
অনুমতি ছাড়া কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহ আবদুল করিমের দুটি গান বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করার অভিযোগে ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে বাউল পরিবারের সদস্যরা। গান দুটি হলো ‘রঙিলা বাড়ৈ’ ও ‘কোন মিস্তরি নাও বানাইছে’।
দেশের অন্যতম টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন লিমিটেড (জিপি)-এর বিরুদ্ধে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
শাহ আবদুল করিমের পুত্র শাহ নূরজালালের পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার রাজিন আহমেদ (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট) গত ২৭ আগস্ট গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নোটিশ প্রদান করেন।
নোটিশে অভিযোগ আনা হয়েছে, গ্রামীণফোন অনুমতি, লাইসেন্স বা স্বীকৃতি ছাড়া শাহ আবদুল করিমের কপিরাইটকৃত গান টেলিভিশন বিজ্ঞাপন ও ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করেছে—এর মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের একটি টিভিসি (ইউটিউবে আপলোডকৃত) এবং ২০২২ সালের একটি বিজ্ঞাপন (ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রচারিত)।
অভিযোগে বলা হয়েছে, কপিরাইটকৃত সংগীতকর্ম অনুমতি ছাড়া পুনরুৎপাদন ও সম্প্রচার। শাহ আবদুল করিমকে কৃতিত্ব না দিয়ে তার নৈতিক অধিকারের লঙ্ঘন। জিপির ফোরজি প্রচারণায় ব্যাপক বাণিজ্যিক লাভসহ সংগীতকর্মের অতিরিক্ত বাণিজ্যিক ব্যবহার। প্রকৃত কপিরাইটধারীর ক্ষতির বিনিময়ে অন্যায়ভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ।
নোটিশে দাবি করা হয়েছে, শাহ আবদুল করিমের গান অবিলম্বে অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ইউটিউব, ফেসবুক, টেলিভিশনসহ সব প্ল্যাটফর্ম থেকে লঙ্ঘনকারী কনটেন্ট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে হবে। শাহ আবদুল করিমকে লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০ কোটি টাকা (প্রতিটি গান অনুযায়ী ১০ কোটি টাকা) প্রদান করতে হবে। ভবিষ্যতে এমন লঙ্ঘন আর না করার বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, যদি গ্রামীণফোন ৭ দিনের মধ্যে উল্লিখিত দাবি পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে শাহ আবদুল করিমের পরিবার কপিরাইট আইন, ২০২৩ অনুযায়ী দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করবে। এর মধ্যে ক্ষতিপূরণ দাবি, অবৈধ কনটেন্ট ধ্বংস, আদালতের নিষেধাজ্ঞা এবং গ্রামীণফোনের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের ফৌজদারি দায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
আইনি নোটিশ প্রদানকারী ব্যারিস্টার রাজিন আহমেদ বলেন, ‘‘শাহ আবদুল করিমের গান কেবল সংগীত নয়—এগুলো বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের অংশ। ‘রঙিলা বাড়ৈ’, ‘কোন মিস্তরি নাও বানাইছে’ দুটি গান ব্যবহার করেছে গ্রামীণফোন। অনুমতি ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার কেবল অবৈধ নয়, বরং চরম অসম্মানজনক। আমরা তার উত্তরাধিকার রক্ষায় আইনের সর্বোচ্চ ব্যবস্থাই গ্রহণ করবো।’’
শাহ আবদুল করিমের ছেলে শাহ নূরজালাল বলেন, ‘আমরা গ্রামের মানুষ। আইন-কানুন অতোটা বুঝি না। বাবার সব গান কপিরাইট করা আছে। এমনি অনেকেই গান করেন সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে গান ব্যবহার করলে আমাদের অনুমতি নেওয়া উচিত। সেখান থেকে যে আয় হয় তারও একটা অংশ আমাদের দেওয়া উচিত। তা না হলে কেমন হয় বিষয়টা।’
আজকালের খবর/আতে