
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ফ্যাসিস্ট দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। একাধিকবার তিনি দলটির নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণও করেছিলেন। সেই অপুকে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দেখা গেল বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে! তবে এ নিয়ে যখন সারা দেশ উত্তাল তখন মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি দায় চাপালেন নিরবের ওপর! যদিও নিরবকে এ নিয়ে হোয়াটস্যাপে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় আয়োজিত বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জানিপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে শোডাউন, ভোজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন অপু বিশ্বাস। এ সময় অপু বিশ্বাসের সঙ্গে ছিলেন চিত্রনায়ক নিরব হোসেন। নিরব-অপুকে আমন্ত্রণ জানান খোকসা পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন হোসেন।
তবে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার আগেই ভাইরাল হয়ে পড়েন অপু বিশ্বাস। পড়ে তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে অপুর নিজের অবস্থান ব্যাখ্যাও দেন এই প্রতিবেদকের কাছে। তিনি দাবি করেন, অনুষ্ঠানটি কাদের সেটা আমাকে নিরব জানায়নি। শুধু জানিয়েছিলেন একটা স্কুলে অনুষ্ঠান। তার কথার ওপর বিশ্বাস করেই আমি সেখানে গিয়েছি। কিন্তু পথের মাঝে যখন জানতে পারি তখন আর উপায় ছিলো না। আমি ফিরে আসতে চাইলেও নিরব আশ্বস্ত করেছিলেন কিছু হবে না।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন প্রত্যাশী এই নায়িকা বলেন, আগের মতো অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত নই, যে কারণে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে যাই। কারণ আমাকে অর্থ উপার্জন করতে হয়। অনেকে আমাকে ফিতাকাটা নায়িকা বলেন সেসব শুনেও হজম করি। কারণ আমাকে বাঁচতে হবে। আমার একটা ছেলে আছে। আমি শিল্পী পরিচয়ে বাঁচতে চাই।
অতীত নিয়ে অপু বলেন, শিল্পীদের রাজনীতি করা উচিৎ না। এমন কিছু করা উচিৎ না যা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পড়ে। আমি স্বীকার করছি আমরা অনেকেই বাড়াবাড়ি করেছি। তবে এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি।
আজকের বিতর্কিত অবস্থা তৈরির পেছনে নিরবের ভূমিকাকে দায়ী করে বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমি রাজনৈতিক আয়োজন থেকে নিজেকে দূরে রেখেছি। এমনকি শাহাদাৎ হোসেন লিটন ভাইয়ের একটা সিনেমা রাজনৈতিক গল্প শুনে না করে দিয়েছি। সত্যি বলতে আমি আর এসব নিতে পারছি না। বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে চাই- যোগ করেন আওয়ামী শাসনামলে অনুদানের সিনেমার প্রযোজক অপু বিশ্বাস।
এই আয়োজনে মঞ্চে বক্তব্য দিতেও দেখা যায় অপু বিশ্বাসকে। তিনি বলেন, ‘সেই ঢাকা থেকে সাত ঘণ্টা জার্নি করে এসেছি আপনাদের সঙ্গে দেখা করব এবং কথা বলব বলে।’
অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি বগুড়ার মেয়ে। এর আগে রাজবাড়ী এসেছিলাম কিন্তু খোকসা আসা হয়নি। এখানে আনার জন্য প্রাণপ্রিয় বড় ভাই রিপন ভাইকে (স্থানীয় বিএনপি নেতা) ধন্যবাদ জানাই। রিপন ভাই আপনাদের সেবা করতে চান।
চিত্রনায়ক নিরব বলেন, ‘আমি সিনেমার মানুষ। সিনেমা নিয়ে কথা বলতে বেশি পছন্দ করি। কিন্তু এখানে এসেছি আপনার এলাকায় রিপন ভাইয়ের আমন্ত্রণে। শুধু এতটুকুই বলব, আপনারা রিপন ভাইয়ের পাশে থাকবেন, আমার বিশ্বাস উনি আপনাদের সঙ্গেই থাকবেন।’
সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, খোকসা পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন হোসেনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তবে অনেকের দাবি দলটির কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও জাসাস নেতারা এই দায় এড়াতে পারেন না।
এদিকে আওয়ামী ব্যানার থেকে বিএনপির ব্যানারে আসা চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের এমনকাণ্ডকে অনেকে এটাকে রাজনৈতিক অভিলাষ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। এরমধ্যে চিত্রনায়িকা পরীমণি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন- “আগে ছিল ৬ মাস হিন্দু ৬ মাস মুসলিম। এখন ৬ মাস আওয়ামিলীগ ৬ মাস বিএনপি পল্টিবাজ, সুবিধাবাদি কারে বলে দিদি কিন্তু দেখিয়ে দিলেন । বাপরে বাপ কি জিনিস এটা।”
অপু-শাকিব অভিনীত একাধিক ব্যবসাসফল সিনেমার পরিচালক বদিউল আলম খোকন লিখেছেন- “অপুকে এই অনুষ্ঠান এ নেওয়ার জন্য যারা যারা দায়ী তদন্ত সাপেক্ষে তাদের সবার বিচার করতে হবে। ”
যাত্রাপালার অধিকর্তা ও অভিনেত্রী প্রিন্সেস বিউটি লিখেছেন, “রাজনীতি করার অধিকার আমাদের সকলের আছে। তাই বলে গতকাল আওয়ামী লীগ আজকে বিএনপি এ আবার কোন ধরনের ব্যবসা? ডি বি হারুনের হোটেলের ভাত খাওয়া এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে চলবে কেন? ওয়াক থু...।”
পরিচালক জ্যাম্বস কাজল লিখেছেন, “ওরতো নাক মুখ দিয়ে এখনো দুধ চুবাই চুবাইয়ে পড়তেছে,,, আর নিচে বুঝি এখনো কিছু গজায় ও নাই 😂😂😂 নিরবের উপর তো দোষ দেবেই 😂😂😂 ডাস্টবিনের কীট কুলাঙ্গারের গুষ্টি।”
উল্লেখ্য, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অপু বিশ্বাস তাদের পক্ষে বেশ সক্রিয় ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের নিয়মিত তারকা মুখ। এমনকি সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়েও ছিলেন তিনি।
আজকালের খবর/আতে