
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লোক প্রশাসন বিভাগে ক্লাসে প্রবেশ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা এবং হট্টগোল সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) বিভাগের ২০৫ নং কক্ষে (ক্লাসরুম) শাখা ছাত্রশিবির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিভাগের শিক্ষক, প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক বসে আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ক্লাসের সময় কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনকে (ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র আন্দোলন ইত্যাদি) এক্সেস দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ক্লাসরুমে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন ছাত্রশিবিরে অন্তত ১০-১২ জনের প্রতিনিধি দল। ২-৩ মিনিট পর ক্লাস নিতে প্রবেশ করেন অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান। ক্লাস পিরিয়ডে প্রতিনিধি দলকে বের হতে বললে অনুমতি নিয়েছে বলে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে ক্লাসের বাহিরেও হট্টগোল সৃষ্টি হয়।
ক্লাসে অবস্থানরত প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, শিবিরের কিছু ভাই আসছিলেন কথাবার্তা বলতে। শিবিরকে শিক্ষার্থীরা ভুল বুঝে এবং তাদের কাজের মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় খুঁজে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আলাপ করছিলেন। স্যার ক্লাসে প্রবেশ করে প্রথমে ওনারা (প্রতিনিধি) কারা জিজ্ঞেস করে এবং ‘গেট আউট’ বলে বের হতে বললেন। তখন ‘অনুমতি নিয়েছি, একটু শেষ করে বের হচ্ছি স্যার’ বলে স্যারকে জানান এবং ‘সভাপতির বিষয় না,, এটা আমার ক্লাসের সিডিউল’ বলে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে স্যার ক্লাস ক্যানসেল করে চলে যান।
এদিকে উপস্থিত শিবির নেতারা জানান, নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। তখন প্রফেসর ড. মতিনুর স্যার ক্লাসের উদ্দেশ্য তিনি ক্লাস রুমে প্রবেশ করে। তখন তিনি উচ্চকণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন— ‘তোমরা কারা’? পরে শিবির সেক্রেটারি বলেন, ‘আমরা ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হতে এসেছি’। তখন স্যার বললেন, ‘ক্লাসের সময় এখানে কী! গেট আউট, গেট আউট।’ তখন ইউসুব ভাই (শিবির সেক্রেটারি) বলেছেন ‘জ্বি স্যার চলে যাচ্ছি।’ পরে স্যার বলেন, ‘এখানে কার থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছো।’ সেক্রেটারি— বিভাগের সভাপতি স্যারের অনুমতি নিয়ে এসেছি। আমার ক্লাসে সভাপতি অনুমতি দেওয়ার কে? স্যার আবারও বললেন, গেট আউট! এসময় ছাত্র শিবিরের নেতৃবৃন্দ বের হয়ে আসে। তখন স্যার আবার দুই একজনকে ডেকে ভিতরে নিয়ে জিজ্ঞেস করেন সভাপতির থেকে অনুমতি নিয়েছো? তখন তারা বলেন, জ্বি স্যার নিয়েছি। তখন সভাপতিকে স্যার ফোন দেন। সভাপতি স্যার তখন অফিস থেকে বের হয়ে ক্লাস রুমের দিকে যান এবং মতিনুর স্যার অফিসের দিকে যেতে লাগেন। তখন স্যারদের মাঝখানে দেখা হয়। তখন শিবির নেতৃবৃন্দ স্যারকে বলেন, আমরা তো আপনার ছাত্র, শিক্ষক হিসেবে একটু সৌজন্যতাবোধ দেখালে ভালো হতো। আমরা তো সভাপতি স্যার থেকে অনুমতি নিয়েছি। তখন স্যার বলেন, ‘সভাপতি কে? আমি ভিসিকেও গুনি না।’ পরে সভাপতি স্যার মতিনুর স্যার ও ছাত্র শিবির নেতৃবৃন্দ সভাপতির রুমে নিয়ে যান। এসময় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়ে যায়।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ইউসুব আলী বলেন, ‘আমরা বিভাগের সভাপতির অনুমতি নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। একটা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হইছিলো। মাঝখানে কমিউনিকেশন গ্যাপ ছিলো। পরবর্তীতে বিষয়টার সমাধান করা হয়েছে।’
জানতে চাইলে অধ্যাপক মতিনুর রহমান বলেন, ‘আমি জানতাম না তারা অনুমতি নিয়েছে। বিভাগের সভাপতি আমাকে একটু জানিয়ে দিলে দশপাঁচ মিনিট পরে যেতে পারতাম। ক্ষমা চেয়ে সমাধান হয়েছে। তবে বিষয়টা অপ্রত্যাশিত ছিলো।’
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম বলেন, ‘কোন শিক্ষকের ক্লাস ছিল কি-না জানতাম না। ক্লাসের সিডিউল বিষয়ে জানলে অনুমতি দিতাম না। এই বিষয়টা একটু মিসটেক হইছে। পরে ওদের সবাইকে নিয়ে বসছিলাম। সেখানে স্যাররাও ছিলো। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিমাংসা করে দিয়েছি।’
আজকালের খবর/ওআর