প্রকাশ: রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫, ৫:০৯ পিএম

কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠার ৮৭ বছর পেরিয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কেরুজ চিনিকলের বর্জ্য পদার্থ পরিবেশ দূষিত করে আসছিলো বলেই এলাকাবাসীর ছিলো বিস্তর অভিযোগ। সে সময় পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ গ্রহনও করেছিলো নানামুখি ব্যবস্থা। সে বর্জ্য পদার্থ দিয়েই এখন তৈরি হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব জৈব সার। সাশ্রয় হচ্ছে বৈদিশিক মুদ্রা। চিনিকল কর্তৃপক্ষ প্রতি বছরই বাড়তি আয় গুনছে আকন্দবাড়িয়া জৈব সার কারখানা থেকে। একযুগ আগে এ সার কারখানার কার্যক্রম শুরু হয়। মিল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ও এলাকার চাষীদের চাহিদা পূরণ এবং জমির উর্বর ক্ষমতা বৃদ্ধির কথা ভেবেই প্রতিষ্ঠা করেছে জৈব সার উৎপাদন কারখানা। প্রতি বছরেই লক্ষামাত্রা অতিক্রম হচ্ছে সার উৎপাদন ও বাজারজাতের ক্ষেত্রে।
কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ফ্রেরুয়ারিতে তৎকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জৈব সার কারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য বরাদ্দ দেয় ৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। চিনিকলের আওতাধীন আকন্দবাড়িয়া বীজ উৎপাদন খামারের নিজস্ব ২.৮৩ একর জমির ওপর সার কারখানা নির্মান কাজ শুরু করা হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে। ভারতের টরিও চিম টেকনো লিগাল সার্ভিস প্রাঃ লিমিটেডের কারিগরি সহায়তায় মেশিনারিজ স্থাপনের কার্যক্রম সম্পন্ন করে। চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় দ্রæত সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে পরিক্ষা মূলক উৎপাদন শুরু করে। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালের মে মাসে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করা হয়।
সার কারখানার প্ল্যান্ট ম্যানেজার জাকির হোসেন জানান, শুরুতে বছরে ৯ হাজার মেট্রিকটন সার উৎপাদন লক্ষ থাকলে জমি স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে শুরু থেকে বাড়ছে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ। নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এ সার এখন বাজারজাতকরণ হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করা হয় ২০১৫ সালের ১৭ এপ্রিল। শুরুর দিকে মুনাফা অর্জন কম হলেও কয়েক অর্থ বছরের সদর দপ্তরের নির্ধারিত লক্ষমাত্রা অতিক্রম হচ্ছে সার উৎপাদন ও বাজারজাতের ক্ষেত্রে। ফলে মুনাফা অর্জনও হচ্ছে সন্তোষজনক। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে সদর দপ্তরের বেধে দেয়া লক্ষমাত্রা ছিলো ১ হাজার ২শ মেট্রিকটন, সে লক্ষমাত্রা অর্জন করে অতিরিক্ত আরো ৪২০ মেট্রিকটন সার উৎপাদন করা হয়েছে। ফলে ওই অর্থ বছরে ১ হাজার ৬২০ মেট্রিকটন সার উৎপাদন করা হয় আকন্দবাড়িয়া জৈব সার কারখানায়। উৎপাদিত সারের মধ্যে ১ হাজার ১৮৮ মেট্রিকটন বাজারজাত করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১ হাজার ২শ মেট্রিক টন লক্ষমাত্রা নির্ধাররিত থাকলে তা টপকিয়ে উৎপাদন করা হয়েছে ১ হাজার ৬৩০ মেট্রিকটন। যা লক্ষমাত্রার তুলনায় ৪৩০ মেট্রিকটন বেশি। ফলে মুনাফা অর্জনের অংকটাও কোটি টাকা পেরুতে পারে। গত অর্থ বছরে জৈব সার বাজারজাত করা হয়েছে ২ হাজার ১৯ দশমিক ৭৫ মেট্রিকটন। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা বাড়িয়ে র্নিধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪শ মেট্রিকটন। এ লক্ষমাত্রাও অতিক্রম হবে বলে আশাবাদি প্লান্ট ম্যানেজার জাকির হোসেনের।
কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান জানান, আকন্দবাড়িয়া জৈব সার কারখানা দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এ সার তৈরীতে কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে চিনি কারখানার উপজাত প্রেসমাড এবং ডিস্টিলারী কারখানার বর্জপদার্থ। কাচামাল হিসেবে প্রতিবছর ১৮ হাজার মেট্রিকটন প্রেসমাড ও ৪০ হাজার মেট্রিকটন বর্জ স্পেন্টওয়াস ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কেরুজ চিনিকল থেকেই প্রেসমার্ড পাওয়া যায় প্রায় ২ হাজার মেট্রিকটন। বাকি প্রেসমাড দেশের অন্যান্য চিনি কারখানা থেকে সংগ্রহ করতে হয় কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষকে। এ দুটি বর্জ সার কারখানায় কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করে এ্যারোবিক কম্পোসটিং পদ্ধতিতে পরিবেশ বান্ধব জৈব সার উৎপাদন করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে এ বর্জ পরিবেশ দূষনের কারণে ফেলে দেয়া হতো মাথাভাঙ্গা নদীতে। এ সার রসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করে চাষিকূল লাভবান হচ্ছে। ফলে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমছে। সাশ্রয়ী হচ্ছে বৈদিশিক মুদ্রা।
কেরুজ আকন্দবাড়িয়া সার কারখানায় উৎপাদিত সারের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে হ্রাস পায় জমির উর্বর ক্ষমতা। যার কারণে প্রতি বছরই একই জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়াতে হয়। কেরুজ উৎপাদিত জৈব সার ব্যবহারে মাটির উর্বারতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, দুর করে মাটির বিষাক্ততা। সর্বপরি জৈব সার ফসলের গুনগত মান বৃদ্ধি করে থাকে। ৫০ কেজির প্যাকেটিং এ সার বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫০ টাকা। এলাকার লাইসেন্সি সার বিক্রেতাদের মাধ্যমেই কৃষকরা কেরুজ উৎপাদিত জৈব সার সংগ্রহ করতে পারবে। সুধিজনেরা মন্তব্য করে বলেছেন পরিপূর্ণভাবে কারখানাটি চালু হওয়ায় একদিকে যেমন পরিবেশ দূষন রোধ হয়েছে, অন্যদিকে কেরুজ চিনিকলের স্পেন্ট ওয়াসের কারণে মাথাভাঙ্গা নদীর পানিও দূষিত হচ্ছেনা।
আজকালের খবর/বিএস