্স গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীরা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন। পাশাপাশি কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে প্রাথমিক থেকে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “পরিবেশবান্ধব জীবনধারা গড়ে তুলতে হবে। গাছ লাগানো, প্লাস্টিক বর্জন, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার, পরিচ্ছন্ন পানি ও খাবারের সঠিক সংরক্ষণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
উখিয়া প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ স্থানীয়দের ওপর বড় প্রভাব ফেলছে। চর্মরোগসহ সংক্রামক রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে উখিয়ার জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছাবে।”
উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জিএম মুক্তাদির বলেন, “উখিয়ায় জালিয়াপালং ছাড়া অন্যান্য এলাকায় নিরাপদ পানির অবস্থা ভালো। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা লবণাক্ততা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্লান্ট প্রয়োজন, সরকার প্রকল্প নিলে আমরা বাস্তবায়ন করব। স্যানিটেশন উন্নয়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্যক্রম চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে এলে আমরা তা বাস্তবায়ন করব। আর ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে পানির সঠিক ব্যবহার ও অপচয় রোধে সচেতন হতে হবে।”
আজকালের খবর/ওআর