জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী কী ক্ষতি হচ্ছে বা ভবিষ্যতে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে গবেষক, বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণা, অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছেন। এ নিয়ে গবেষকদের গবেষণায়, অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে ভয়াবহ রীতিমতো দু:সংবাদের তথ্য। বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞ গবেষকদের দেয়া তথ্য উপাত্ত কিংবা সম্ভাব্য এ ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণে প্রদত্ত পরামর্শ আমলে নিচ্ছে না বিশ্বের দেশ, রাষ্ট্র, সরকার কিংবা বিশ্ব নেতৃবৃন্দ। এমনি এক ভয়াবহ অথচ সম্ভাব্য বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণের পারিবর্তে প্রতি পদে পদে পায়ে পায়ে জলবায়ু পরিবর্তনজণিত বিপর্যয় পৃথীবি নামক এই গ্রহকে এই গ্রহে বসবাসকারি মানবজাতিসহ ১৮ হাজার প্রজাতির মাখলুুকাতকে অনিশ্চিত অন্ধকার এবং চরম বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরির্বতনের আগ্রাসী এই থাবায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে ভয়ংকর রূপে এর ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যা, তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে ইউরোপ। ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, তুরস্কসহ অন্তত ১৫টি দেশে জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ মাত্রার তাপ সতর্কতা। ফ্রান্সের ১৬টি অঞ্চলে ইতোমধ্যেই ‘রেড অ্যালার্ট’ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই তাপপ্রবাহ আরও তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাজধানী প্যারিসসহ ১৬টি অঞ্চলে কার্যকর হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতা ‘রেড অ্যালার্ট’। ৬৮টি অঞ্চলে রয়েছে কম ঝুঁকির ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’। দেশটির জলবায়ু মন্ত্রণালয় একে ‘নজিরবিহীন’ আবহাওয়া পরিস্থিতি হিসেবে অভিহিত করেছে।
এদিকে দক্ষিণ কর্বিয়েরেস পর্বতমালায় দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একটি মোটরওয়ে। রস্কের ইজমিরে দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। ঘণ্টায় ১২০ কিমি বেগে বাতাসের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ২০টি ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে। ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্রোয়েশিয়া, মন্টিনেগ্রো, গ্রিস এবং সার্বিয়ার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এথেন্সের আশেপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়দের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
এদিকে জার্মান আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এর ফলে রাইন নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে কমে গেছে, পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে, পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এড্রিয়াটিক সাগরে দেখা যাচ্ছে বিষাক্ত ‘লায়নফিশ’,। হিমবাহ দ্রুত গলতে শুরু করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক বলেন, ‘তাপপ্রবাহ আমাদের জীবনের অধিকার, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত অধিকার হুমকির মুখে ফেলছে। এখনই জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো ছাড়া বিকল্প নেই।’ একই ভাবে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘গ্রিনহাউজ গ্যাস বৃদ্ধির ফলে পৃথিবী অতিরিক্ত তাপ ধারন করায় তাপপ্রবাহে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দেবে।
অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থলবেষ্টিত হ্রদ কাস্পিয়ান সাগর দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। কাজাখস্তানের শহর আকটাটের বাসিন্দারা বলছেন, সাগরের পানি প্রায় ১০০ মিটার সরে গেছে। এটি এখন দেখলেই বোঝা যায়। পরিবেশবিদ ও গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই হার অব্যাহত থাকলে চলতি শতকের শেষ নাগাদ সাগরের পানি ১৮ মিটার পর্যন্ত কমে যেতে পারে। একইসঙ্গে এটি তার প্রায় ৩৪ শতাংশ পৃষ্ঠভাগ হারাতে পারে। গবেষকদের দাবি, জলশূন্য হওয়ার দিকে এগোচ্ছে পৃথিবী। হাতে আর এক দশকও সময় নেই। বরং ২০২৩ সালের মধ্যেই পৃথিবীর একটি দেশ সম্পূর্ণ ভাবে জলশূন্য হয়ে যাবে। ভারতের প্রতিবেশী দেশ, ৬০ লক্ষ মানুষের বাসস্থান, আফগানিস্তানের কাবুল ২০৩০ সালের মধ্যে জলশূন্য হয়ে যাবে বলে দাবি গবেষকদের। কাবুলকে পৃথিবীর প্রথম জলশূন্য আধুনিক শহর হওয়ার পথে বলে জানান তারা।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার তথা পরিবেশ সংস্থা মার্সি ক্রপস নিজেদের রিপোর্ট সামনে এনেছে। জানিয়েছে, কাবুলের ভূগর্ভস্থ জল প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। বেপরোয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ভূগর্ভস্থ জল তোলার ফলেই এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। গবেষকরা জানান, গত এক দশকে কাবুল শহরের নীচে মজুত ভূগর্ভস্থ জল ৮২ থেকে ৯৮ ফুট নীচে নেমে গিয়েছে (২৫ থেকে ৩০ মিটার নীচে নেমে গিয়েছে)। প্রাকৃতিক ভাবে জলের জোগান যত, তার চেয়ে উত্তোলন বেড়ে গিয়েছে, বিস্ময়কর ভাবে বছরে ৪.৪ কোটি কিউবিক মিটার। এভাবে চললে ২০৩০ সালের মধ্যেই পৃথিবীর প্রথম জলশূন্য আধুনিক শহরে পরিণত হবে কাবুল। ফলে কাবুল ছেড়ে চলে যেতে হবে লক্ষ লক্ষ মানুষকে।
বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে একটি নতুন মহাসাগরের জন্ম দিতে পারে। ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধীরগতির বিচ্যুতিই একসময় আফ্রিকা মহাদেশকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলবে। এই পরিবর্তনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্লেট টেকটনিক মুভমেন্ট’, যা পৃথিবীর ভূপ্রকৃতির মূল চালিকাশক্তি। ২০০৫ সালে ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলে ৫৬ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বৃহৎ ভূ-ফাটল দেখা দেয়। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, এটি সোমালি ও নুবিয়ান প্লেটের বিচ্ছিন্নতার প্রাথমিক চিহ্ন। ভবিষ্যতে এই ফাটলের মধ্যে দিয়ে পানি ঢুকে সেখানে ধীরে ধীরে সৃষ্টি হতে পারে একটি সম্পূর্ণ নতুন মহাসাগর অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্রোত ব্যবস্থার পতন হলে, গ্রিনহাউস গ্যাসে উষ্ণ হয়ে ওঠা পৃথিবীর মধ্যেও উত্তর ইউরোপের শীতকালে তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে এমনটাই জানাচ্ছে নতুন জলবায়ু মডেলভিত্তিক গবেষণায়। ড. রেনে ফান ভেস্টেনের নেতৃত্বে ও উত্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত গবেষণাটি সম্প্রতি জিয়োগ্রাফিকেল রিসার্স লেটার জার্নালে প্রকাশিত হয়। এতে ভবিষ্যতে যদি আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন-এএমওসি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে জলবায়ুর উপর তার সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এএমওসি হচ্ছে একটি বৃহৎ মহাসাগরীয় স্রোত ব্যবস্থার অংশ, যা গরম পানি উপরের দিকে ট্রপিক্স থেকে উত্তর দিকে নিয়ে যায় এবং ঠান্ডা ঘন পানি সমুদ্রের নিচে দক্ষিণ দিকে ফেরত পাঠায়। এই প্রক্রিয়া ইউরোপসহ অনেক অঞ্চলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে, বিশেষত গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলতে থাকায় উত্তর অ্যাটলান্টিকে বিপুল পরিমাণে মিঠা পানি যুক্ত হচ্ছে, যা সমুদ্রপানির লবণাক্ততা ও ঘনত্ব হ্রাস কওে এএমওসি চালিত ডুবে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। গবেষণার লক্ষ্য ছিল, এএমওসি পুরোপুরি বন্ধ হলে দীর্ঘমেয়াদে কী ঘটে তা নিরূপন করা, বরং এটি আদৌ ঘটবে কি না সে প্রশ্নের চেয়ে। গবেষকরা ‘সিইএসএম’ বা কমিউনিটি আর্থ সিস্টেম মডেল ব্যবহার করে উত্তর অ্যাটলান্টিকে প্রচণ্ড পরিমাণ মিঠা পানি যোগ করে একটি চরম পরিস্থিতি মডেল তৈরী করেন। এটি বাস্তবতার তুলনায় বেশি স্থিতিশীল এএমওসি-প্রকল্পের একাধিক মডেলের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করে। এই মডেল অনুযায়ী শত শত বছর পর যখন জলবায়ু একটি নতুন ভারসাম্যে পৌঁছায়, তখন ইউরোপে গুরুতর ঠান্ডার লক্ষণ উঠে আসে।
একটি মধ্যম নির্গমন পরিস্থিতিতে, যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা শিল্পপূর্ব স্তরের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হয়, সেখানে এএমওসি-এর পতনে ইউরোপের অনেক জায়গায় চরম শীত দেখা দেয়। লন্ডনে গড় শীতকালীন তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ১.৯ সেন্ট্রিগ্রেট যেখানে এক দশকে একবার-১৯.৩ সেন্ট্রিগ্রেট এর মতো তীব্র ঠান্ডা দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরায় বিগত এক-দশকের ঠান্ডা নেমে আসে-২৯.৭ পর্যন্ত। অসলোতে গড় শীতকালীন তাপমাত্রা দাঁড়ায় -১৬.৫, আর চরম নিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছায় -৪৮ সেন্ট্রিগ্রেট পর্যন্ত। এই চিত্রে দেখা যায়, শীতকালে সমুদ্র বরফ গ্রেট ব্রিটেন ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উপকূল পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যা অঞ্চলিক ঠান্ডাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও তা শিল্পপূর্ব যুগের চেয়ে অনেক বেশি রয়ে যায়, ফলে মৌসুমি তাপমাত্রায় চরম বৈপরিত্য দেখা দেয়। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিদ টিম লেনটন বলেন, এই ধরনের শীত হবে বরফযুগের মতো, আর গ্রীষ্ম হবে যেন হিমঘর থেকে বেরিয়ে গরম ভাজার মধ্যে পড়া।
যদি নির্গমন উচ্চ হয় এবং ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ৪ক্কঈ ছাড়িয়ে যায়, তবে এএমওসি ধসের প্রভাব আর বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিহত করতে পারবে না। ইউরোপ তখনো উষ্ণ হবে, তবে ধীরগতিতে এবং তেমন কোনো বরফ বৃদ্ধি হবে না। ড. ফান ভেস্টেন বলেন, এই গবেষণার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো: ইউরোপ এমন এক বিশ্বে ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে, যা পুরোপুরি গরম হয়ে উঠছে। নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্যের কিছু অংশে তাপমাত্রা -২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা তারও নিচে নেমে যেতে পারে। আমাদের সমাজ ও অবকাঠামো এই ধরনের ঠান্ডার জন্য প্রস্তুত নয়।
এই গবেষণা শুধু ইউরোপেই নয়, বরং বৈশ্বিক পরিণতি দেখিয়েছে। এর ফলে ভারত, পশ্চিম আফ্রিকা ও অ্যামাজনে মৌসুমি বৃষ্টিপাত দুর্বল হয়ে পড়বে এবং গ্রীষ্মম-লীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ধরন বদলে যেতে পারে। এই গবেষণা মনে করিয়ে দেয়, বৈশ্বিকভাবে গরম হতে থাকা পৃথিবীতে ইউরোপের শীতকাল হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী বরফাচ্ছন্ন ও অতিরিক্ত ঠান্ডাময়। এমনি অবস্থায় জীবাষ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ঋণ প্রদানের জন্য সরকারি অর্থ ব্যবহার করে উদ্ভাবনী পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে উন্নয়নশীল বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা। এটি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তমধ্যে ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা অবিনাশ পারসাউদ মনে করেন, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দরিদ্র দেশগুলোর নবজাগরণশীল সবুজ অর্থনীতিতে কয়েক দশক বিলিয়ন ডলারের নতুন বিনিয়োগ আনা সম্ভব এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বার্ষিক ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়নের বড় অংশই সংগ্রহ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এটি সবুজ প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিনে পরিণত হতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় ট্রিলিয়ন ডলারের জলবায়ু অর্থায়নের পথ খুলে দিতে পারে।
জার্মানিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের এক বৈঠকে তার এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়, যা নভেম্বরে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিতব্য কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনের প্রস্তুতির সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অন্যদিকে, ‘অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি প্রচার সংগঠনের এক গবেষণা ‘দ্য গার্ডিয়ান’ প্রকাাশত তথ্য, বহু উন্নত দেশ এখনও নতুন করে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে যদিও তারা ২০২৩ সালের কপ২৮ সম্মেলনে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নরওয়ে ও অস্ট্রেলিয়া ২০২৫-৩৫ সময়কালের প্রস্তাবিত নতুন তেল ও গ্যাস প্রকল্পের ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী।
অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক নীতি প্রধান রোমাঁ ইওয়ালালেন বলেন, এটি লজ্জাজনক যে, যারা জলবায়ু সংকটের জন্য বেশি দায়ী, সেই ধনী দেশগুলো এখনো ব্যাপকভাবে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে এতে অসংখ্য প্রাণ ও জীবিকার ঝুঁকি উপেক্ষিত হচ্ছে।
জার্মানির বন শহরে ২৬ জুন পর্যন্ত চলা দুই সপ্তাহব্যাপী বৈঠকে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থায়নের বিষয়টি আলোচনায় সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। কারণ উন্নত দেশসমূহের গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় অর্থায়ন জরুরি। বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিদ্যমান ‘সবুজ ঋণ’গুলো কিনে নেওয়া হোক সরকারি অর্থায়িত উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এতে এই খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে এবং বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নে বড়সড় সঞ্চার ঘটবে। এমনি অবস্থায় জলবায়ু পরির্বতন জনিত সম্ভাব্য বিপর্যয় ঠেকাতে প্রয়োজন দ্রুত বৈশ্বিক উদ্যোগ।
মোতাহার হোসেন: সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক-বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম।
আজকালের খবর/আরইউ