
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ‘শুনই’। নিস্তরঙ্গ গ্রামজীবনের বুক চিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছে এক জীবন্ত ইতিহাস—চারশ বছর পুরোনো একটি সালিশখানা। একসময় যা ছিল সামাজিক ন্যায়বিচারের কেন্দ্র, আজ তা মাটিতে মিশে যেতে বসেছে।
স্থানীয়রা বলেন, মুঘল সেনাপতি ঈসা খাঁর বংশধর আছালত খাঁ ছিলেন এই সালিশখানার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি সিংহের বাংলা এলাকা থেকে এসে শুনই গ্রামে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেন। তখন থানার কোনো অস্তিত্ব ছিল না, বিচারব্যবস্থা পরিচালিত হতো জমিদারি সালিশের মাধ্যমে। এই প্রয়োজনে আছালত খাঁ নির্মাণ করেন তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি দালান, যা সালিশখানা নামে পরিচিতি পায়।
প্রত্যেক সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে এই স্থাপনাতেই বসত বিচারসভা। দূর-দূরান্তের মানুষ আসত সালিশে অংশ নিতে। এখানে শুধু বিচার নয়, দণ্ড কার্যকর করার ব্যবস্থাও ছিল।
বর্তমানে এই সালিশখানাটি জরাজীর্ণ অবস্থা। চারপাশে ভাঙাচোরা ইট, দেয়ালে ধরা শ্যাওলা আর জং ধরা কাঠামো ইতিহাসের নীরব সাক্ষ্য দিচ্ছে। অথচ, এটি এক সময় ছিল স্থানীয় শাসনব্যবস্থার মেরুদণ্ড।
শুনই গ্রামে এখনও আছালত খাঁর অষ্টম ও নবম বংশধরেরা বসবাস করছেন। তাদের অনেকেই মনে করেন, ইতিহাস সংরক্ষণ না করা শুধু অবহেলা নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে অন্যায়ও বটে।
আছালত খাঁর নবম বংশধর ও বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই এই সালিশখানার সঙ্গে এক ধরনের আবেগে জড়িত। প্রতিদিন একবার গিয়ে দেখতাম। মনে মনে স্বপ্ন ছিল, একদিন সুযোগ পেলে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেব।
তিনি আরও বলেন, সরকার যেন এই স্থাপনাটিকে একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণ করে, পর্যটন ও গবেষণার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলে—এটাই আমাদের কামনা।
এলাকাবাসীর দাবি, সালিশখানাটি শুধু একটি পুরোনো দালান নয়, এটি তাদের শেকড়, ঐতিহ্য এবং ন্যায়বিচারের গৌরবময় ইতিহাস। তারা চান, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে এবং যথাযথভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
নেত্রকোনার ইতিহাসে এই সালিশখানার মতো নিদর্শনগুলো শুধু অতীত স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্যও বার্তা—ন্যায়বিচার, সামাজিক শৃঙ্খলা ও ঐতিহ্যকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনজীবনের প্রতিচ্ছবি। এখন প্রয়োজন শুধু সংরক্ষণের সদিচ্ছা।
বর্তমানে আছালত খাঁর অষ্টম বংশধরেরা বসবাস করছেন এই গ্রামেই। তারাই ইতিহাসের শেষ উত্তরাধিকার। তারা চান এই স্থাপনাটি শুধু টিকে থাকুক না, বরং সংরক্ষিত হোক, পুনর্গঠিত হোক গবেষণা ও পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে।
আছালত খাঁর নবম বংশধর বিএনপির চেয়ারপার্সন প্রেস উইং ও মিডিয়া সেল সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই এই সালিশখানার সঙ্গে এক ধরনের আবেগ জড়িত। প্রতিদিন একবার হলেও গিয়ে দেখতাম। মনে মনে স্বপ্ন ছিল, একদিন সুযোগ পেলে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেব। আমি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন জানাতে চাই, সরকার যেন সালিশখানাকে একটি ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
স্থানীয় তরুণ আল আকরাম মুন্না বলেন, আমরা চাই সরকার এটা সংরক্ষণ করুক। এটাকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠতে পারে। বাইরে থেকে মানুষ এলে আমাদের ইতিহাস জানবে, আমরা গর্ব করতে পারব।
এ ব্যাপারে আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমা বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে স্থাপনার তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে এর ঐতিহাসিক মূল্য যাচাই করব এবং পরবর্তী সময়ে তা প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে প্রেরণ করা হবে।
আজকালের খবর/বিএস