
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি), বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ এবং সাবেক সিনিয়র সচিব এ জেড এম শামসুল আলম ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মরহুমের জানাজা আজ (শনিবার) বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
এ জেড এম শামসুল আলম ছিলেন একজন সাবেক সিএসপি কর্মকর্তা। তিনি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সিনিয়র সচিব, পিএটিসির রেক্টর এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের দায়িত্ব। তিনি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ কো–অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে ইসলামের আলোকে তিনি একশ’র বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। আধুনিক প্রেক্ষাপটে ইসলামি চিন্তা ও নীতিমালা নিয়ে গবেষণামূলক কাজের জন্য তিনি সমাদৃত ছিলেন।
তিনি ১৯৩৭ সালে কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানাধীন আদ্রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল গফুর চৌধুরি। শামসুল আলম ১৯৫২ সালে পূর্ববাংলা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বিভাগে পাস করেন। অতঃপর ১৯৫৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও ১৯৫৮ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও দারুল এহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মেম্বার, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পূর্বে ১৯৬৩ সালে তিনি যথাক্রমে ঢাকা কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ছিলেন।
১৯৬৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তার চাকরি জীবনে তিনি বাংলাদেশ সরকারের এসডিও, এডিসি, উপসচিব, যুগ্মসচিব ও সচিব পর্যায়ে ৩০টি পদে চাকরি করেন। এছাড়া বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনসমূহে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
ইসলামি শিক্ষা, ইসলামি অর্থনীতি, ইসলামি ইন্স্যুরেন্স প্রভৃতি বিষয় সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের বিভিন্ন সেমিনারে তিনি অংশগ্রহণ করেন । তিনি শিক্ষা, গবেষণা, সেমিনার-সম্মেলন প্রভৃতি উদ্দেশ্যে বিশ্বের প্রায় ৪২টি দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি ছিলেন ইসলামি একাডেমি পূর্ববঙ্গ, বাংলা একাডেমি, নজরুল একাডেমি, আবুজর গিফারী (রা) সোসাইটি, এশিয়াটিক সোসাইটি, ইসলামিক লাইব্রেরি এসোসিয়েশন ও মসজিদ সোসাইটি বাংলাদেশের আজীবন সদস্য। তিনি বাংলাদেশের বহু ইসলামি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং উপদেষ্টা ছিলেন ।
শামসুল আলম ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে গৃহীত প্রকাশনা প্রকল্প, বিশ্বকোষ প্রকল্প, ইমাম প্রশিক্ষণ প্রকল্প, ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রকল্প ও মসজিদ পাঠাগার প্রকল্প ইত্যাদি ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তার প্রচেষ্টা আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামি কমার্শিয়াল ইনস্যুরেন্সসহ বহু সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
আজকালের খবর/বিএস