মীনা কুমারী: ঝলমলে পর্দার আড়ালে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার!
আনন্দমেলা ডেস্ক
প্রকাশ: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫, ৭:৪৫ পিএম
মীনা কুমারী, ১৯৭২ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মারা যান। তার বাবা তাকে পরিবারের অর্থ উপার্জনের একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন। মাত্র ৪ বছর বয়সে এই অভিনেত্রী প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান, সেটিও তার বাবার ইচ্ছায়। ১৯৩৩ সালে, আজকের এই দিনে (১ আগস্ট) জন্ম নিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।

মীনা কুমারীর বাবা আলী বক্স, তিনি ছিলেন একসময়ের সংগীতশিল্পী। মুম্বাইয়ের দাদারে একটি চাওল ঘরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার প্রথম স্ত্রী ও তিন সন্তানকে পাকিস্তানে রেখে ভারতে এসে বিয়ে করেন ইকবাল বেগমকে। তিনি আগে ছিলেন হিন্দু, নাম ছিল প্রভাবতী। জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের তার সম্পর্ক ছিল। এই দম্পতির তিন মেয়ে- খুরশীদ, মীনা ও মধু।

১৯৩৩ সালে মুম্বাইয়ে জন্ম নেওয়া মীনা কুমারীর নাম ছিল মাহজাবীন। মীনা যখন জন্মান, তখন তার বাবা এতটাই বিরক্ত ছিলেন যে, কথিত আছে, তিনি তাকে এতিমখানার সামনে ফেলে এসেছিলেন, যদিও সেটি সত্যি কিনা জানা যায়নি।

তার বড় বোন খুরশিদ ততদিনে শিশুশিল্পী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। এরপর আলী বক্স অন্য দুই মেয়েকেও জোর করে অভিনয়ে নামান। তার বাবা কাজের সন্ধানে তাদের এক স্টুডিও থেকে অন্য স্টুডিওতে জোর করে নিয়ে যেতেন।

মীনা যখন প্রথমবার ক্যামেরার মুখোমুখি হন, তিনি অভিনয়ের কিছুই জানতেন না। তিনি সেদিন বুঝতেই পারেননি, এমন একটি যাত্রা তিনি শুরু করবেন, যা কখনও থামবে না।

বিনোদ মেহতা রচিত ‘মীনা কুমারী- দ্য ক্লাসিক বায়োগ্রাফি’ বইটিতে মীনা কুমারীর একটি কথা উল্লেখ আছে। তিনি বলেন, ‘প্রথম যেদিন আমি কাজে বের হই, তখন আমার ধারণাই ছিল না যে আমি শৈশবের স্বাভাবিক আনন্দকে বিদায় জানাচ্ছি। আমি ভেবেছিলাম কয়েক দিনের জন্য স্টুডিওতে যাবো এবং তারপর স্কুলে যাবো। কিছু জিনিস শিখবো এবং অন্যান্য বাচ্চার মতো খেলাধুলা করবো, আনন্দ করবো। কিন্তু তা হয়নি।’

আলী কখনোই তার মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর পক্ষে ছিলেন না। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, এটি একটি অপ্রয়োজনীয় ব্যয়। তাই তিনি তার সব মেয়েকে ছোটবেলায় কাজে লাগিয়েছিলেন।

তারা কিছু বোঝার আগেই, পরিবারের ভরণপোষণকারী হয়ে ওঠে। আলী এ বিষয়ে অত্যন্ত  কঠোর ছিলেন। তিন মেয়ের কারোরই নিজের জন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি ছিল না।

পরিচালক বিজয় ভাটের ‘লেদার ফেস’র জন্য মীনাকে ২৫ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছিল। আলী জানতেন, মীনাই হবেন সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জনকারী। একবার এক আড্ডায় বিনোদ মেহতা বলেন, ‘মীনা খাবারের টিকিট হয়ে ওঠে। তার শৈশব স্বাভাবিক ছিল না। ৬-৭ বছর বয়স থেকে, শিশুশিল্পী হিসেবে তাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঘুরতে হতো এবং সে যে টাকা আয় করতো, তার ওপরই পরিবার টিকে ছিল।’
স্বমাী পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার কামাল আমরোহীর সঙ্গে মীনা কুমারী।

স্বমাী পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার কামাল আমরোহীর সঙ্গে মীনা কুমারী।

১৫ বছরের কম বয়সী তিন মেয়ে এত টাকা আয় করেছিল যে পরিবারটি একসময় বান্দ্রার চ্যাপেল রোডের একটি বাড়িতে উঠে যায়। আলী তাদের ক্যারিয়ার সামলাতে সম্পূর্ণরূপে নিমগ্ন ছিলেন। ইকবাল বেগম ফুসফুসের সংক্রমণের পর নাচ ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তার ক্যানসার হয়। অন্যদিকে আলীও তার গান ছেড়ে দেন।

আলী ও ইকবালের দাম্পত্যে ভালোবাসা থাকলেও দারিদ্র্যের কারণে তা বিষাদে রূপ নেয়। মেহতার বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল কাগজে-কলমে, বাস্তবে নয়। সব সময় মেয়েদের সামনে অর্থ নিয়ে ঝগড়া চলতো। শৈশবেই মীনা বুঝে গিয়েছিলেন, টাকা আয় করতে না পারলে তার কোনও অস্তিত্বই থাকবে না।

পড়াশোনা করতে চাইলেও সুযোগ পাননি মীনা। প্রাইভেট টিউটরের সাহায্যে পড়তে শেখেন। অবসর পেলেই বই নিয়ে এক কোণে বসে পড়তেন। তার কথায়, স্টুডিওর অন্য শিশুরা যখন বাইরে খেলতো, আমি তখন শিশুদের বইয়ের জগতে হারিয়ে যেতাম।’

মীনা পরবর্তীতে ‘এক হি ভুল’, ‘পূজা’সহ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবেও পরিচিতি পান। তিনি ১৯৪১ সালে ‘বেহান’ নামে একটি ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন।

তার বড় বোন বিয়ে করে অভিনয় করা ছেড়ে দেন। এই সময়ের মধ্যে মীনা একজন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠেন এবং সিনেমায় নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করতে শুরু করেন। তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেও কখনও নিজের জন্য স্বাধীনতার স্বাদ পাননি।
স্বরোচিত কণ্ঠে কবিতার রেকর্ডের কাভার-এ মীনা কুমারী। যা এখন প্রায় দুষ্প্রাপ্য।

স্বরোচিত কণ্ঠে কবিতার রেকর্ডের কাভার-এ মীনা কুমারী। যা এখন প্রায় দুষ্প্রাপ্য।

মীনা প্রথমবারের মতো বাঁচার সুযোগ পান যখন তিনি কামাল আমরোহিকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানতেন, আলী তার বিয়েতে কখনও রাজি হবেন না। গোপনে বিয়ে করেন তারা। আলীকে রাজি করাতে দুই লাখ রুপি দেন। এরপরও আলী রাজি হননি। তিনি তাদের আলাদা হওয়ার জন্য জোর করেন। তবে মীনা আলাদা হননি।

অভিনেত্রী আরও এক বছর তার বাবার বাড়িতেই ছিলেন। তার বাবা তাকে স্বামীর সঙ্গে থাকার কথা বলেননি কখনও। কারণ তিনি জানতেন, পরিবারের খরচ জোগাড় করার জন্য টাকা উপার্জন করেন একমাত্র মীনাই। তবে যখন মীনা কামাল আমরোহির সাথে একটি ছবিতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন, একই সাথে তার বাবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন, সেদিনই এই অভিনেত্রীর নিজের টাকায় কেনা বাড়ি থেকে বাবা তাকে বের করে দেন। আলী বাড়ির দরজা তার মুখের ওপর বন্ধ করে দেন এবং তাকে আর ফিরে আসতে নিষেধ করেন।

মেহতার মতে, মীনা তার বাবাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন, যাতে লেখা ছিল- ‘বাবুজি, যাই হোন, আমি চলে এসেছি। দয়া করে আদালতে যাওয়ার কথা বলবেন না। এটা শিশুসুলভ হবে। আমি আপনার বাড়ি থেকে আমার পোশাক এবং বই ছাড়া আর কিছুই চাই না। আমার কাছে এখন যে গাড়ি আছে তা আমি আগামীকাল পাঠাবো। তুমি যখন সুবিধাজনক মনে করবে, তখন আমার পোশাক পাঠাতে পারো।’

আলী বক্স তাকে এমন এক জগতে ঠেলে দিয়েছিলেন, যা সেই নিষ্পাপ, ভালো মেয়েটিকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করেছিল।

আজকালের খবর/আতে








http://ajkalerkhobor.net/ad/1751440178.gif
সর্বশেষ সংবাদ
৫ অথবা ৮ আগস্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা
অনলাইনে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করলো সরকার
ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য চলছে, সরাসরি সম্প্রচার
শহীদদের স্মরণে ছাত্রদলের সমাবেশে বক্তব্য দেবেন তারেক রহমান
ঢাকার বাতাস আজ সহনীয়
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
গাজীপুরের রাজনীতিতে নতুন ভোরের প্রত্যাশা: মেয়র পদে এলিস কি হয়ে উঠবেন তৃণমূলের প্রকৃত প্রতিনিধি?
শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু রবিবার
রামুতে ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজির চার যাত্রী নিহত
ইউএনও’র স্বাক্ষর জাল করে শিক্ষক নিয়োগ: জামায়াত আমীরকে অব্যাহতি
‘রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে সুবিধাবাদীদের বিজয়োৎসব’- তানিকে উদ্দেশ্য করে আবীর চৌধুরী
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft