এনসিপির ‘নতুন বাংলাদেশের’ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫, ৭:৩২ পিএম
‘নতুন বাংলাদেশের’ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ রবিবার সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে এনসিপি আয়োজিত এক সমাবেশে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। 

তিনি বলেন, আমাদের দলের জন্ম, এনসিপির জন্ম, আমাদের সকল শ্রম, আপনাদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। আপনাদের অভিযোগ-অনুযোগ, প্রত্যাশা আমাদের ভাবনাকে করেছে গভীর, আমাদের লক্ষ্যকে করেছে সমৃদ্ধ। তাই ঠিক এক বছর পর  আমরা আবার শহীদ মিনারে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকের ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করছি।

এনসিপির ২৪ দফা ইশতেহারে যা আছে- 

১. নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক: 
উপনিবেশবিরোধী লড়াই, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের আকাক্সক্ষার ভিত্তিতে আমরা বহু ভাষা ও সংস্কৃতি ও জাতির নতুন বাংলাদেশ তৈরি করবো। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে, আমাদের রাষ্ট্রের নতুন যাত্রায়, আমাদের প্রথম অঙ্গীকারই হচ্ছে গণপরিষদের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান। জুলাইয়ের আকাক্সক্ষা পূরণে, আমাদের এই নতুন সংবিধান, একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ করে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনকল্যাণমুখী সেকেন্ড রিপাবলিক গঠন করবে। আমাদের নতুন রাষ্ট্র ব্যক্তির জীবন, জীবিকা, মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণ করবে। এই নতুন সংবিধান আমাদের রাষ্ট্রের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার সুনির্দিষ্ট বিভাজন ও ভারসাম্য নিশ্চিত করবে। আমরা জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করবো। 

২. জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার:
এই জনপদের মানুষের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার লড়াই, এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ই আমাদের প্রেরণা। আমরা জুলাইয়ে সংঘটিত গণহত্যা, শাপলা গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময়ে সংঘটিত সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করবো। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করে আজীবন তাদের পাশে দাঁড়াবো। জুলাইয়ের জাতীয় ঐক্য ও হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মহিমাকে ধারণ করার জন্য আমরা জুলাইয়ের স্মৃতি রক্ষা করব এবং সবসময় ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সহযোদ্ধাদের পাশে থাকবো। 

৩. গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার:
আমরা এমন একটি ইনসাফের রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই, যেখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো হবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পক্ষপাতহীন, নৈর্ব্যক্তিক, মানবিক ও গণমুখী। জনসেবাই হবে তাদের মূলমন্ত্র। একইসঙ্গে রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ জবাবদিহিতা নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে, যেন এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন কাজ করে নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়ার প্রবণতাকে প্রতিহত করতে পারে। আমরা এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে জনগণ শুধু নির্বাচনের দিন সকল ক্ষমতার উৎস হবে না, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আইন ও এর গঠন প্রক্রিয়ার মৌলিক পরিবর্তন সাধন করবো, এবং রাষ্ট্র-কর্তৃক নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের আইন করার মাধ্যমে নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব হ্রাস করবো এবং সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টি করব। 

৪. ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার: 
আমাদের রাষ্ট্রে স্বাধীন বিচার বিভাগ ক্ষমতাবানদের পক্ষে অন্ধ অবস্থান নিবে না, বরং মজলুমকে তার প্রাপ্য ন্যায়বিচার বুঝিয়ে দিবে। এছাড়া একটি সত্যিকারের জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে আমরা ঔপনিবেশিক আমলের সকল আইনকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের ভিত্তিতে যুগোপযোগী করবো। মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে এমন কোনো আইন তৈরি করা হবে না। আমরা বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয়কে পরিপূর্ণ আর্থিক স্বাধীনতা প্রদানসহ সম্পূর্ণভাবে ক্রিয়াশীল করবো। আমরা গরিবদের জন্য বিনামূল্যে আইনগত সহায়তার ব্যস্তি বৃদ্ধি করব। কিশোর সংশোধনী ব্যবস্থার মানবিকীকরণ ও সমাজে পুনর্বাসনের সুব্যবস্থা করব।

৫. সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন:
বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রকে দলীয়করণের মাধ্যমে শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে; আমরা প্রশাসনে সকল প্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করব। আমলাতন্ত্রকে সুদক্ষ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা উন্নত প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন খাতের যোগ্য ও বিশেষজ্ঞদের সরকারে অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো। নিয়োগ, বদলি, পদায়ন ও প্রমোশনের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাই হবে একমাত্র মানদণ্ড। সরকারি কর্ম কমিশনের সকল প্রশাসনিক নিযোগের ক্ষেত্রে সততা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে যথাযথ নিয়োগ-কাঠামো তৈরি করব। রাষ্ট্রীয় সম্পদ চুরি-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মচ্ছব, বিচারহীনতা ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে আমরা যেকোনো দুর্নীতির দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করবো। এছাড়া পরিবার ও সমাজে দুর্নীতিবিরোধী মূল্যবোধ তৈরি ও সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা কারিকুলামে আমূল পরিবর্তন আনবো এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ কর্মসূচি চালু করবো।

৬. জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী: 
আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে, ওয়ারেন্ট ছাড়া তুলে নিয়ে যেতে না পারে। আমরা ঔপনিবেশিক আমলের ১৮৬১ ও ১৮৯৮ সালের পুলিশ আইন যুগোপযোগী করবো। আমরা গড়ে তুলবো এমন এক কাঠামো, যেখানে পুলিশ হবে মানবাধিকারের রক্ষক, নাগরিকের সেবক। আমরা পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর রাজনৈতিক অপব্যবহার বন্ধে ও তাদের বদলি-পদায়নে স্বচ্ছ ব্যবস্থা চালু করতে একটি স্থায়ী পুলিশ কমিশন গঠন করবো। আমরা র‌্যাব বিলুপ্ত করব এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহার বন্ধ করতে সুস্পষ্ট আইনি কাঠামো তৈরি করব।

৭. গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার: 
মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসছে, এতে শহরগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে। আমরা গ্রামের স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে চাই। আমরা গ্রামে উৎপাদন ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়িয়ে স্বনির্ভর গ্রাম তৈরি করব। আমরা স্থানীয় পর্যায়ে শাসনব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকল্পে গ্রাম পার্লামেন্ট গঠন করবো এবং এই পার্লামেন্টের হাতে স্থানীয় সমস্যা সমাধান, স্থানীয় উন্নয়ন তদারকির দায়িত্ব অর্পণ করবো।

আমরা স্থানীয় সরকার কাঠামোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করবো এবং স্থানীয় সরকারকে স্থানীয় উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করবো। আমরা একটি স্বাধীন স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করব, যা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করবে।

৮. স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ: 
আমরা সংবাদমাধ্যমের শতভাগ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি এবং যথাযথ আইনি ও নীতি কাঠামোর মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করবো। আমরা প্রেস কাউন্সিলকে যুগোপযোগী ও কার্যকর করবো। এছাড়া নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা করপোরেশনের কাছে যাতে বহু গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিকানা যেন কুক্ষিগত না হয়, রাজনৈতিক দলের স্বার্থের হাতিয়ার না হয়, বরং গণমাধ্যম জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে আমরা তার আইনি কাঠামো তৈরি করব। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা শক্তিশালী করার প্রয়াসে নাগরিক সমাজের সক্রিয়তা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ অবারিত করতে নাগরিক সমাজের অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নীতি কাঠামো তৈরি করা হবে। আমরা গণমাধ্যমে মিসইনফরমেশন/গুজব ও বিভ্রান্তিকর সংবাদের বিরুদ্ধে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করবো।

৯. সর্বজনীন স্বাস্থ্য:
আমরা এমন একটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো, যেখানে অর্থের অভাবে কেউ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবেন না। এমন জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো, যাতে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে অ্যাম্বুলেন্সেই জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা শুরু করা যায়। সে উদ্দেশ্য সারা দেশে জিপিএসচালিত অ্যাম্বুলেন্স ও ডিসপ্যাচ ব্যবস্থা তৈরি করব। আমরা ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড সিস্টেম চালু করব, যাতে দেশের সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত থাকবে। ফলে প্রতিটি নাগরিকের একটি ইউনিক হেলথ আইডি থাকবে, যাতে চিকিৎসাসংক্রান্ত সকল তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষিত থাকবে, কখনো হারাবে না। আমাদের জনপদের মানুষের জন্য নতুন ও কার্যকর চিকিৎসা আবিষ্কার করতে আমরা বিশ্বমানের একটি জাতীয় বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করব।

১০. জাতিগঠনে শিক্ষানীতি: 
আমরা শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ভবিষ্যতের উদ্ভাবন, শিল্পায়ন ও অর্থনীতির জন্য প্রস্তুত একটি দক্ষ, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলব। শিক্ষা পণ্য নয়, অধিকার। বিজ্ঞান, গণিত, প্রকৌশল ও চিকিৎসা শিক্ষায় শক্ত ভিত তৈরিতে আমাদের থাকবে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা। আমাদের ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নৈতিকতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন সুনাগরিক তৈরি করবে। শিক্ষার ভিত্তি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে মানসম্পন্ন গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান সৃষ্টি। আমরা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে বাংলা মাধ্যম, মাদরাসা ও ইংরেজি মাধ্যমসহ বিদ্যমান সকল ধরনের শিক্ষার মাধ্যম ও পদ্ধতিগুলোর একটি যৌক্তিক সমন্বয় করব এবং আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতির চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে জাতীয় পাঠ্যক্রমকে আধুনিকায়ন করব। কর্মমুখী, বৃত্তিমূলক, নার্সিং শিক্ষা এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণকে আন্তর্জাতিক মানের, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলবো, যাতে সকল নাগরিকের জন্য টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিশেষ চাহিদা-সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা প্রশিক্ষিত শিক্ষক, অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণ ইত্যাদি বিষয়ে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করব। আমরা শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে বহির্বিশ্বের সাথে সংগতি রেখে পৃথক বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্রীয় নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমে জাতীয়করণ করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতি ও তার ওপর জাতীয় রাজনীতির প্রভাবের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

১১. গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব:
আমরা উন্নত বিশ্ব থেকে প্রযুক্তি স্থানান্তর ও দেশে প্রযুক্তি-জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করবো। আমরা বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণায় সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা ও যৌথ উদ্যোগে ৫০ বছর মেয়াদি বিভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করবো। তথ্য ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমিশন গঠন করবো।

১২. ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মর্যাদা:
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হওয়া সত্ত্বেও, মানুষের ধর্মীয় পরিচয় ও আচরণকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্যাতনের উপলক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা সকল ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীর ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে একটি বহুভাষা, বহু-সংস্কৃতি, বহু-জাতিভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ব। আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং ঐতিহ্যের শ্রদ্ধাশীল। ইসলাম-বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা এবং জাতি-পরিচয়ের কারণে যেকোনো প্রকার বৈষম্যমূলক আচরণ, নির্যাতন ও নিপীড়নকে আমরা শক্তহাতে প্রতিহত করবো। আমরা সকল জাতিসত্তার ভাষা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশের জন্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোকে কার্যকর করবো এবং বিদ্যালয়ে নিজ-নিজ মাতৃভাষা শিক্ষার সুযোগ অবারিত করবো। 

১৩. নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের পরও রাষ্ট্র জাতীয় জীবনে ব্যাপক হারে নারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে নিম্নকক্ষে ১০০টি সংরক্ষিত আসনে নারী প্রতিনিধিদের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো, যার সংখ্যা রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস করা হবে। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীদের প্রাপ্য অধিকার দ্রুত বুঝে পেতে সর্বপ্রকার আইনি সহায়তা প্রদান করা। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বেতন কাঠামোতে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। পরিবারে ও আমাদের সার্বিক অর্থনীতিতে গৃহিণী নারীদের অবদান দেশজ উৎপাদন হিসেবে মর্যাদা পাবে ও মোট দেশজ উৎপাদনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রতিটি থানায় নারী সহিংসতা প্রতিরোধ সেল ও নারী পুলিশ নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হবে। ধর্ষণ মামলার বিচার প্রক্রিয়া ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে ফাস্ট ট্র্যাক ট্রাইব্যুনাল চালু করা হবে এবং ভিকটিমদের ব্যক্তি পরিচয় গোপন রাখার জন্য গণমাধ্যম নীতিমালা জারি করা হবে। কর্মক্ষেত্রে ব্রেস্টফিডিং ও স্যানিটারি উপকরণ ব্যবহারের নির্দিষ্ট স্থান রাখার নিয়ম করা হবে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র, অনলাইন ও যানবাহনে নারীদের হয়রানি ও নির্যাতন প্রতিরোধে আইনি কাঠামোর যথাযথ সংস্কারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তির বিধান করা হবে। আমরা কর্মজীবীদের পূর্ণ বেতনে অন্তত ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ও এক মাস পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করব। নারীদের কর্মস্থলে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হবে। সকল নারীর জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসামগ্রীর প্রাপ্যতা সুলভে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। অনুন্নত ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চল, মাদ্রাসা ও পাহাড়ি অঞ্চলের স্বল্প আয়ের পরিবারের নারীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি চালু করব। বাল্যবিবাহ ও যৌতুক বন্ধের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমে ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের সম্পৃক্ত করব।

১৪. মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি:
অর্থনীতির মূল ভিত্তি হওয়া উচিত মর্যাদাসম্পন্ন মানুষ। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে মানুষের সামগ্রিক বিকাশ। কেবল দক্ষতা নয়, মানুষের উদ্দেশ্য, মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গঠনে বিনিয়োগ করতে হবে। আমরা বাজার-ভিত্তিক কিন্তু কল্যাণমুখী অর্থনৈতিক দর্শন মেনে একটি আধুনিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবো, যেখানে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বরদাশত করা হবে না, অলিগার্ক শ্রেণির প্রভাব ধ্বংস হবে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার বিকাশ নিশ্চিত হবে। আমরা উন্নয়নকে শুধু জিডিপির সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করবো না। নাগরিকদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, ইন্টারনেট এসব মৌলিক সেবা ও সেবার মান এবং প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশের সুরক্ষাই হবে আমাদের উন্নয়নের মানদণ্ড।

আমরা বেকার ভাতা, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিক ভাতা, শিশু ভাতা প্রভৃতি সামাজিক সুরক্ষা সেবাকে নাগরিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো। 

১৫. তারুণ্য ও কর্মসংস্থান:
আজ বাংলাদেশে প্রায় ৩০ লাখ বেকার, এদের প্রতি তিনজনের দুইজনই তরুণ। সকল কর্মক্ষম নাগরিকের জন্য দেশে ও বিদেশে মর্যাদাপূর্ণ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আমরা রপ্তানিমুখী শ্রমঘন-শিল্পের বহুমুখীকরণ এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলব। কর্মক্ষেত্রে প্রায়োগিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে শিক্ষাজীবনে সরকারি ও বেসরকারি খাতে বেতনভুক্ত ইন্টার্নশিপের সুযোগ সম্প্রসারণ করবো। প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নফাঁস, দুর্নীতি, সুপারিশ ও স্বজনপ্রীতি সম্পূর্ণ দূর করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবো এবং গ্রেড ভিত্তিক সমন্বিত পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করবো। আমরা ওই সেক্টর ও দেশভিত্তিক সুনির্দিষ্ট দক্ষতা ও ভাষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলবো। আমরা বিদেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে বিভিন্ন কারিগরি পেশায় প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানের আওতা বাড়াবো এবং সেগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উত্তীর্ণ করতে বিদেশি প্রত্যয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করবো। তরুণদের মাদক ও অপরাধপ্রবণতা রোধে প্রতি জেলায় আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া কমপ্লেক্স তৈরি করব।

১৬. বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি: 
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে রপ্তানির বহুমুখীকরণ এবং বিকল্প বাজারে প্রবেশাধিকারে বিনিয়োগ এখন সময়ের দাবি। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণে আমরা বিভিন্ন দেশ ও ব্লকের সাথে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করবো। আমরা গার্মেন্টসের বাইরে উচ্চ সম্ভাবনাময়, শ্রমঘন খাতগুলোতে বিনিয়োগ ও প্রণোদনা জোরদার করবো, যেমন, চামড়া ও পাদুকা শিল্প, আসবাব ও হোম ডেকর, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি-প্রক্রিয়াজাত পণ্য প্রভৃতি। পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন উচ্চ মূল্য সংযোজন খাত যেমন, ঔষধশিল্প, ইলেকট্রনিক্স, এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রসারে বিশেষ নীতি সহায়তা প্রদান করবো। এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে দেশের ঔষধ শিল্পে সৃষ্ট সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নেব। ব্যবসা সহজিকরণ, জ্বালানি নিরাপত্তা ও আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে বৈদেশিক বিনিয়োগের এক আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করবো। আমরা ৫০ বছর মেয়াদি শিল্প উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে শিল্পখাতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠন করবো। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আমরা আমাদের তুলনামূলক সুবিধার (কম্পারেটিভ অ্যাডভান্টেজ) শ্রমঘন খাতগুলোতে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান করবো। আমরা চট্টগ্রাম, মংলা, মাতাবাড়ি বন্দরকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও আশেপাশের অঞ্চলের একটি লজিস্টিক হাব হিসেবে গড়ে তুলবো। ইকো ট্যুরিজম তথা পর্যটন শিল্পের বিকাশে উদ্যোগ নিব।

১৭. টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব
আমাদের নতুন বাংলাদেশে কৃষি পণ্যের সরবরাহ ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে, পাশাপাশি ক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণ হবে। আমরা কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি, জলবায়ু-সহনশীল জাতের বীজ, পরিবেশবান্ধব সার এবং প্রযুক্তিনির্ভর সহায়তার ওপর যথাযথ ভর্তুকি প্রদান করব-যার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা ও লাভজনকতা বাড়ানো হবে। কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমকে দক্ষ ও আধুনিক করে গড়ে তোলা হবে, প্রশিক্ষণ ও মোবাইলভিত্তিক পরামর্শসেবা সহজলভ্য করা হবে। ফসল, মাছ ও প্রাণিসম্পদ খাতে অঞ্চলভিত্তিক অভিযোজন কৌশল গ্রহণ করে উপকূলীয় লবণাক্ততা ও খরা প্রবণ এলাকার জন্য টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা হবে। খাদ্যদ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে আমরা টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে খাদ্যবিক্রি, বাজার বাফারিং অপারেশন এবং প্রয়োজনীয় আমদানিকে কৃষি উৎপাদন পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালনা করবো। 

১৮. শ্রমিক-কৃষকের অধিকার: 
আমরা বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহ, অভিবাসী, পরিবহন ও স্বনিয়োজিত সকল শ্রমিকের স্বীকৃতি ও আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করবো। আমরা দিনমজুর, চা শ্রমিক, গৃহকর্মী, নির্মাণকর্মী, পরিবহন কর্মীসহ সকল নিম্নআয়ের শ্রমিকের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অঞ্চল-ভিত্তিক আয়-সক্ষমতা ও ক্রয়ক্ষমতার নিরিখে একটি সমন্বিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো তৈরি করবো। আমরা শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, আইনি সুরক্ষা ও পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাব থেকে রক্ষা এবং শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার সামগ্রিক সুরক্ষার জন্য ‘স্থায়ী শ্রম কমিশন’ গঠন করবো। 

১৯. জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা:
আমরা জাতীয় প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জনগণের সার্বভৌম মালিকানা প্রতিষ্ঠা করবো। প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণে আমরা দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করবো। আমাদের নীতিমালায় প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার হবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদার সমন্বয় করে। এছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদে স্থানীয় জনগণের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা হবে। সুন্দরবনসহ দেশের জীববৈচিত্র্য ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলকে প্রাকৃতিক সম্পদের অংশ হিসেবে সুরক্ষিত রেখে ক্ষতিকর শিল্পায়ন রোধ করব।

২০. নগরায়ণ, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা:
অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে আমাদের শহরগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমরা রাজধানীসহ শহরগুলোতে নদী ও খালকেন্দ্রিক নগর ব্যবস্থাপনা এবং সমন্বিত উচ্চগতির গণপরিবহনমুখী ও নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলব। আমরা গ্রাম ও শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ ও সবুজ স্থান সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করবো।

২১. জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা:
আমরা একটি জলবায়ু-সহনশীল, দূষণমুক্ত ও পরিকল্পিত বাংলাদেশ গড়ব যেখানে নদী, বায়ু ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সবুজ-প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। 

২২. প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার:
আমরা মনে করি প্রবাসী বাংলাদেশিরা কেবল রেমিট্যান্সের উৎস নন, তারা রাষ্ট্রের সম্মান, সংগ্রাম ও পুনর্গঠনের অন্যতম অংশীদার এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূত। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে দেড় কোটির বেশি প্রবাসী অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন, আমরা সেই অবদানকে যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করবো। 

২৩. বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি: আমরা বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশের স্বার্থে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সবসময় দলীয় স্বার্থ ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থাকবে। এনসিপি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি রক্ষার প্রশ্নে আপসহীন থাকবে। আমরা পারস্পরিক সম্মান ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে বৈদেশিক সম্পর্ক গড়ে তুলবো এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেকোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করব। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ও আন্তর্জাতিক নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেতে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সর্বোচ্চ পর্যায়ে দৃঢ় ভূমিকা নেওয়া হবে। আমরা দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মানবিক সমাধান করব। আমরা মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রসমূহের সাথে সুদৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলবো। শান্তি, গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সার্ক, আসিয়ান, ওআইসি, ন্যাম, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সক্রিয় অংশীদারত্ব গড়ে তোলা হবে। শুধু  স্টেট এক্টর নয়, প্রতিটা দেশের আন্তঃযোগাযোগ ও তাদের ইনসাফ নিশ্চিতকরণে পাবলিক ডিপ্লোম্যাসিকে গুরুত্ব দিবো। দক্ষিণ এশিয়া, গ্লোবাল সাউথসহ বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের প্রতি বাংলাদেশের থাকবে অকুণ্ঠ সমর্থন, সহযোগিতা ও সংহতি।

২৪. জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল:
আমরা বিশ্বাস করি, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ছাড়া কার্যকর বৈদেশিক নীতি সম্ভব নয়। গণপ্রতিরক্ষা দর্শনের ভিত্তিতে আমরা তরুণ জনগোষ্ঠীকে একটি সংগঠিত সুশৃঙ্খল শক্তি হিসেবে দেশের সর্বাত্মক সেবায় উদ্বুদ্ধ করবো। আমরা অত্যাধুনিক সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেমের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলবো। পাশাপাশি, সর্বাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি অধিগ্রহণ, দেশীয় সামরিক গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে একটি টঅঠ (টহসধহহবফ অবৎরধষ ঠবযরপষব) ব্রিগেড গঠন করবো। একই সঙ্গে, আমরা আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সংহত করতে নন-নিউক্লিয়ার সেকেন্ড স্ট্রাইক সক্ষমতা অর্জন করবো এবং আমাদের নৌবাহিনীকে সাবমেরিনভিত্তিক একটি শক্তিশালী ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী হিসেবে গড়ে তুলবো। আমাদের প্রতিরক্ষা কৌশলের কেন্দ্রে থাকবে নিজস্ব ভূ-প্রাকৃতিক গঠন, যা নদী-বিধৌত অঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক নিরাপত্তা চাহিদা মাথায় রেখে সুসমন্বিতভাবে গড়ে তোলা হবে। রাষ্ট্রীয় সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে, আমরা একটি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করবো। আমাদের সমন্বিত প্রতিরক্ষা নীতির কেন্দ্রে থাকবে সংসদীয় নজরদারি, নাগরিক অধিকার রক্ষা, এবং আঞ্চলিক শান্তি ও কূটনৈতিক ভারসাম্যের প্রতি প্রতিশ্রুতি। 

ঘোষণা শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এই শহীদ মিনারেই আমরা শপথ নিয়েছিলাম এই দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করব। আপনারা সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় আমরা সবাই মিলে ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাজিত করেছি এবং দেশের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে নিয়েছি। আজ আবারো এই শহীদ মিনার থেকে আমরা আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি- আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনে এই ঐতিহাসিক ২৪ দফাকে বাস্তবে রূপান্তর করে সকল নাগরিকের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ি। সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারাও বক্তব্য রাখেন।

আজকালের খবর/ওআর








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
বাস-সিএজি মুখোমুখি সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত ৫
মোংলায় শিক্ষার আলো ছড়াতে কোস্ট গার্ডের শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ
তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ফের বন্যার শঙ্কা
৫ আগস্ট ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা
এলাকায় এলাকায় এনসিপির কর্মীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে: হাসনাত আব্দুল্লাহ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
৫ অথবা ৮ আগস্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা
ইবি শিক্ষার্থী সাজিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে: ফরেনসিক রিপোর্ট
পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচারের জন্ম হয়নি
গাজীপুর সিটির উন্নয়ন-পরিকল্পনা নিয়ে মতবিনিময় করছেন বিএনপি নেতা এলিস
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিএনজি-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ৪
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft