নতুন ভোটারদের কাছে ‘ধানের শীষের জন্য ভোট চাইতে’ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, এই সমাবেশে ছাত্রদলের নেতা-কর্মী এবং প্রিয় শিক্ষার্থী ভাই বোনের মাধ্যমে সারাদেশে সকল শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের কাছে আজ আমার একটি আহ্বান থাকবে, সামনে উপস্থিতি শিক্ষার্থী ভাই-বোনেরা মন দিয়ে শোনো কি আহ্বান আমি জানাতে চাই। তারপরে আমার এই আহ্বানের কথা ছড়িয়ে দাও সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সকল শিক্ষার্থী, আগামীর বাংলাদেশ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে, যারা নতুন ভোটার তাদের সকলের কাছে। পারবে ছড়িয়ে দিতে আমার আহ্বান?
এরপর তিনি বলেন, মন দিয়ে শোনো, প্রথমবার আমি তোমাদেরকে সেই আহ্বানের কথা বলবো, তারপরে তোমরাও বলবে। কি সেই আহ্বান? আহ্বানটি হলো-‘তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক।’
আজ রবিবার বিকালে শাহবাগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আয়োজনে বিশাল ছাত্র সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতা-কর্মীদের প্রতি এই নির্দেশনা দেন। শাহবাগ চত্বরে বিকালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই ছাত্র সমাবেশ হয়। বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে প্রথমে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের পরপরই জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে এই সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। শাহবাগ চত্বর এবং তার দুই পাশে সড়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সড়কে নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তারেক রহমান বলেন, আসো আমরা আজকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই. ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ, শহীদের কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ গড়ার জন্য যা যা প্রয়োজন, নিজেদেরকে যোগ্য করার জন্য যা যা প্রয়োজন তোমরা তা সকলে গ্রহণ করবে, এই হোক আজকের প্রতিজ্ঞা। আজকের প্রতিজ্ঞা হোক তারুণ্যের প্রথম ভোট, তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক।
তারেক রহমান বলেন, দেশের প্রায় ১৩ কোটি ভোটারের মধ্যে গত দেড় দশকে ভোটার তালিকায় এ পর্যন্ত প্রায় চার কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে। তোমরা ভোটার হলেও ফ্যাসিবাদ চক্র তোমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।
তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে এবং এই জাতীয় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তোমাদের হারানো ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিএনপির গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে গত দেড় দশকে ভোট প্রয়োগের অধিকার বঞ্চিত সাড়ে তিন কোটি ভোটারসহ আমি সবার সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই। শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, কর্মসংস্থান ভিত্তিক শিক্ষা, যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা, ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা, ই-কমার্স, আউটসোর্সিং, উচ্চ শিক্ষায় মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তোলা।
বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগসহ বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সারাদেশের শিক্ষার্থী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মী এবং তরুণ প্রজন্মের ভাই বোনেরা তোমাদের এই সমাবেশে এবং তোমাদের মাধ্যমে সারাদেশের শিক্ষার্থী এবং তরুণ প্রজন্মের সামনে বিএনপির গৃহীত কয়টি প্ল্যান প্রোগ্রাম তুলে ধরার অবশ্যই একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। কি সেই উদ্দেশ্য, কি সেই লক্ষ্য?
তিনি বলেন, সেটি হলো আমাদের প্রত্যেকেরই মা রয়েছে। একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন অর্থাৎ আগামী দিনে আমরা নবীন এবং প্রবীণ সবাই মিলে তেমন একটি বাংলাদেশ করতে চাই। একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ তেমন একটি বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই নবীন এবং প্রবীণ সকলের মিলে।
তারেক রহমান ছাত্র দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের সকল শিক্ষার্থী এবং তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আজকের এই তারুণ্য আজকের এই শিক্ষার্থীরা আগামীর বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে, ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ চরম পন্থার উৎখাত কিংবা পুনর্বাসন চরমপন্থার উৎখান কিংবা পুনর্বাসন ঠেকাতে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে, সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে যার আহ্বান আজকের এই সমাবেশের সভাপতি (ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব) সকলকে দিয়ে গিয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, এই যে গ্লোবালাইজেশনের এই সময় নারী পুরুষ সকলের সামনে কিন্তু সকল সম্ভাবনার দ্বার আজ উন্মুক্ত টেকনোলজিক্যাল কারণে আমাদের এই তারুণ্য আমাদের এই শিক্ষার্থীরা যাতে সকল সম্ভাবনাকে সাফল্য সাফল্যে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়, এইজন্য একটি বাস্তবধর্মী সুষ্ঠ নীতি পরিকল্পনা আমরা তৈরি করছি। এটি বিএনপি তরুণ প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করতে চাই, যাতে করে আগামী দিনে তোমাদের পথ চলা সহজ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে বিশ্ববাজারের সঙ্গে দক্ষতা এবং যোগ্যতার প্রতিযোগিতায় যদি টিকে থাকতে হয় তাহলে অবশ্যই তোমাদের সকলকে তথ্য প্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে জনগণের রায় বিএনপি আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে এইবার আমরা স্কুল পর্যায় থেকে কারিকুলামের ভেতরে আইসিটি এবং কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাটিকে আমরা প্রবর্তন করব।
তারেক রহমান বলেন, হাতের বাম পাশে অর্থাৎ মঞ্চে যারা বসে আছেন তাদের ডান পাশে মঞ্চের সামনে তোমার যারা যারা বসেছো খুব সম্ভব তোমাদের হাতের বাম পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে আছে, বাংলাদেশের গৌরবোজ্জল ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ, ফ্যাসিবাদ শাসন আমলের ভিন্ন দল ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের জন্য এই ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোকে সেই সময় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছিল। বর্তমানে যারা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের সামনে এই ক্যাম্পাসকে জ্ঞান চর্চা এবং গবেষণার একটি নিরাপদ ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে। প্রাচ্যে অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবজনক ইতিহাস আবারো ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, তোমাদের যারা উত্তরসূরি শিক্ষার্থী তাদের মনের ভেতরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মী এবং কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আমি সরাসরি কথা বলেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে আবাসিক হলগুলোতে বসবাস এবং খাবারের মান বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে হলগুলোতে বিদ্যমান সমস্যা এবং সমাধানের একটি লিখিত প্রস্তাবনা বিএনপির কাছে উপস্থাপনার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদেরকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একইভাবে দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সেইসব বিশ্ববিদ্যালয় সমস্যা এবং সম্ভাবনা নিয়ে সুপারিশসহ রিপোর্ট তৈরি করার জন্য ইতোমধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে ছাত্রদলের সংশ্লিষ্ট নেতৃত্বকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব্লু ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসার মো. ইয়াহিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম ও সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মধ্যে নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল ও রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজকালের খবর/ওআর