ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ’র রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত, বিচারের দাবি ও প্রশাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্র সংগঠনওলো। দুর্ঘটনা না-কি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড—সেই বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস। প্রশাসন ভবন ও প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবস্থান করছেন তারা।
শনিবার (১৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‘ভূয়া ভূয়া’ স্লোগান দেয় তারা। শিক্ষার্থীরা মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং মৃত্যুকে ‘রহস্যজনক’ আখ্যা দিয়ে এর পিছনে প্রশাসনের দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ‘ইবি প্রশাসন! ইন্না-লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন’; পুকুরে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে; বাজেট বাজেট বাজেট নাই, বাজেট কি তোর বাপে খায়; লাশ নিয়ে রাজনীতি করতে দেয়া হবে না; ভয়ভীতি আর অন্ধকার চাই না; গাফিলতি মানি না, জবাব ছাড়া ছাড়ি না!; প্রশাসনের তালবাহানা, মানি না মানব না; Justice Justice, we want justice; আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দিব না; শিক্ষার্থীরা মর্গে, প্রশাসন ঘুমায় সর্গে; তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ; সুষ্ঠু তদন্ত না হলে, ঝুলবে তালা হলে হলে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, লাশ দেখে যখন প্রশাসনকে জানানো হয়, প্রায় পৌঁনে এক ঘণ্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। পাশে ইবি থানা থাকার পরেও পুলিশ আসতে এতো সময় লাগলো কেন? তাও আবার লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘণ্টা হলেও সেখানে কোনো ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। পরে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা কি প্রহসন নয়?
প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলানো
তারা আরও অভিযোগ করেন, মরদেহ শনাক্তের দুই ঘণ্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি। এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে কোনো সিসি ক্যামেরা সচল নেই। প্রশাসনকে বার বার বলার পরেও তারা বাজেট ঘাটতির কথা বলে সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছে না। তাদের যদি এতই ঘাটতি থাকে তাহলে আমাদের বলুক আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে সিসি ক্যামেরা লাগাবো।
এর আগে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। এদিকে মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটন না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি- ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা (আজকের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রকাশ করা), পুরো ক্যাম্পাস সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আনা, পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, পূর্ণাঙ্গ বাউন্ডারি দেওয়া, পুরো ক্যাম্পাসে লাইটিং ব্যবস্থা করা, হল প্রভোস্ট/টিউটর আবাসিক হলে সার্বক্ষণিক অবস্থান করা, হলে ডিজিটাল কার্ড দেয়া, গেইটে আনসার বাহিনী বৃদ্ধি করে বহিরাগত মুক্ত করে নিরাপত্তা জোরদার করা, গঠিত তদন্ত কমিটি থেকে ড. আব্দুল বারীর পরিবর্তনে ফার্মেসি বিভাগের লেকচারার রসুল করিম কমলকে দেয়া, তদন্ত কমিটিতে ২ জন শিক্ষার্থীকে রাখা, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে। সকল দাবি পূরণে প্রশাসন লিখিত প্যাডে প্রচার না করা পর্যন্ত অবস্থান করবে বলে জানান তারা।
ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছাত্র উপদেষ্টা হিসেবে ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি এবং শিক্ষার্থীদের সকল দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (ভিসির দায়িত্বে) আন্দোলনে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে শোকাহত। মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কাজ শুরু হয়ে গেছে। ১০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করছি এবং প্রশাসনকে কাজ করতে দাও।