
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত বিআইডিসি রোডের বটতলা থেকে সালনা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়ক বর্তমানে বেহাল অবস্থার চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে গর্তে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে চলাচলের চরম দুর্ভোগ।
আজ রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য।
স্থানীয়রা জানায়, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তার গর্তগুলো পানি জমে অদৃশ্য হয়ে যায়, ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। যানবাহন গর্তে আটকে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। অটোরিকশা উল্টে যাওয়া, পথচারীর পা হড়কে পড়া কিংবা কাদা-পানিতে নোংরা হওয়া এখন নিয়মিত ঘটনা।
এলাকার এক শিক্ষার্থী জানায়, প্রতিদিন স্কুলে যাই এই রাস্তায় ঝাঁকি খেয়ে। কখনো রিকশা উল্টে যায়, কখনো জামাকাপড় ভিজে যায়। খুব কষ্ট হয়।
রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন, জরুরি অবস্থায় রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ঝাঁকুনিতে রোগীদের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে। রোগীর আত্মীয়রা আরো বলেন, অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়ার সময় রাস্তার এই ঝাঁকুনিতে রোগীর শরীর আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বারবার গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তাদের মতে, সড়কের পাশে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশিত না হয়ে রাস্তার ওপর জমে থাকে, যার ফলে সড়ক ভেঙে যাচ্ছে।
এক বাসিন্দা বলেন, ড্রেন নেই, পানি জমে থাকে। এই পানির জন্যই রাস্তা ধসে গেছে। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া রাস্তা বানালে এমনই হয়।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুর রহমান আজকালের খবরকে বলেন, বটতলা থেকে সালনা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য টেন্ডারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফাইলটি বর্তমানে ডিপিপিতে রয়েছে। প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুত সংস্কারকাজ শুরু করা হবে। তবে কবে নাগাদ এই কাজ শুরু হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা জানাননি তিনি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দেখা গেছে, এই সড়ককের পাশে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বহু কলকারখানা। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ, পণ্যবাহী যানবাহন এবং রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স। ফলে দ্রুত সংস্কার না হলে জনভোগান্তি আরও বাড়বে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তীব্রতর হবে।
স্থানীয়দের দাবি, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে দ্রুত সড়ক সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ শুরু করতে হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করেন, গাজীপুরের মতো দ্রুত উন্নয়নশীল একটি শহরে পরিকল্পনাহীন অবকাঠামোগত উন্নয়ন নাগরিক দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো সংস্কার না হলে এই সড়কের বেহাল দশা শুধু দুর্ঘটনাই নয়, শহরের উৎপাদন ও অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে।
আজকালের খবর/ওআর